বাংলার বাণী
ঢাকা: ৩০শে জুন, শনিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৩৮০
আটক বাঙালিদের নির্যাতন বন্ধ কর
গত পরশুদিন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন আটক বাঙ্গালীদের নির্যাতন সম্পর্কে পাকিস্তানের শাসকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বাঙালি নির্যাতনের দ্বারা পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা যেমন ঘৃন্য তেমনি মানবতাবিরোধী। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের ঐ রূপ নীতির জন্যে উপমহাদেশের মানবিক সমস্যা বেড়ে চলেছে। এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। ডঃ কামাল হোসেন আরো বলেন- বাংলাদেশ ভারত যুক্ত ঘোষণাকে বিশ্বের প্রগতিশীল দেশগুলো ছাড়াও প্রখ্যাত সংবাদপত্রসমূহ সমর্থন জানিয়েছেন। উপমহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান কারী ওই ঘোষণা বিশ্বমানবতার সমর্থনপুষ্ট সত্বেও পাকিস্তান বিষয়টিকে আমল দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ৫ জন বিশেষ দূত ইতিমধ্যে ৪০ টি দেশে সফর করে এসেছেন তার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ওই সকল দেশ বাংলাদেশ ভারত যুক্ত ঘোষণার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এবং তারা একান্তভাবেই উপমহাদেশের শান্তি কামনা করে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহকে তারা প্রশংসা করেছে।
গত বছর ৩০শে জুন সিমলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে বাংলাদেশ -ভারত -পাকিস্তানের মধ্যে যে সকল বিরোধপূর্ণ মতামত রয়েছে তার নিষ্পত্তির জন্য কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়। এবং সেই মোতাবেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু স্বাক্ষরের কিছুদিনের মধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি পাকিস্তান চুক্তি মেনে চলার স্বপক্ষে কাজ করেনি-বরং একটি ভারতীয় আগ্রহকে নিয়ে এসে দরকষাকষি করেছে। ফলে বাংলাদেশ আটক যুদ্ধবন্দী ও অন্যান্য উপমহাদেশীয় সমস্যার সমাধান হয়নি। এর দীর্ঘদিন পর ভারত বাংলাদেশ যুক্ত ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়েছে। তাতে উপমহাদেশের বিভিন্ন সমস্যা এবং বাংলাদেশ আটক যুদ্ধবন্দী বিচার ও পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালীদের ফিরিয়ে দেবার বিষয়াদি উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের উক্ত যুক্ত ঘোষণায় সুস্পষ্টভাবে উপমহাদেশীয় শান্তি ও নিরাপত্তার কথা বিবৃত হয়েছে। এবং যাতে করে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত সমস্যাবলির বাস্তব সমাধান হয় তার জন্য মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশের আগ্রহ ও ঐকান্তিকতা নিয়ে পাকিস্তান বিশ্বের দুয়ারে ফায়দা লুটার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। সে বিনা বিচারে যুদ্ধপরাধীদের ফিরিয়ে নেবার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ভুট্টোর সে প্রচেষ্টার জবাব দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে এবং তা বাংলাদেশের মাটিতে। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিনা বিচারে ফেরত নেওয়ার বাসনায় ভূট্টো নিরীহ বাঙ্গালীদের তাদের দেশে আটকে রেখে দরকষাকষি করছে। আমরা আশাবাদী যে, এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই এবং আটক বাঙ্গালীদের কেউ ফিরিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের।
কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক