You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ১৪ই জুন, বুধবার, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮০

রেলওয়ে বাজেট

যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মনসুর আলী গত সোমবার জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ থেকে ৭৪ সালে রেলওয়ে বাজেট পেশ করেছেন। বাজেটে ৩৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা আয় ও ৩৩ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। তবে যাত্রীভাড়া শতকরা ১০ ভাগ বৃদ্ধি করে এই বাজেটকে সুষম করা হয়েছে। শতকরা ১০ ভাগ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির ফলে মোট ১ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয়ের হবে।
জাতীয় সংসদে রেল বাজেট পেশ করতে গিয়ে যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব মনসুর আলী বলেছেন এবছরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল আমাদের নতুন সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয়-ব্যয় গুলিকে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।
যোগাযোগমন্ত্রীর দেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও পুনঃনির্মাণের প্রচেষ্টায় যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তাকে আশাব্যঞ্জক বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এবারকার রেল বাজেটের বৈশিষ্ট্য হলো এতে উন্নয়ন ও পুনর্বাসন এর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালের জন্য উন্নয়ন খাতে মোট ১৭কোটি ৬০ লক্ষ-টাকা পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন করেছেন। আগামী অর্থবছরে ৫০০টি ব্রডগেজ মালবাহী গাড়ি ও ২১ টি সংযুক্ত জাতীয় মালবাহী গাড়ি (টি,এল,আর) আমদানি করা থেকে আরম্ভ করে ব্রডগেজ মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, নাঙ্গলকোট থেকে লাকসাম পর্যন্ত রেললাইন বসানো, যাত্রীদের আরাম-আয়েশের জন্য বিশ্রামাগার, প্লাটফর্ম স্থাপন ও স্টেশন বৈদ্যুতিকরণ প্রভৃতি কার্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পোড়ামাটি নীতি অনুসরণের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এক হয় ক্ষতির মধ্যে ছিল ৩শ বিধ্বস্ত সেতু, ৭১ মাইল অপসারিত বা বিধ্বস্ত রেলপথ, ৪৫টি ডিজেল ইঞ্জিন, ৯৫টি বাষ্পীয় ইঞ্জিন এবং বহু সংখ্যক যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি সামগ্রিক বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি রাতারাতি সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন করা। অর্থ, দক্ষ কারিগর এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ভাবি তার কারণ। তবু সরকার ধাপে ধাপে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন ও পুনর্বিন্যাস করতে সক্ষম হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছার অভাব আগেও ছিল না এখনও নেই। কিন্তু এতদ্বসত্ত্বেও রেল বিভাগের প্রতি যাত্রীসাধারণের অভাব-অভিযোগের অন্ত নেই। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে যাত্রীদের আরাম-আয়েশ ও সময়ানুবর্তিতার অভাবী প্রধান। ন,টার গাড়ি যে কটায় আসবে তা কেউ বলতে পারে না। ট্রেনে বাতি নেই, পাখা নেই, পানি নেই, বসার সিট গুলো নড়বড়ে ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া গোদের উপর বিষফোড়ার মত রয়েছে বিনা টিকেটের যাত্রীদের উৎপাত বিভিন্ন লাইনে বিনা টিকেটের যাত্রীদের চেইন টেনে যথেচ্ছা গাড়ি থামানো ইত্যাকার অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমান রেল বাজেটে শতকরা ১০ ভাগ যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ভাড়া বৃদ্ধিতে যাত্রীদের উপর আর্থিক চাপ পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবু রেল যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়তো আপত্তি করবেন না যদি দেখেন যে, আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে, মানবতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। আমরা আশা করব রেলমন্ত্রনালয় এদিকে দৃষ্টি দিবেন। পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন এর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের আরাম-আয়েশের দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

অটো রিক্সা ভাড়ার তালিকা

ঢাকা জেলা অটোরিকশাচালক কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির সভাপতি গত রোববার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঢাকা শহরের যাত্রী ও অটোরিকশা চালকদের সুবিধার্থে একটি লিখিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন যে টিসিবিকে বারবার লিখিতভাবে মিটার আমদানির অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়াও টিসিবিকে সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে ১০৮৯টি অটোরিকশা চেসিস এর জন্য মোট ৫২ লক্ষ্য ৪হাজার টাকা জমা দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত তারা ৫৫০টি চেসিস পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩৪৬টি অটোরিকশা বর্তমানে রাস্তায় চলাচল করছে। অথচ বর্তমান জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তুলনায় অটোরিক্সার এই সংখ্যা খুবই কম। এক্ষেত্রে স্বভাবতই অটোরিকশার চাহিদা বেশি থাকে। আর চাহিদা বেশি থাকায় অটোরিকশাচালকগণ খেয়াল খুশি মতো ভাড়া আদায় করার চেষ্টা করে। ফলে অটোরিকশা চালক ও যাত্রীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি অনেক ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে অটোরিকশা গুলিতে যদি মিটার লাগানো হতো তাহলে গোলমালের সম্ভাবনা অনেকখানি কম থাকতো। প্রথমত অটোরিকশাচালক গান খেয়ালখুশিমতো ভাড়া চাইতে পারত না। দ্বিতীয়তঃ যাত্রী সাধারণকে ভাড়া নিয়ে অযথা হাঙ্গামায় পড়তে হতো না। অটো সমবায় সমিতির রিক্সা গুলোতে মিটার না থাকার জন্য পুরোপুরিভাবে টিসিবিকে দায়ী করেছেন। তবে একথা ঠিক যে মিটার থাকার সত্বেও অটো রিকশা চালকরা নির্দিষ্ট ভাড়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন না। সমবায় সমিতি থেকে যে ভাড়ার হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা মোটামুটি সহনীয়।
সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভাড়ার বিস্তারিত তালিকা সমবায় প্রত্যেকটি অটোরিকশাচালকের কাছে থাকবে এবং যাত্রীদের চাওয়া মাত্র তারা তাদের বাধ্য থাকবে। যদি কোন অটোচালক তালিকার হার অনুযায়ী যেতে অস্বীকার করে তাহলে সে অটোরিকশার নাম্বার সহ ৯৯, নওয়াবপুর রোড, এই ঠিকানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন।
জনজীবনে প্রতিটি ব্যাপারে এমনি করে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতা আসাকে আমাদের ঐক্যস্তিক কামনা। তবে ভাড়া বেঁধে দিলে এবং মূল্য তালিকা দোকানে ঝুলিয়ে দিলে যে দায়িত্ব চুকে যায় না, বারবার নানা ব্যাপারে সে কথায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই শুধুমাত্র ভাড়া বেঁধে দিলেই চলবে না, সে নির্ধারিত ভাড়া যথারীতি যাত্রীসাধারণ যেন চলাফেরা করতে পারেন সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

টেট্রন নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

ভোগ্যপণ্য কর্পোরেশন ঢাকা শহরের ন্যায্যমূল্যের দোকান এর মাধ্যমে রেশন কার্ডে কার্ড প্রতি কাগজ করে বিদেশী টেট্রন কাপড় বিলি করার যে উদ্যোগ নিয়েছিল কাপড়ের স্বল্পতার জন্য গত সোমবার তা কেবল ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয়নি হাঙ্গামা লাঠিচার্জ, আহত হওয়া সহ বেশ লংকা কান্ড ঘটে গেছে।
এক হিসেবে দেখা গেছে যে, ঢাকা শহরে বর্তমানে রেশন কার্ডের সংখ্যা হচ্ছে ১৮ লক্ষ আর বন্টন করা জন্য আনীত কাপড়ের পরিমান হচ্ছে ১৯ হাজার দুইশত গজ। অর্থাৎ হিসাবমতে ১৮ লক্ষ কার্ডধারীর মধ্যে কেবল ১৫ হাজার কার্ডধারীরই কাপড় পাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাকি ১৭ লক্ষ ৮৫ হাজার কার্ডধারীর জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। অবশ্য এই ১৭ লক্ষ ৮৫ হাজার কার্ডের যে আসল সব কার্ডধারী রয়েছেন সে কথা যেমন ঠিক নয়, তেমন ঠিক নয়, এদের মধ্যে সকলেই ভুয়া রেশন কার্ড ধারী। ১৮ লক্ষ্যের মধ্যে কম করে হলেও সাড়ে ৪ লক্ষ ভুয়া রেশন কার্ড ধারী অবশ্যই রয়েছেন। ভুয়া কার্ডগুলো বাদ দিলেও সাড়ে ১৩ লক্ষ কার্ডধারীর জন্য কর্পোরেশন মাত্র ১৯ হাজার গজ কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং যেভাবে ঢাকঢোল পিটিয়েই কাপড় বন্টনের কথা ঘোষণা করেছেন, সে ক্ষেত্রে কাপড় সংকটে জর্জরিত মানুষের পক্ষে অস্থির হয়ে ওঠা এবং সেই অস্থিরতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কিছু অঘটন ঘটানোর অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অন্যদিকে অভিযোগে প্রকাশ, যেসব দোকানদারকে এ কাপড় বন্টন করতে দেওয়া হয়েছে তারা অনেকেই নাকি বন্টন সময়ের অনেক আগে কাপড় সরিয়ে ফেলেছেন বা নিজেদের স্বজনদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে তারা তাদের দোকানের দীর্ঘ লাইন দেওয়া লোকগুলোর মাত্র কয়েক জনের মধ্যে কাপড় বন্টন করে তারপর দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন।
ভোগ্যপণ্য কর্পোরেশন যে টাকা ব্যয় করে টেট্রন এনেছেন সেই টাকা দিয়ে টেট্রন না এনে যদি সুতি কাপড় দিতেন তাহলে আরো বেশি পরিমাণ কাপড় পাওয়া যেত। আর বেশি লোককে তা বন্টন করা যেত। আর বন্টনের ক্ষেত্রে রেশন কার্ড বাণিজ্য মূল্যের দোকান এর মাধ্যমে না গিয়ে যদি বিভিন্ন অফিস ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক, উন্নয়ন সমিতি ও বস্তি উন্নয়ন ও সমবায় সমিতি সমূহের মধ্যে কাপড় বন্টনের ব্যবস্থা করতেন তাহলে এতোখানি হাঙ্গামার সম্মুখীন তাদের হতে হতো না। ন্যায্য মূল্যের দোকানে কাপড় কারচুপির প্রশ্ন উঠতো না। ভুয়া রেশন কার্ড ধারীদের দৌরাত্ম্য এত চরমে যেতোনা- সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরাও দোকান লুট করে যেতে পারত না।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!