You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.06.28 | বাংলার বাণী সম্পাদকীয় | বনজ সম্পদ সংরক্ষণ | কবি মধুসূদন এর মৃত্যু শতবার্ষিকী | সত্যি এবার ন্যায্যমূল্যে জিনিস মিলবে? | শেখ মণি - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলার বাণী
ঢাকা: ২৮শে জুন, বৃহস্পতিবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৩৮০

বনজ সম্পদ সংরক্ষণ

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সকল শ্রেণীর জনসাধারণের প্রতি যেখানে সম্ভব বৃক্ষ রোপনের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ পক্ষ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।
খবরে প্রকাশ, বৃক্ষরোপণ উপলক্ষে এক আবেদনে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, সরকারি প্রচেষ্টা সফল করার জন্য এই সময়ে বেশি করে বৃক্ষরোপণ করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। কারণ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া শুধু সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে এই বিরাট কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর বৃক্ষরোপণ পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রনালয় জেলা প্রশাসন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রতিও নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই যে বনজ সম্পদ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ প্রয়োজনে কথা বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণে অপেক্ষা রাখে না। প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক কল্যাণের প্রতি লক্ষ্য রেখে বৃক্ষরোপণ আবেদন জানিয়েছেন। গাছ আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ বাংলাদেশের উর্বর মাটিতে যেখানে সেখানে গাছ লাগানো যায়। সোনারবাংলা একদিন সবুজ শ্যামলিমায় আচ্ছাদিত ছিল। আম জাম কাঁঠাল সুপারি নারকেল থেকে আরম্ভ করে সব রকমের গাছে ছিল একদিন গ্রামবাংলায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পাকিস্তানের শাসন ও অবহেলা অযত্নে ফলে সুপরিকল্পিতভাবে কিছুই করা সম্ভব হয়নি। বন স্বল্পতায় ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। গাছগাছালি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের জীবন ধারণের সহায়ক। পর্যাপ্ত বনজ সম্পদের অভাবে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। নদী খাল ইত্যাদি যাচ্ছে ভরাট হয়ে। কাঠের ঘাটতিও রয়েছে। এমতাবস্থায় সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত বনজ সম্পদ বৃদ্ধি করা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ্য করতে হচ্ছে যে পাকিস্তানি শাসনামলে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ বা পক্ষ উদযাপিত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পরও হয়েছে কিন্তু ওই পর্যন্তই। ঘটা করে দু একটা গাছ রাজধানী বা মফস্বল শহরের এদিক-ওদিক লাগানো হলো তারপর সব ঠান্ডা চুপচাপ। সমবেত তৎপরতার অভাবে ভেস্তে যায় সমগ্র পরিকল্পনা ও কর্মসূচি।
এবারে আগামী পহেলা জুলাই থেকে বৃক্ষরোপণ পক্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এ উপলক্ষে জাতির প্রতি আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু সব কথার শেষ কথা হল বৃক্ষরোপণ পক্ষটি যেন এ বছরে একটি সমবেত প্রয়াস এর ফলশ্রুতিতে সার্থক হয় সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। অন্যথায় আগে যা ছিল ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।

কবি মধুসূদন এর মৃত্যু শতবার্ষিকী

আগামীকাল ২৯শে জুন বাংলার অন্যতম মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের একশত তম মৃত্যুবার্ষিকী দিবস। একশ বছর আগে দীর্ঘদিন ধরে রোগভোগের পর এই দিনটিতে কবির মহাপ্রয়াণ ঘটে। দিবসটি উদযাপনের জন্য নির্ণীত কর্মসূচি আজ থেকে শুরু হচ্ছে। মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জল জ্যোতিষ্ক। সে জ্যোতিষ্কের আলোকচ্ছটায় আলোকিত হয়েছে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা- নতুন আঙ্গিকে, নতুন চেতনায়।
পাশ্চাত্য সাহিত্যের নবতরঙ্গে প্রথম আঘাত সজোরে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাত দিয়ে। মধ্যযুগীয় ধ্যান-ধারণা, কাব্যের আঙ্গিক ভাষা, বক্তব্য সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে অমিত্রাক্ষর ছন্দের পরিবর্তনের রীতি ব্যবহার এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি রচনা ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যের জগতে যে বিপ্লবের পরিবর্তন এনেছে তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এবং এইসব কারণে অনেক সমালোচক তাকে বিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত করতে চান।
ইটের মধুসূদন দত্তের গোটা জীবন নিয়ে পর্যালোচনা করলেও তার হৃদয় একটা বিপ্লবী সততার পরিচয় মিলে। তার এই বিপ্লবীর সত্তার জন্যেই বোধ করি, ধর্মীয় অনুশাসন কিংবা সামাজিক রীতিনীতি তাকে আটকে রাখতে পারেনি। তিনি জ্ঞানের সন্ধানে ছুটে গেছেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপারে। সে বিদেশ-বিভুঁয়ে থেকে তার বিপ্লবী সত্তা দেশমাতৃকার জন্য কেঁদে মরেছে। জন্মভূমির প্রতি তার প্রগাঢ় মমত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পায় যখন দেখি তিনি মৃত্যুর আগেই তার সমাধি গাত্রে উৎকীর্ণ করে রাখার জন্য রচনা করেছিলেন সেই বিখ্যাত চরণ কটি-
‘দাঁড়াও, পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম)
মহির পদে মহা নিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!’
বাংলাদেশের মানুষের আজ সেই বিপ্লবী সত্তার প্রয়োজন। যে বিপ্লবী সত্তা কাজ করবে সর্বপ্রকার দুর্নীতি, অনাচার, অসুন্দরের বিরুদ্ধে। এবং তাহলেই কেবল দেশকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা যাবে ধীরে ধীরে হলেও দেশের সমস্ত সমস্যার সমাধান ঘটানো হয়ে উঠবে।
কবির মৃত্যু শতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমস্ত অনুষ্ঠানাদি সার্থক হোক। কবিকে স্মরণ করার সফল হোক। তার বিপ্লবী চেতনা আমাদের কেউ অনুপ্রাণিত করুন আজকের দিনে সেটাই আমাদের কাম্য।

সত্যি এবার ন্যায্যমূল্যে জিনিস মিলবে?

বাজারে যে দরে বিক্রি হোক না কেন অথবা কর প্রস্তাব সহ নয়াবাজার সংসদ কর্তৃক গৃহীত হতে আর যতদিন বাকি থাকুক না কেন বাণিজ্য দপ্তরের নিয়ন্ত্রক দেশে প্রস্তুত সমূহের একটানা দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। একই সময়ে শিল্প মন্ত্রণালয় দেশে সিগারেটের উৎপাদন বিতরণ ও মূল্যের সমস্যা নিয়ে একটা উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামরুজ্জামান সহ তার মন্ত্রণালয়ের ও সিগারেট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। যথারীতি সেখানে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য নিজেদের নেওয়া নানা ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা দায়ী বলে স্বীকারোক্তি করা হয়েছে। উল্লেখিত ও ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য সেই উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আবার নতুন শপথ গ্রহণ করা হয়েছে।
একটি কথা বলতে কি এই উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন যে সম্মেলনের নানা কার্যবিবরণী আর অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে হুমকি-ধামকি আর সাধারন মানুষের মনে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। শুধু সিগারেট কেন বিভিন্ন জিনিসের দল বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এর পূর্বেও। নির্ধারিত মূল্যে জিনিস নাকি বিক্রি করলে কঠোর শাস্তি বিধানের শাসনই তখন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। খবরের কাগজের সরকার-নির্ধারিত পণ্যমূল্য ছাপা হয়েছে। বাজারে গিয়ে ক্রেতা সাধারণকে কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্যে।
সরবরাহ এবং বন্টন ব্যবস্থা দুর্নীতি রয়েছে, গাফিলতি রয়েছে সেই দুর্নীতি দমনে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন নেই তাই অর্থনৈতিক নিয়মেই বাজারে শূন্যতার সুযোগ গ্রহণ করছে মজুদদারের দল। এসব কিছুকে হিসেবের মধ্যে আনতে হবে। আশার কথা শিল্প মন্ত্রণালয় এ উল্লেখিত সম্মেলনে দুর্নীতি এবং ত্রুটিপূর্ণ বন্টন ব্যবস্থা সহ উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারটাও আলোচিত হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতি পরায়ন এবং অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১ টাকা ৫৫ পয়সার সিগারেট প্রায় সাড়ে চার টাকায় কিনেও আমরা অতঃপর ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র পাবার আশা করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমূহের কাছে আমাদের আবেদন আবারও যেন আমাদের হতাশ না হতে হয়।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন