কুম্ভকর্ণ নীতি
অন্যদিকে যদিও রাষ্ট্রসঙ্ আজ বাংলা দেশের প্রতি এক অবিশ্বাস্য কুম্ভকর্ণ নীতি অনুসরণ করে চলেছে তবুও এ কথা নিঃসঙ্কোচে স্বীকার করতেই হবে যে, এই সর্বকনিষ্ঠ সার্বভৌম রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাষ্ট্রসঙ্ঘের সনদের শান্তি, মৈত্রী ও সহযােগিতার সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবধারার প্রতীক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছে। সে দিক থেকেও, অন্ততঃ আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতিবােধ (অবশ্য যদি এ ধরণের কোনও বস্তু থেকে থাকে) সম্প্রসারণের স্বার্থেও বাংলা দেশের সংরক্ষণ পবিত্র এক ঐতিহাসিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। সুতরাং বাংলা দেশের আবির্ভাব ভারতবর্ষের, তথা সমগ্র বিশ্বের ক্ষেত্রে চিরকল্যাণকর এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এব স্বীকৃতিদানে অযথা কালবিলম্ব করা, পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলির মদৎ দেওয়া ছাড়া আর কি হতে পারে? বাংলা দেশকে সযত্নে লালন পালন করা ভারতীয় জাতীয় স্বার্থে বিশেষ প্রয়ােজন। একে যথাযথভাবে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই প্রয়ােজন হবে নিঃশর্তভাবে স্বীকৃতি দান। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই বাংলা দেশকে যথােপযুক্ত সাহায্য ও সহযােগিতা প্রদান করা সহজ হবে। এই আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সহযােগিতা ছাড়া বেশী দিন বাংলা দেশের পক্ষে মারমুখী ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা সম্ভবপর হবে না। সেন্টো জোটবদ্ধ দেশগুলি ইতিমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্রজ্যবাদের সাথে হাত মিলিয়েছে। এর ফলে ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্রের ধ্বংসলীলার ক্ষমতা নিঃসন্দেহে সঞ্জীবিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে বাংলা দেশকে যেভাবেই হােক রক্ষা করতেই হবে। আর এই রক্ষা করার প্রথম শর্ত হলাে বাংলা দেশকে ভারতবর্ষের স্বীকৃতি দান। এই রক্ষা করার প্রথম শর্ত হলাে বাংলা দেশকে ভারতবর্ষের স্বীকৃতি দান। এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ভারত সরকারের হ্যামলেট ধরনের দ্বিধাগ্রস্ত মনােভাব পরিত্যাগ করে। বলিষ্ঠ এক যুগােপযােগী দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই মনে হয় সব চেয়ে যুক্তি ও ন্যায়সঙ্গত কাজ হবে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৫ মে ১৯৭১