You dont have javascript enabled! Please enable it!

মুজিবনগরের প্রধানমন্ত্রীত্ব কে চায়?

পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে প্রস্তাবিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর স্বাভাবিক দাবিদার ছিলেন ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল হতে ঐ সময়ে আগত কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতা ও পরিষদ সদস্যগণের মধ্যে এ-কথাও জোরেসােরে বলাবলি হচ্ছিল যে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে এএইচএম কামারুজ্জামান হবেন প্রধানমন্ত্রী, কেননা তিনি পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অন্যদিকে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তথাপি এমনিতেই রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিলাে যে জনাব তাজউদ্দিন দিল্লিতে নিজেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন এবং সেই সুবাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেছেন।

প্রবাসী সরকার গঠনের পূর্বে সামগ্রিকভাবেই আওয়ামী নেতৃবৃন্দের মধ্যে নেতৃত্ব-প্রতিযােগিতা যে কত মারাত্মক রূপ লাভ করেছিল তার একটি বিবরণ দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ লিখেছেন :

‘নেতৃত্বের ভাগাভাগি নিয়ে দরকষাকষির মাঝপথে অবস্থান করছিলেন, ঠিক সে সময় তাজউদ্দিনের প্রণীত বিবৃতি অনুসারে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘােষণা করে ভারতে অবস্থিত স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়। ফলে নেতৃত্বের প্রতিযােগিতায় লিপ্ত নেতারা প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। দেশের হাজার হাজার মানুষকে যখন জবাই করা হচ্ছিল এবং হাজার হাজার মানুষ দেশের অভ্যন্তরে হানাদার বাহিনীর হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণ দিচ্ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা তখন সরকারের যেকোন একটি পদ লাভের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাজউদ্দিন সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রস্তাব করলে তিনি সন্তুষ্ট হন। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কামারুজ্জামান এবং দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে মােশতাক আহমদ ছিলেন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী।'[1]

অনুরূপ একটি চিত্র ওঠে আসে ‘একাত্তরের কলকাতা’ শীর্ষক গ্রন্থের লেখক ফজলুল বারীর মন্তব্যেও। তিনি লিখেছেন : ‘তাজউদ্দিনের সমস্যা ছিল প্রচুর। নির্বাসিত হয়েও দেশীয় রাজনীতির সংকীর্ণতা কোন কোন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা প্রবাসী সরকারকে আঘাত করেছিল পদে পদে। প্রবাসী সরকারকে, মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় করার জন্যে তাজউদ্দিনের আগ্রহের সমর্থক ছিলেন না আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাকর্মী। মন্ত্রিসভার অবশিষ্ট সদস্যরাও এ পদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন—তাও অপ্রকাশিত থাকে না। এরা অভিযােগ করে বলেন, তাজউদ্দিনের কারণেই ভারতে বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃতি দিতে দেরি করেছে। বিরােধীরা তাজউদ্দিনবিরােধী প্রচারণায় নেতৃত্ব তুলে দেন শেখ ফজলুল হক মণির হাতে।'[2]

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে হাইকমান্ড নামে পরিচিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, খােন্দকার মােশতাক আহমেদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানের সঙ্গে আলাপ-আলােচনা না করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দিল্লিতে হাই কমান্ডের অন্তর্ভুক্ত সদস্য তাজউদ্দিন আহমদের স্বউদ্যোগে প্রধানমন্ত্রিত্বের পরিচয় প্রদান কারােরই মনঃপুত হয়নি। ৮ এপ্রিল দিল্লী হতে তাজউদ্দিন আহমদ কলকাতায় ফিরে এলে ভবানীপুর এলাকার রাজেন্দ্র রােডের এক বাড়িতে তাঁকে ছেঁকে ধরা হয়। দিল্লীর ঘটনাসমূহের আনুপূর্বিক কর্মধারার খুঁটিনাটি বর্ণনা—উপস্থিত যুবনেতা এবং বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত আওয়ামী নেতৃত্বের নিকট অগ্রহণযােগ্য না হলেও আপত্তির মূল পয়েন্টটি ছিলে তাজউদ্দিনের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের বিষয়টি। বলতে গেলে আপত্তি, অভিযােগ এবং পারস্পরিক অবস্থানের টানাটানির ভিতরেই ঐ বৈঠকের পরিসমাপ্তি ঘটে। রাতে এম মনসুর আলী আনুপূর্বিক ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করে আমাকে বললেন যে, তাজউদ্দিন আহমদের রাজনৈতিক আচরণ ও নৈতিকতা সঠিক হয়নি। তবু বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীরূপে তাজউদ্দিনকে মেনে নেয়া ব্যতীত গত্যন্তর নেই। সেদিন পাশাপাশি একত্রে একটি কক্ষে অবস্থানকালে জননেতা হিসেবে মনসুর আলীর যে ধীশক্তি, অস্থিরতাহীন সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নৈর্ব্যক্তিক ক্ষমতা দেখেছি তা সেই সময়ে বিরাজমান সরকারগঠনের জটিলতা নিরসনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বস্তুত এম মনসুর আলীই উদ্যোগ নিয়ে প্রথমে এএইচএম কামারুজ্জামানকে এবং পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল হতে বিস্তারিত আলাপ-আলােচনার ভিত্তিতে খােন্দকার মােশতাককে দিল্লীতে পেশকৃত সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে জায়েজ করাতে সমর্থ হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা জনাব আব্দুর রাজ্জাক সারাটি জীবনই মনে মনে এই ক্ষোভ পােষণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ১৮ বছর পরেও একই কথা বলেছেন : ‘তাজউদ্দিন নিজেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘােষণা করলেন, আমরা বুঝলাম এটা ষড়যন্ত্র। তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করলেন না। আমরা এইটা কোনােভাবেই মেনে নিতে পারলাম না।[3]  তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্ব-প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাকর্মী মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে ছিলেন মারাত্মকভাবে দ্বিধান্বিত। শুধু শেখ ফজলুল হক মণিই নন, এই পদের মূল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন খন্দকার মােশতাক আহমেদ। খন্দকার মােশতাক আহমদ সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম থেকে শেষ প্রহর পর্যন্ত।[4]  এমনকি, ভারতে বাংলাদেশের প্রথম হাইকমিশনার হােসেন আলীও খন্দকার মােশতাকের ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে কাজ করতেন।[5]  তবে আওয়ামী রাজনীতির ডান-বাম আদর্শের দ্বিধা সংকটকালে সেকুলার অসাম্প্রদায়িক ও অভিজ্ঞ নেতা হিসেবে কামারুজ্জামান ছিলেন অনেকের নিকটই গ্রহণযােগ্য। [6]

ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেছেন,
শ্রীমতি গান্ধী তাজউদ্দীন সাহেবের মতের সাথে একাত্মতা পােষণ করবার পর মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেশের ভেতরে–বাইরে এবং ভারতবর্ষের সাথে সাহায্য–সহযােগিতার সম্পর্ক প্রসারিত করবার প্রয়ােজন এবং সেই সমস্ত দিক বিবেচনায় একটি সরকার গঠন করা অবশ্যকর্তব্য হয়ে দাঁড়াল। সেই সরকার গঠনের ব্যাপারেই আমরা এম, আর, সিদ্দিকী, আব্দুর রউফ এঁদের সাথে আলােচনা করেছি। তারা সবাই একমত হলেন একটা সরকার গঠন এখনই প্রয়ােজন। দিল্লীতে বসেই আমরা কিছু চিঠিপত্র পেলাম। যেমন সৈয়দ সুলতান সাহেবের কাছ থেকে, ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক উদ্দিন ভূঞার কাছ থেকে। এই চিঠিগুলােতে লেখা ছিল যেন অবিলম্বে সরকার গঠন করা হয় এবং তাজউদ্দীন সাহেব যেন সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। তখন। আমরা সবাই একমত হলাম যে, হাইকমান্ড হিসেবে যেটা কাজ করছিল সেটাই এখন ক্যাবিনেট হিসেবে কাজ করুক এবং তাজউদ্দিন সাহেব তার প্রধানমন্ত্রী হােন। কিন্তু তাজউদ্দীন সাহেবের প্রচণ্ড দ্বিধা ছিল নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। আত্মপ্রকাশ করানাের বিষয়টিতে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আপনি তাে আওয়ামী লীগকে চেনেন না, এটা নিয়ে আওয়ামী লীগে কিন্তু নানা রকম ভুল বােঝাবুঝির চেষ্টা করানাে হবে।‘ আমি বললাম, কিন্তু সরকার গঠন করা ছাড়া এই মুহূর্তে তাে আর কোন উপায় নেই। এরপর আমাদের হাইকমান্ডের মতাে করেই আমরা একটি সরকার গঠন করি। আমরা যে সরকার গঠন করেছিলাম তা ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতির। [7,p 70]
তাজউদ্দীন সাহেব দলের সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষ থেকে জাতির এই দুর্দিনে ভারতের সাহায্য–সহযােগিতা পাবার জন্য তিনি দিল্লী গেছেন—কর্তব্যের ডাকে তিনি সেখানে গেছেন এবং দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও সে অধিকার তার আছে। এই যুক্তিগুলাে এত জোরালাে ছিল যে এর বিরুদ্ধে আর কোন কথা উঠতে পারল না। ধীরে ধীরে সকলেই আমাদের যুক্তি মেনে নিতে বাধ্য হলেন। তখন এই প্রশ্ন যারা কোন একটা মতলব থেকে তুলেছিলেন তারা যদিও এই যুক্তি অস্বীকার করতে পারছিলেন না, কিন্তু মনে মনে ফুসছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে সকলেই এই কথাটা মেনে নিলেন। [7, p.72]
১০ এপ্রিলে তাজউদ্দীন সাহেবের যে বক্তৃতা প্রচার করার কথা সেদিন শেখ মণি তাজউদ্দীন সাহেবকে বললেন, ‘মামা, আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে।’ তাজউদ্দীন সাহেব এবং শেখ মণি একটা ঘরে গিয়ে আলাপ করতে লাগলেন। প্রায় ঘন্টাখানেক তারা আলাপ করার পর সেখানে। আমাকে ডাকা হল। আমি যাবার পর তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, “দেখেন, শেখমণি বলছে টেপ করা বক্তৃতাটা আজকে যাতে প্রচার করা না হয়, এটা দু–তিনদিন পর হলেও কোন অসুবিধা হবে না। আমরা যখন আগরতলা যাচ্ছি, সেখানে যারা আছে তাদের সাথে আলাপ করে একমত হয়ে এটা করা যাবে।‘ শেখ মণি বিপ্লবী সরকারের কথা বলেছিলেন এবং গতরাতেই একটা আলাপআলােচনার মাধ্যমে যুক্তির মাধ্যমে আমরা সেটা কাটিয়ে উঠে একমত হতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আগরতলাতে যাওয়ার পর এটা নিয়ে আবার একটা ঝামেলার যে আশঙ্কা তা আমি খুব অনুভব করলাম। সেইসাথে যারা সত্যিকার অর্থে তখন যুদ্ধে লিপ্ত তাদের কাছ থেকে আমরা চিঠিপত্র–খবরাখবর পাচ্ছি প্রত্যেকেই চাপ দিচ্ছেন যে সরকার গঠন করতে একদিনও যেন দেরি না হয়। দ্বিতীয়ত, এটা যদি প্রচারিত না হয় তাহলে দিল্লীতে এটা বুঝে ফেলবে যে, আমাদের সরকার গঠন করার ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে কোন অসুবিধা রয়েছে এবং সেটা ভবিষ্যতে আমাদের যে কোন কাজে তাদের বিশ্বাস সৃষ্টিতে সহায়ক হবে না। এ সমস্ত ভেবে আমি এর প্রতিবাদ করলাম। কিন্তু শেখ মণি খুব। উত্তেজিত হয়ে গেল। আমি তখন সমস্ত যুক্তিগুলাে তাদের দিলাম যে কেন এই সরকার গঠনের কথা এখনি প্রচার করার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। সেইসাথে আরাে বললাম যে, আগরতলাতে হােক বা যেখানেই হােক, যাদের সাথে আমাদের দেখা হবে তারা এটা মেনে নিতে বাধ্য। কারণ, আমরা তাে এমন কাউকে নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছি না যে লােকগুলাের নাম আগে ছিল না। যারা যেভাবে কাজ করছিলেন তারা সেভাবেই কাজ করতে থাকবেন। এটা হচ্ছে আমাদের ধারাবাহিকতা, এবং তাজউদ্দীন সাহেব যখন ঢাকাতে ছিলেন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর মতই কাজ করছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধানের মতই কাজ করছিলেন। অতএব আমরা এটা নূতন কিছু করছি না যে এটা কেউ অনুমােদন করবে না। এটা তাে আগেই অনুমােদিত হয়ে আছে। তখন শেখ মণি বললেন, ‘আপনি অত বুঝবেন না আমাদের ভেতরের কথা, বঙ্গবন্ধু আমাদের কী অথরিটি দিয়ে গেছেন।‘ এই কথাটাই মণি বলতে চাইলেন যে, বঙ্গবন্ধু তাকে একটা অথরিটি দিয়ে গেছেন। তাজউদ্দীন সাহেব আমার আর শেখ মণির মধ্যকার বিরােধটা মিটানাের জন্য বললেন, ঠিক আছে, মণি যখন বলছে যে আগরতলাতে গিয়ে এই সরকার অনুমােদন করানাের জন্য যা কিছু করা দরকার সে তা করবে, তখন তার কথাটা মেনে নিন। আমি খুব দ্বিধাগ্রস্ত মনে বললাম ঠিক আছে, দেখি আমি কী করতে পারি। ইতােমধ্যে বক্তৃতার টেপ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে চলে গেছে, কাজেই এটা। ফিরিয়ে আনা যাবে কিনা আমি ঠিক জানি না।‘ আমি বাইরে এসে গােলােক মজুমদারকে ফোন করলাম। আমি বললাম, “যে টেপটা আমি আপনাকে দিয়েছি সেটা কোথায় ?’ তিনি বললেন, যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে সেটা চলে গেছে।‘ আমি বললাম যে, ‘টেপটার সম্প্রচার আপাতত কি স্থগিত করা যায়?’ তখন তিনি বললেন, যদি আপনারা বন্ধ করতে চান তাহলে আমি হয়ত চেষ্টা করলে এখনাে করতে পারি। কিন্তু তা করা কি ঠিক হবে? বরং এটা করলে নানা জায়গায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হবে।‘ তখন আমি গােলােক মজুমদারকে বললাম যে, তাহলে যেভাবে এটা নির্ধারিত হয়েছে। সেভাবে চলতে থাকুক।‘ এই একটিমাত্র কাজে আমি তাজউদ্দীন সাহেবের কথা অমান্য করেছিলাম। এটা ঠিক হয়েছিল, কি সঠিক হয়নি তা বিচার করবে আগামী ইতিহাস। আর পরবর্তীকালে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে সেগুলাে দেখলে। বােঝা যাবে এটা বন্ধ করার চেষ্টার পেছনে কী চিন্তাভাবনা বা ষড়যন্ত্র ছিল। আমি ফিরে এসে তাজউদ্দীন সাহেবকে বললাম ‘গােলােক মজুমদারকে আপনার ইচ্ছার কথা বলেছি। তিনি হয়ত বা চেষ্টা করবেন এটা বন্ধ করার ব্যাপারে। কিন্তু টেপটা এখন আর তার হাতে নেই।‘ এর পরে রাতে আমরা খেতে বসেছি; খাবার টেবিলে শুধু তাজউদ্দীন সাহেব, শেখ মণি আর আমি। কারণ সেই সময় তােফায়েল আহমদ অসুস্থ হয়ে কলকাতাতে চলে গেছেন। মনসুর আলি সাহেবের জুর, তিনি শুয়ে পড়েছেন। আমি রেডিওটা অন করে দিয়েছি, এই সময় খবর হয়। রেডিও অন করতেই শুনি একটি ঘােষণা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বেতার ভাষণ প্রচার করা হবে। আমরা তিনজনই তিনজনের চোখের দিকে তাকালাম। কারাে মুখে কোন কথা নেই, আমরা চুপচাপ। আমরা চুপচাপ রেডিও–র ঘােষণা শুনলাম আর খেয়ে নিলাম। সকলেই বুঝলাম যে কী হয়ে গেছে। [7, pp. 73-75]

References:
[1] মওদুদ আহমদ, বাংলাদেশ স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতা, ইউপিএল, ঢাকা, চতুর্থ সংস্করণ, ২০১০, পৃষ্ঠা ২১৮
[2] ফজলুল বারী, একাত্তরের কলকাতা, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৩, পৃ. ২৮
[3] সাক্ষাৎকার, বিস্তারিত দ্রষ্টব্য, শেখ ফজলুল হক মণি, বিতর্কিত মানুষ, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ২৪ জুন ১৯৮৯।
[4] ফজলুল বারী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৮
[5] Rafiqul Islam, BU, A tale of milions, Bangladesh Liberation War 1971, Annanya, Dhaka, 2005, P. 215
[6] সালিম সাবরিন, এম মনসুর আলী, উৎস, ২০১৮, পৃষ্ঠা ৯৭-৯৯
[7] রিমি সিমিন হোসেন, তাজউদ্দীন আহমদ আলোকের অনন্তধারা, 3rd ed. প্রতিভাস, 2006.
[8] সংগ্রামের নোটবুক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!