You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্কিন-চীন ষড়যন্ত্রের ভরাডুবি

নিরাপত্তা পরিষদে ভারতকে বেকায়দায় ফেলার জন্য মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্র যে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত করেছিল সােভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো প্রয়ােগে তা বানচাল হয়ে গেছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রের দুধকলা দিয়ে পাকিস্তানি কালসাপকে সযত্নে পুষেছে। এই কালসাপ যখন বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে ছােবল মেরেছে, দিনের পর দিন ভারতের উপর গােলাবর্ষণ করেছে, সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে, তখন এরা দেখেও দেখেনি। আজ ভারত পাল্টা জবাব দিতে শুরু করায় এরা সন্ত্রস্ত হয়ে আওয়াজ তুলেছে ‘সামাল সামাল।
পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আর্থিক সাহায্য দান বন্ধ করেছে এবং নানাভাবে হুমকি দিয়েছে। তারপর রাষ্ট্র সঙ্রে নিরাপত্তা পরিষদে তুলেছে তথাকথিত যুদ্ধবিরতীর প্রস্তাব। এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য খুবই স্পষ্ট। বর্তমানে এই উপমহাদেশে যে লড়াই চলছে তার জন্য ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই সমান দায়ী-এটাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা প্রচার করতে চেয়েছিল। যে ইয়াহিয়া খা এবং তার সামরিক চক্র পূর্ববঙ্গে নিষ্ঠরভাবে গণহত্যা করেছে, প্রায় এক কোটি বাঙালিকে শরণার্থী হিসাবে এদেশে আসতে বাধ্য করেছে এবং দিনের পর দিন ভারতের উপর আক্রমণ চালিয়েছে, তার অপরাধ ধামাচাপা দিতেই মার্কিন নেতারা চেয়েছিলেন। তাদের এই নােংরা রাজনীতির সঙ্গে চরম আগ্রহে হাত মিলিয়েছে চীনা নেতারা। তারা সমর্থন করেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী প্রস্তাবকে, কুৎসা রটনা করেছে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে, নিন্দা করেছে ভারত এবং সােভিয়েত ইউনিয়নকে।
সােভিয়েত ইউনিয়নের ভেটোতে মার্কিন প্রস্তাব নাকচ হবার পর আরও একবার এগারােটি রাষ্ট্রের তরফ থেকে ভারত পাকিস্তান সীমান্ত থেকে দু-রাষ্ট্রের সৈন্য অপসারণের প্রস্তাব তােলার চেষ্টা হয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদে। আসলে ভারতের কাছে এ ধরণের প্রস্তাব মার্কিন নেতারা আগেও করেছিলেন। ভারতের নিরাপত্তা বিপন্ন করা ছাড়া এ প্রস্তাবের অন্য কোনাে উদ্দেশ্য ছিল না; ভারত সরকার তাই ঘৃণাভরে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। নিরাপত্তা পরিসদে এগারােটি রাষ্ট্রের এই দ্বিতীয় প্রস্তাবও যথারীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সমর্থন করতে ছাড়েনি। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বার ভেটো প্রয়ােগ করে সােভিয়েত ইউনিয়ন চীন-মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের এই অধিবেশন সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুসের প্রকৃত বন্ধু কে। দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের জন্য চীনের মায়াকান্না আসলে নিছক ধাপ্পা ছাড়া কিছু নয়, দেখিয়ে দিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তকে মদত দেওয়াই হবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে চীনের ভূমিকা।
কিন্তু এই মার্কিন চীন চক্রান্ত ইতিহাসের গতিপথকে বদলে দিতে পারবে না। চীন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে ভয় পাবার দিন আর ভারতের নেই। সমস্ত সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং হুমকি উপেক্ষা করে ভারত বাঙলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই স্বীকৃতি দানের সঙ্গে সঙ্গে এই উপমহাদেশ এক নতুন ঐতিহাসিক পথে পদক্ষেপ শুরু করেছে। ভারত সােভিয়েত মৈত্রী চুক্তির পর যে একটা নতুন যুগের সূচনা হয়েছে এ সত্য যদি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং তার দোসররা এখনও না বুঝতে চায় তবে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই অদূর ভবিষ্যতে তাদের তা বুঝতে হবে।

সূত্র: সপ্তাহ, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!