বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : সােভিয়েত সমর্থন ও চৈনিক ডিগবাজি
বিবেকানন্দ মুখােপাধ্যায়
পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট মিলিটারি চক্র বাঙলাদেশের গণতান্ত্রিক জনগণের বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ থেকে যে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ আক্রমণ চালাইতেছে এবং পাইকারি হারে নরহত্যায় উন্মত্ত হইয়াছে, তার বিরুদ্ধে পৃথিবীর অধিকাংশ সংবাদপত্র ধিক্কারধ্বনি তুলিয়াছে এবং যদি সংবাদপত্রকে মােটামুটি জনমতের বাহকরূপে ধরা যায় তবে, স্বীকার করিতেই হইবে যে, পূর্ব বাঙলার স্বাধীনতা যােদ্ধারা পৃথিবীর বিবেক স্পর্শ করিয়াছেন এবং সহানুভূতি উদ্রেক করিয়াছেন। তিন সপ্তাহ পূর্ণ হইতে চলিল এই অমানুষিক আক্রমণ চলিতেছে। একটি সুসজ্জিত আধুনিক সৈন্যবাহিনীর (ট্যাঙ্ক থেকে বােমারু বিমান পর্যন্ত কোনাে কিছুরই যার অভাব নাই) এই হিংস্র ও বর্বর আক্রমণকে যেভাবে বাঙলাদেশের প্রায় নিরস্ত্র জনগণ ও মুক্তিফৌজ আশ্চর্য দৃঢ়তা ও সাহসিকতার এবং পাকিস্তানি ক্ষুধার্ত নেকড়েগুলােকে বিভিন্ন শহরের ছাউনি বা ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে আটকাইয়া রাখিতেছে, সেই কাহিনি একদিন দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসরূপে লিপিবদ্ধ হইবে। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও একান্ত সত্য যে, বাঙলাদেশের মুক্তিফৌজের এই প্রতিরােধযুদ্ধ অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত … চলিতে পারে না। … জন্যই ভারতবর্ষকে তার স্বাধীনতা ও প্রতিরক্ষার প্রয়ােজনে (যে সম্পর্কে আগেই লেখা হইয়াছে) পূর্ব বাঙলার পাশে আসিয়া … হইবে। বলাবাহুল্য যে, পূর্ববঙ্গ হইতেছে। পশ্চিম বঙ্গের “জন্ম … সুতরাং এই সহােদরকে বুকের রক্ত দিয়া আমাদেরর রক্ষা করিতে হইবে। ভারত সরকারের থেকে বাঙলাদেশের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে যেমন কূটনৈতিক … দেওয়া দরকার, তেমনি … প্রকার সামরিক সাহায্যও দেওয়া প্রয়ােজন। কোন দেশের জনগণের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক আর এবং আপামর সাধারণের … বিপন্ন হইলে সেই দেশ ও রাষ্ট্রকে সর্বপ্রকার সহায়তা দেওয়া আইন ও নীতিসম্মত।
চীনকাল থেকেই সভ্য সমাজে এই … প্রচলিত আছে যে, কোন প্রতিবেশীর বিপদ ঘটিলে অপর প্রতিবেশী তাকে সহায়তা দিবেন। সভ্য রাষ্ট্রের মধ্যেও বহুকাল থেকেই এই নীতি বর্তমান। বাঙলাদেশে যখন বিধিসম্মতভাবে নূতন সরকার গঠিত ও ঘােষিত হইবে (এই সপ্তাহেই এটা প্রত্যাশিত) তখন সেই সরকারকে কূট স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের নিশ্চয়ই দ্বিধা ও সংকোচ থাকা উচিত নয়।
কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও সত্য। আমরা আন্তর্জাতিক জগৎ থেকে নিশ্চয়ই আলাদা ও বিচ্ছিন্ন হইয়া চলিতে পারি না। এবং এই যুগে সেটা সম্ভব নয়। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই পর্যন্ত সঠিক পথেই চলিয়াছেন। তিনি রাষ্ট্রসংঘ ও আন্তর্জাতিক জগতের বিবেকের নিকট যে আবেদন জানাইয়াছেন বাঙলাদেশে নরহত্যা ও অবিমিশ্র রক্তপাত বন্ধ করার জন্য তা একেবারে ব্যর্থ হয় নাই। সেই সঙ্গে যে কোনাে বুদ্ধিমান পর্যবেক্ষকের একথাও জানা ছিল যে, সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে বাঙলাদেশে যে অদ্ভুত স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হইয়াছে এবং যে সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হইতে বাধ্য, সেই সংগ্রাম থেকে বৃহৎ শক্তিবর্গ নিস্পৃহ দর্শকের মতাে দূরে দাঁড়াইয়া থাকিতে পারিবেন না। আমরা আনন্দিত যে, সােভিয়েত রাশিয়াই সর্বাগ্রে এই ব্যাপারে সাড়া দিয়াছেন। যদিও এই সময়টায় মস্কোতে সােভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ ও সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি ২৪তম কংগ্রেসের অধিবেশন উপলক্ষে নিদারুণ ব্যস্ত ছিলেন এবং সােভিয়েত সংবাদপত্রগুলােতেও সেই সমস্ত খবরেরই প্রাধান্য ছিল, তথাপি মস্কোতে সাম্প্রতিক বাঙলাদেশ আদৌ উপেক্ষিত হয় নাই। সেখানকার সংবাদপত্রে এই স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং পাকিস্তানি বর্বরতার সংবাদ যেমন প্রকাশিত হইয়াছে, তেমনি সােভিছে গবর্নমেন্ট এই সমস্ত হিংস্রতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাইতে বাধ্য হইয়াছেন যদিও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের মর্যাদা এই প্রতিবাদ পত্রে কোথাও লজ্জিত হয় নাই। কিন্তু বাঙলাদেশের “একক লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সােভিয়েত সরকারের এই মনােভাব ও নীতি এত গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগাের্নির এই প্রতিবাদলিপির (সেভিয়েত রাষ্ট্রপতি হিসাবে পাক রাষ্ট্রপতিকে যে পত্র তিনি দিয়াছেন) প্রধান অংশ মূল ইংরাজী থেকে উদ্ধৃত না করিয়া পরিতেছি। আসল অংশ এই :
“”We consider it our duty to address you, Mr. President, on behalf of the Presidium of the USSR Supreme Soviet, with an insistent appeal for the adoption of the most urgent measures to stop the bloodshed and repressions against the population in East Pakistan and for turning to methods of a peaceful political settlement. We are convinced that this would be in accord with the interests of the entire people of Pakistan and the cause of preserving peace in the area. A peaceful solution of the problems that have arisen will be received with satisfaction by the entire Soviet people.”
যে কোনাে বুদ্ধিমান পাঠক এই পত্র—যে পত্র ইউ এস এস আর-এর সুপ্রিম সােভিয়েতের প্রেসিডিয়ামের পক্ষ থেকে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি লিখিতেছেন, তার গুরুত্ব বুঝিবেন বিশেষভাবে এই কথাগুলাে মধ্যে—“পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে যে অত্যাচার ও ব্যাপক রক্তপাত অনুষ্ঠিত হইতেছে, তা বন্ধ করিবার জন্য সব চেয়ে জরুরি ব্যবস্থা অবণম্বন করা দরকার।”
আন্তর্জাতিক জগতের অধিকাংশ মাতব্বর রাষ্ট্র যখন বাঙলাদেশের জনগণের এই জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে নির্বিকার ছিল, তখন সােভিয়েত সরকার সর্বাগ্রে পাকিস্তান সরকারের নিকট দাবি জানাইয়াছেন এই রক্তপাত ও অত্যাচার বন্ধ করিয়া সমগ্র বিরােধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য। বলা বাহুল্য যে, সাম্যবাদের মহৎ আদর্শ (যে আদর্শ জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে সর্বদা রক্ষা করে) এবং সােভিয়েত গভর্নমেন্টের গৌরবজনক ঐতিহ্যকেই স্মরণ করাইয়া দিতেছে এই প্রতিবাদপত্র। ভারতবর্ষে যারা জনগণের সর্বাঙ্গীণ স্বাধীনতা এবং সামজতন্ত্র ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী তাদের পক্ষ থেকে সােভিয়েত সরকারের নিকট এই দাবি অনেক আগেই উঠিয়াছিল। (ব্যক্তিগতভাবে বর্তমান লেখক আনন্দিত যে, গত ২৯ মার্চ ইউনিভার্সিটি ইনস্টিউটের এক জনাকীর্ণ সভায় তিনি যে বক্তৃতা দিয়াছিলেন, তাতে সকলের আগে তিনি সােভিয়েত ইউনিয়নের নিকট বাঙলাদেশ সম্পর্কে আবেদন জানাইয়াছিলেন।) শাসন ও শােষণ এবং বিশেষভাবে ঔপনিবেশিক শাসন ও রক্তমােক্ষণ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন পরাধীন ও দুর্বল জাতিগুলাের মুক্তি বিধানের জন্য লেনিনের বিপ্লবী আদর্শকে অনুসরণ করিয়া গত পঞ্চাশ বছরের অধিক কাল সােভিয়েত রাশিয়া যে চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন, তার ফল আজ এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে প্রকাশমান। বিশেষভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সােভিয়েত রাশিয়ার ঐতিহাসিক জয়ের পর পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সাম্রাজ্যবাদ পরাজয় মানিতে বাধ্য হইয়াছে এবং সােভিয়েত বিপ্লবের প্রেরণায় পরাধীন ও শােষিত জনগণের মধ্যে এক ব্যাপক জাগরণ আসিয়াছে। পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে পূর্ববঙ্গের জনগণের এই অভ্যুত্থান সেই নূতন সামাজিক ও রাষ্ট্রিক ন্যায়বিধানের ফলশ্রুতি। সােভিয়েত ইউনিয়ন এই পর্যন্ত পৃথিবীর নানা অংশে আক্রমণকারী ও সাম্রাজ্যবাদী শাসনের বিরুদ্ধে বহু দুর্বল ও পরাধীন জাতিকে সহায়তা এবং বিশেষভাবে সামরিক সাহায্য দিয়া আসিয়াছে। গত ত্রিশ দশকে স্পেনের গৃহযুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে এবং তারপর ইদানীং কালে পশ্চিম এশিয়ায় ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী নীতি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে সােভিয়েত সরকার যে সামরিক সাহায্য দিতেছেন, এশিয়াবাসী কৃতজ্ঞচিত্তে সেকথা স্মরণে রাখিবে। সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারি-ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাসিস্ত চক্রান্তের বিরুদ্ধে বাঙলার জনগণ সর্বাঙ্গীণ মুক্তির জন্য যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হইয়াছেন, তাতে সােভিয়েত নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই উদাসীন থাকিতে পারেন না।
অতএব পাকিস্তানের হিংস্রতার বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া খানের নিকট প্রেসিডেন্ট গদগাের্নির এই প্রতিবাদপত্র বাঙলাদেশের স্বাধীনতা-যােদ্ধাদের যেমন প্রেরণা জোগাইবে, তেমনি সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের আদর্শকেও শক্তিশালী করিবে।
কিন্তু সােভিয়েত রাশিয়া যখন বাঙলাদেশের মানবতা ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার সপক্ষে দাঁড়াইয়াছেন, তখন কিন্তু পৃথিবীব্যাপী জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের দাবিদার কমিউনিস্ট সম্পূর্ণ বিপরীত পথ ধরিয়াছেন। দীর্ঘকাল তারা বাঙলাদেশের এই ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি সংবাদও ছাপেন নাই কিংবা রেডিওতেও প্রচার করেন নাই। এমনকি, সমগ্র এশিয়ার ইতিহাসে আজ পর্যন্ত একটা নিরস্ত্র জাতির উপর সেই রাষ্ট্রেরই সরকার (পাকিস্তান সরকারিভাবে দুই অংশের দাবি করে) যে অমানুষিক ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালাইতেছে, তার বিরুদ্ধে ‘জন দরদী’ পিকিং সরকার আজ পর্যন্ত বিন্দুমাত্র “করুণাবানি” যেমন বর্ষণ করেন নাই, তেমনি প্রতিবাদস্বরূপ একটি টু শব্দও উচ্চারণ করেন নাই। অথচ পিকিংয়ের বিপ্লবীদের ভাষায় একটা জাতির বা জনগণের মুক্তিযুদ্ধ বা ওয়ার অব লিবারেশন বলিতে যা বুঝায় বাঙলাদেশের জনসাধারণের এই লড়াই কিন্তু তারই অন্তর্গত। কারণ, এটা মূলত সাড়ে সাত কোটি মানুষের সংগ্রাম পশ্চিম পাকিস্তানের ধনিক, বণিক, মালিক এবং শােষক ও সামরিক শ্রেণীর একচেটিয়া শাসন ও শােষণের বিরুদ্ধে। মৌলানা ভাসানী, যিনি গত কয়েক বছর ধরিয়া কমিউনিস্ট চীনের একজন গোঁড়া সমর্থক সাজিয়ছেন, তিনি এবং তাঁর দলবল পর্যন্ত স্বাধীন বাঙলাদেশের সমর্থনে জান কবুল করিয়াছেন। আরও মনে রাখা দরকার, ইসলামাবাদে বা রাওয়ালপিণ্ডিতে যে ফ্যাসিস্ত চক্রের অভ্যুদয় হইয়াছে গত ২০/২২ বছরে তাদের মতাে ক্রুর এবং নিষ্ঠুর জঙ্গীচক্র এশিয়া মহাদেশের কোথাও আর নাই। অথচ আশ্চর্য এই যে, পশ্চিম পাকিস্তানের এই জল্লাদদের পক্ষে দাঁড়াইয়াছেন পিকিংয়ের সরকারি কর্তৃপক্ষ যে কথা চিন্তা করিতে আমরা লজ্জা ও দুঃখ অনুভব করিতেছি। এমনকি, আজ ভারতবর্ষ পশ্চিম পাকিস্তানের এই দুশমনির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ জানাইতেছে, তাতে পর্যন্ত চীনের জনপ্রভুগণ রুষ্ট হইয়াছেন এবং “অপর দেশের অভ্যন্তরে ভারতবর্ষের অন্যায় হস্তক্ষেপের” এক প্রতিবাদলিপি নিক্ষেপ করিয়াছেন। পিকিংয়ের রেডিওতে এবং সংবাদপত্রে যথারীতি ভরতবর্ষ, সােভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি দোষারােপ করা হইয়াছে। আমরা জানি না একটি পরাধীন জাতির স্বাধীনতার যুদ্ধকে (যে স্বাধীনতা ছাড়া একটা জাতির নিজস্ব রাষ্ট্রিক সত্তা গড়িয়া উঠিতে পারে না এবং যে স্বাধীন রাষ্ট্রিক সত্তা ছাড়া সমাজতন্ত্রের কাঠামাে তৈয়ার করা যায় না) বিশ্ববিপ্লবের দাবিদার কোন রাষ্ট্র কিভাবে উপেক্ষা এবং রিরূপতা করিতে পারেন।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, বাঙলাদেশের নৃশংস ঘটনাবলী সম্পর্কে সােভিয়েত রাশিয়ার প্রতিবাদপত্রের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের নিঃশব্দতা ভঙ্গ করিতে বাধ্য হইয়াছেন এবং যদিও তারা নিয়মমাফিক সরকারি প্রতিবাদপত্র” পাঠান নাই, তবু রক্তপাত বন্ধ ও শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য সদিচ্ছা ব্যক্ত করিয়াছেন এবং মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার ও সমগ্র পরিস্থিতির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন, অর্থাৎ মার্কিন সরকারও পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্যাসিস্তদের প্রতি কোনাে সমর্থন জানান নাই, বরং বাঙলাদেশের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু চীনা সরকারের মুখপাত্র এবং রেডিও প্রকাশ্যেই ইয়াহিয়া খানের পক্ষ সমর্থন করিয়াছেন। সাম্যবাদী বিপ্লবীদের এমন আচরণ অন্তত আমাদের কাছে হতবুদ্ধিকর। আমরা জানি
এর পিছনে কী উচ্চাঙ্গের গূঢ় বিপ্লবী তত্ত্ব থাকিতে পারে। কিন্তু সরল বুদ্ধিতে বুঝা যাইতেছে যে, ভারতবর্ষ ও সােভিয়েত রাশিয়ার তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের নৃশংস হত্যাকারীরাও আলিঙ্গনযােগ্য, কিন্তু পূর্ব বাঙলার মুক্তিযােদ্ধারা অস্পৃশ্য এবং নিন্দনীয়। চীনা বৈপ্লবিক নীতির এই ডিগাবজি নিঃসন্দেহে এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষপাতী আন্তর্জাতিক জগতের কোটি কোটি মানুষের নিকট গভীর দুঃখ ও নৈরাশ্য জাগ্রত করিবে। তথাপি আমরা বিশ্বাস করি সহস্র বাধা ও বিপুল বিপত্তি সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকিবে এবং বাঙলাদেশের মানুষ শুঙ্খল ভাঙিয়া একদিন সমাজতন্ত্রের মুক্ত পতাকার তলে আসিয়া দাঁড়াইবে।
সূত্র: সপ্তাহ, ১৬ এপ্রিল ১৯৭১