You dont have javascript enabled! Please enable it!

পাকিস্তানি জঙ্গীশাহীকে মার্কিন সাহায্য

বাঙলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী যখন বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলাের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া খান স্বৈরাচারী সরকারের হাতে কোন রকম সাহায্য না দিতে, ঠিক সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে পাকিস্তানি জঙ্গী শাসনকে মদত দিতে শুরু করেছে। ওয়াশিংটনের এক খবরে প্রকাশ, পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকারের এক নতুন চুক্তি হয়েছে যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে ১০ লক্ষ ডলার সাহায্য দেবে। এই টাকা দিয়ে পাকিস্তান বিদেশি জাহাজ ভাড়া নেবে—উদ্দেশ্য পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে রিলিফের মালপত্র নিয়ে যাওয়া।
আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, এই সাহায্য দানটা নিতান্তই নির্দোষ ব্যাপার। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা যে মােটেই নির্দোষ নয় তা একটু তলিয়ে দেখলেই বুঝতে কারাে কষ্ট হবে না। কি জন্য পাকিস্তান সরকার হঠাৎ পূর্ববঙ্গে রিলিফ পাঠাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন? পাকিস্তানি সামরিক শক্তির বর্বর অত্যাচারে বাঙলাদেশের মানুষ নিঃস্ব, পথের ভিখারীতে পরিণত হয়েছেন দেখে কি ইয়াহিয়া খাঁর কঠিন হৃদয় দ্রবিভূত হয়েছে? এই রিলিফ কি তবে জঙ্গী শাসনের অত্যাচারের শিকারদের ক্ষতের উপর প্রলেপ দেবার চেষ্টা? না, আদো তা নয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র চার্লস ব্রে জানিয়েছেন, গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের সাইক্লোন বিধ্বস্ত মানুষেদের জন্য সাহায্য পাঠাবার উদ্দেশ্যেই পাকিস্তান সরকার নৌকা ও জাহাজ ভাড়া নেবেন।
পাকিস্তানের সমুদ্র-উপকূল অঞ্চলে সাইক্লোন হয়েছিল ৬ মাস আগে। আজ এতদিন পরে সেখানে সাহায্য পাঠানাের গল্প কে বিশ্বাস করবে? বরং সকলেরই সন্দেহ, এই সব নৌকা ও জাহাজের সাহায্যে পাকিস্তান বাঙলাদেশে সামরিক মালপত্র এবং সৈন্য চলাচলের ব্যবস্থা করতে চায়। বর্ষার মধ্যে বাংলাদেশে যাতায়াতের সমস্যা করতে চাইছে এই ভাবে।
এই সন্দেহ যে অমূলক নয়, বরং এর যথেষ্ট ভিত্তি আছে তা মার্কিন সরকারি কর্তারাও বিলক্ষণ জানেন। সাইক্লোনের রিলিফ বিতরণের জন্য যুক্তরাষ্ট ইতিপূর্বে পাকিস্তানকে যেসব মােটর-বােট দিয়েছিল তা পাকিস্তানি সামরিক কর্তারা কাজে লাগিয়েছেন বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের বিরুদ্ধে। এই ধরনের মােটর-বােট সৈন্য বহন করা হচ্ছে—তার ফটো মার্কিন পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিজেরাও এ সম্বন্ধে পাকিস্তান সরকারের কাছে লােক দেখানাে প্রতিবাদওঁ জানিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আবার সেই সামরিক চক্রের হাতে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ দমনের হাতিয়ার তুলে দিতে তাদের বাধছে না।
মার্কিন সরকারি কর্তাদের এই আচরণে অবশ্য বিস্মিত হবার কোন কারণ নেই। পাক-ভারত উপমহাদেশে অস্ত্র প্রতিযােগিতার সূত্রপাত করেছিলেন তারাই-পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দিতে শুরু করে। পাক-ভারত যুদ্ধের সময় সাময়িকভাবে এই সাহায্য দেওয়া বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু আবার পাকিস্তানিজঙ্গীশাহীকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য তাঁরা দিতে আরম্ভ করেছেন কিছুকাল আগে থেকে। বাঙলাদেশে গণহত্যা শুরু হবার পর থেকে এই সাহায্য বন্ধ করার দাবি মার্কিন মুলুকেও উঠেছে। কিন্তু মার্কিন সরকারি মহল তাতে কর্ণপাত করেননি।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৮ জুন ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!