You dont have javascript enabled! Please enable it!

জল্লাদের ডায়েরি থেকে দু’পাতা

ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের আগমনে স্বাধীনতা সম্পর্কে নিশ্চয়ই আর সাধারণ মানুষের ওপর কী বিপুল পরিমাণ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিবাদ হত্যা ও অবিচারের কাজ শুরু হয়েছিল। তার প্রমাণ স্বরূপ ঢাকার জন্যে এতে কিছু প্রামাণ্য দলিল ও কতকগুলাে চাঞ্চল্যকর তথ্য ****** হত্যার খণ্ড খণ্ড কিছু তথ্য এই ডায়েরিতে পাওয়া গেছে।
সূত্র অনুযায়ী, ডায়েরিটির মালিক ফ্যাসিস্ত সংগঠন আলব আশরা নিজের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন অধ্যাপককে ফেলে দিতে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় চালক মফিজুদ্দীন সেদিন পুলিশের কাছে স্বীকারােক্তিতে বলেন। তাতে আশরাকে জল্লাদ নির্বাচন করা হয়েছে।
ঢাকা শহর মুক্ত হবার পর অবশ্য এই জল্লাদের কোনাে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, সে আত্মগােপন করেছে।
ডায়েরির দুটি পাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন অধ্যাপকের নাম লেখা আছে তাদের কোয়ার্টারের নাম ও ঠিকানাসহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ড. মুর্তজার নামও এই তালিকায় রয়েছে। উল্লেখযােগ্য, এই কুড়িজন পণ্ডিতের মধ্যে ১৪ ডিসিম্বর থেকে আটজনের কোনাে খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সেই আটজন হচ্ছেন বাঙলার অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, মােফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আনােয়ার পাশা, ইতিহাসের অধ্যাপক ড. আবুল খায়ের, অধ্যাপক গিয়াসুদ্দীন আহমদ, ইংরাজীর অধ্যাপক রশিদুল হাসান, শিক্ষা বিষয়ের অধ্যাপক ড. ফয়জুল মাহী ও চিকিৎসক ড. মুর্তজা। অন্যান্য নিহত পণ্ডিত অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য ও সিরাজুল হক মহাশয়দের নাম অবশ্য এই তালিকায় নেই।
উপরে উল্লেখিত গাড়িচালক মফিজুদ্দীনের স্বীকারােক্তির ভিত্তিতে তল্লাসি চালিয়ে সম্প্রতি ছয়জন অধ্যাপক ও ড. মুর্তজার গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি মৃতদেহগুলাে এখনাে পাওয়া যায়নি।
ডায়রিতে আরাে যে নামগুলাে রয়েছে তারা হচ্ছেন অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ (বাঙলা), ড. নীলিমা ইব্রাহিম (বাঙলা), ড. লতিফ (শিক্ষা), ড. মুনিরুজ্জমান(ভূগােল), জনাব সাদউদ্দীন (সমাজতত্ব), জনাব এ এম এম শহীদুল্লা (অঙ্ক), ড. সিরাজুল ইসলাম (ইস্লামিক ইতিহাস), ড. আখতার আহমদ (শিক্ষা), জনাব জহিরুল হক (মনস্তত্ত্ব); জনাব আহসানুল হক (ইংরাজী), বাঙলা একাডেমির পরিচালক জনাব কবীর চৌধুরী প্রমুখ।
উক্ত ডায়েরির আরেকটি পাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ষােলজন অধ্যাপকের আর একটি তালিকা রয়েছে। তার মধ্যে একটি নাম পুরাে নামগুলাে সম্পর্কেই সন্দেহ জাগায়, সেই নামটি হচ্ছে ড. মৌহির আলী-ইনি দখলদার বাহিনীর বিশ্বস্ত ব্যক্তি বলে কুখ্যাত ছিলেন এবং এই তালিকায় কেউই নিখোঁজ হননি। তাছাড়া ডায়েরিতে জল্লাদ বাহিনীর অপারেশন ইনচার্জ চৌধুরী মুঈনুদ্দিন, কমান্ডার সাওকত ইমরান, সিটি বদর বাহিনীর প্রধান সামজুল হক ইত্যাদির নামও রয়েছে। বহু সংখ্যক সামরিক কর্তার নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদিও তালিকাতে আছে। একটি তালিকায় ক্যাপ্টেন বসির আহমদের নাম রয়েছে, বসির আহমদ কুখ্যাত যােগসাজসকারী । বহু সংখ্যক নাম ও ঠিকানা তাতে লেখা আছে। একটি নামের পাশে আছে ‘মুজিব বাহিনী। তাতে মনে হয় এই বাহিনীর অনেক মুক্তিযােদ্ধাকেই ধরে এনে মারা হয়েছে।
ডায়রিতে আলাদা এক টুকরাে কাগজে জুট বাের্ডের ফাইন্যান্স মেম্বার জনাব আবদুল খালেকের নাম, পিতার নাম, ঢাকা ও গ্রামের ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা সমস্ত লেখা রয়েছে। উল্লেখযােগ্য, ৯ ডিসেম্বর জনাব খালেককে অফিস থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তারপর তার আর কোনও খোঁজ নেই।
ডায়রির মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় যে, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে নিজেকে উল্লেখ করেছে তার ডায়রিতেই। কিন্তু সে নিখোঁজ হয়েছে এবং তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তাকে পাওয়া গেলে বুদ্ধিজীবী হত্যার একটি বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে, ঢাকার ***** মানুষেরা এখন এই আশা প্রকাশ করছেন।

সূত্র: সপ্তাহ, ২১ জানুয়ারি ১৯৭২

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!