You dont have javascript enabled! Please enable it!

চরিত্রচিত্র

মুজিব বন্দি না মুক্ত, মৃত না জীবিত-অদূর ভবিষ্যতে এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। তবে সন্দেহ নেই বাঙালি হৃদয়ের একেবারে অন্তরতম প্রদেশে তার স্থান চিরদিন অটুট থাকবে।
মাথার চুলে পাক ধরেছে, বাঙালির তুলনায় দীর্ঘদেহী ছ ফুট লম্বা বলিষ্ঠ চেহারার এই মানুষটিকে কেউ কেউ বলেছেন রাজনীতির কবি। কথাটা উড়িয়ে দেবার মতাে নয়। বাঙালি মাত্রেই কম বেশি পরিমাণে কবিআর মুজিবুর বাঙালি নয় তাে বাঙালি কে! | [ ৫১ বছর আগে ফরিদপুরের এক সম্পন্ন জমিদার গৃহে জন্ম, মিক্ষা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে- মুজিব ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক সংস্পর্শে আসেন। আইনের স্নাতক হলেও, রাজনীতি ছাড়া তিনি আর বিশেষ কিছুই করেননি।
সােহরাওয়ার্দীর অনুগামী মুজিব তার নেতার সঙ্গে লীগ থেকে বেরিয়ে এসে গড়ে তােলেন আওয়ামী লীগ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের পুরােহিতরূপে পাকিস্তানের শাসক চক্রের সঙ্গে বিরােধে লিপ্ত হন। ফলে দুবার তাকে কারাবরণ করতে হয়। জেল থেকে বেরিয়ে ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভায় যােগদান করেন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী রূপে। ১৯৬৩ সালে সােহরাবর্দী মারা গেলে মুজিব হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগের সর্বময় নেতা। আওয়ামী লীগকে তিনি ঢেলে সাজান এবং জোরালােভাবে স্বাধীকারের দাবি তােলেন। আর তারই পরিণাম হিসাবে পাকিস্তানের তৎকালীন ডিকটেটর আয়ুব খান তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পপারেন। এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করেন ষড়যন্ত্রের মামলা। কিন্তু প্রবল গণআন্দোলনের ফলে মুজিব শেষ পর্যন্ত মুক্ত হন এবং আয়ুব খানকে বিদায় নিতে হয় রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চ থেকে। মুজিব হয়ে ওঠেন জনতার চোখের : মনি ।
মুজিবের জনপ্রিয়তার তুলনা নেই। লক্ষ লক্ষ মানুষকে তিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে পারেন তাঁর আবেগময় বক্তৃতার জাদুতে। বাঙলা তাে বটেই ইংরেজি ও উর্দু ও অনর্গল বলতে পারেন মুজিব।
উগ্রপন্থি বলে চিত্রিত হলেও আসলে কিন্তু মুজিব নরমপন্থী। তাকে এবং তার দলকে যে শেষ পর্যন্ত অস্ত্র ধারণ করতে হলাে, তার জন্য দায়ী তিনি নন – দায়ী পাকিস্তানের সামরিক শাসক চক্র। মুজিবের সায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নিলে বাঙলাদেশকে স্বাধীনতা ঘােষণা করতে হতাে না। রক্তপাত এড়ানাে যেত, ইয়াহিয়া চক্রেরও মুখ রক্ষে হতাে।
-চিত্রগুপ্ত

সূত্র: সপ্তাহ, ১৬ এপ্রিল ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!