You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: ১১ই জুন, রোববার ২৭ শে জৈষ্ঠ, ১৩৮০

কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে রুখতে হবে

দেশের যুব সমাজকে সকল প্রতিক্রিয়াশীল ও প্রতিবিপ্লবী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
গত শুক্রবার ঢাকা শহর আওয়ামী যুব লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এদেশীয় সহচরীরা ষড়যন্ত্র করছে, এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
৭ই জুন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম যুবসমাজকে সকল ভোগ-বিলাসের ঊর্ধ্বে থেকে তাদের ঐতিহ্য বজায় রাখতে উপদেশ দিয়ে বলেন, বিলাস ও ভোগের মোহ দেখা দিলে বিপ্লবের উদ্দেশ্য পরাভূত হবে।
বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে যুব সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য ছিল অপরিসীম। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুবসমাজই হাসতে হাসতে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছ, শত্রুবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে মরণপণ সংগ্রাম করেছে। সংগ্রামের ঐতিহ্য যুবসমাজের একদিন বা দুইদিন এর নয়। সুদীর্ঘ পচিশ বছরের ঐতিহ্য রয়েছে বাংলাদেশের যুব সমাজের।
আটচল্লিশ সালের ১১ ই মার্চ দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা মিঃ জিন্না যখন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ বলে কার্জন হলে ঘোষণা করেছিলেন তখন বাংলাদেশের গুটিকয়েক যুবকণ্ঠ প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। সেদিনের ছোট একটি প্রতিবাদের ফুলকি বায়ান্ন সালে এসে দাবানলে পরিণত হলো। মাতৃভাষার জন্য শহীদ হলেন সালাম, বরকত, রফিক ও আরো অনেকে।
বায়ান্ন পেরিয়ে বাষট্টি, ছেষট্টি, আটষট্টি, উনসত্তরও একাত্তরের সংগ্রামকে যুবসমাজই ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে এসেছেন চূড়ান্ত সাফল্যের দিকে।
স্বাভাবিকভাবে দেশে স্বাধীন হবার পর অন্যায়, অত্যাচার, শাসন, শোষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের মশালবাহী যুব সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সবচেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বটে কিন্তু নানান সমস্যা ও সংকটের সমাধান এখনো হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্ত, দুর্নীতি, চোরাচালান, ঘুষখোরী, মুনাফাখোরী সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে।
খাদ্য সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি জনিত সমস্যার সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত কারীরা তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে চাইছে। এমনি সংকটজনক অবস্থা যুবসমাজকে নিষ্ক্রিয় ও মিলিত থাকেন তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামের অগ্রসেনানী ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্নিশিখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে আজ আমরা স্বাধীনতা সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রামের পর আমরা জাতীয় ঐক্য অর্জন করেছি। বারো শত বছরের ইতিহাসে বাঙালি জাতির মুক্তির দূত হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজ একদল অতিবিপ্লবী ও স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিকে নষ্ট করতে চাইছে সুপরিকল্পিতভাবে। তাদের উদ্দেশ্য হলো একবার যদি বঙ্গবন্ধুর ভাবমূর্তিকে বিন্যস্ত করা যায় তাহলে বাঙ্গালী জাতি কান্ডারীবিহীন ঘুরপাক খাবে। সারা দেশে আসবে নৈরাজ্য ও নৈরাশ্য। আর সেই সুযোগে তারা শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করে দিতে পারবে।
সামগ্রিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আজ যুব সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য যে সবচেয়ে বেশি এ কথা আর বিস্তারিত বিশ্লেষণ এর অপেক্ষা রাখে না। অতীতে যেমন তারা ত্যাগ,তিতিক্ষা ও সাধনার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে এগিয়ে এসেছিলেন আজও তেমনি তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যুবসমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আলোচনা সভায় শিক্ষা মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য সকল বক্তার যুব সম্প্রদায়ের প্রতি আবেদনই জানিয়েছেন। দীর্ঘ পচিশ বছরের সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের স্বপ্ন ছিল স্বাধীন, সুখী ও শোষনহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা। দেশ স্বাধীন হয়েছে এখন শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক বাংলা গড়ে তোলায় হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আরে স্বপ্নকে সাফল্যের শীর্ষে চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারেন দেশের যুব সম্প্রদায়।

ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার অভিযান

ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সংখ্যা নাকি বেশ কয়েক লাখ বেশি। ভুয়া রেশন কার্ডের ছড়াছড়ির ফলে শহরের জনসংখ্যার চেয়ে অনেকগুণ বেশী রেশন কার্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। আমাদের চরম খাদ্য সঙ্কটের দিনে ভুয়া রেশন কার্ডের অস্তিত্বের ফলে নাগরিক জীবনের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহরের ভুয়া রেশন কার্ডের অস্তিত্বের কথা জানতে পেরেছেন। এবং পনের দিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধারের জন্য খাস দপ্তরের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। বুয়ার রেশন কার্ড ইস্যুর জন্য যেসব সরকারি এবং বেসরকারি ব্যক্তি সুপারিশ করেছেন তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বঙ্গবন্ধু তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ও শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খাদ্য দপ্তরের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার অভিযানের ফলাফল সন্তোষজনক না হলে শহরের বিভিন্ন এলাকায় সান্ধ্য আইন জারি করে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার করা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় সেনাবাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাবে। তল্লাশি অভিযান এর পাশাপাশি প্রত্যেক পরিবারকে নতুন রেশন কার্ড দেওয়া হবে। নতুন রেশন কার্ড পনের দিনের মধ্যে ছাপানোর জন্য বঙ্গবন্ধু খাদ্য দপ্তরের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকা নগরীতে ভুয়া রেশন কার্ড এর প্রকোপ নির্মূল করার জন্য এইরকম একটি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আমরা বহু আগেই উপলব্ধি করেছিলাম। ইতোপূর্বে ভুয়া রেশন কার্ড সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে বহুতর অভিযোগ আমরা অবগত হয়েছি। শুধু নাগরিক সাধারণ নয়, রেশন দোকান মালিকরাও অগনন ভুয়া রেশন কার্ডের অধিকারী বলে আমরা নানা অভিযোগ শুনেছি। রেশন দোকানের মাল না থাকার কারণ হিসেবে রেশন দোকান মালিকদের ভুয়া কার্ড একটি অন্যতম ভূমিকা পালন করে থাকে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি পরিবারে জনসংখ্যার তুলনায় রেশন কার্ডের সদস্য সংখ্যা বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে রেশনের চাল খোলাবাজারে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে রেশনের চাল বাজারে যায় কেমন করে? রেশন দোকান মালিকদের ভুয়া কার্ড এবং নাগরিক সাধারণের ভুয়া কার ডিজে এব্যাপারে দায়ী সে কথা আমরা নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করতে পারি। এমত অবস্থায় ভুয়া রেশন কার্ড কাদের হাতে রয়েছে তা অতি পাতি করে খুঁজে বের করা এই মুহূর্তে অতিজরুরি কর্তব্য। বঙ্গবন্ধু বলেছেন খাস্থ্য দপ্তরের ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার অভিযানের ফলাফল যদি সন্তোষজনক না হয় তাহলে কার্ফু দিয়ে ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি। ঘরে ঘরে তল্লাশি যেমন চালাতে হবে,তেমনি আমরা মনে করি রেশন দোকান মালিকরা ও যেন বাদ না পড়ে। কারণ ভুয়া রেশন কার্ডের মধ্যে রেশন দোকান মালিকের তেমন ‘ধোয়া তুলসী পাতা’ নয়। ভুয়া রেশন কার্ড উদ্ধার অভিযানের সাফল্যের মধ্যেই নাগরিক জীবনের খাদ্য সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি রয়েছে। তাই বলি এ অভিযান সফল হোক।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!