You dont have javascript enabled! Please enable it!

পুড়িয়ে মারা ধর্মীয় লঙ্ঘন হলেও পাকিস্তানীরা তা করেছে – দ্যা বাল্টিমোর সান, ৪ এপ্রিল ১৯৭১

পাকিস্তানীরা বাঙালিদের নিশ্চিহ্ন করছে
লিখেছেন জন ই. উড্রফ

মাত্র ৪ মাস আগে পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি বলেছিল তারা সাইক্লোনের আঘাত হতে বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাহায্যের জন্য সৈন্য এবং হেলিকপ্টার পাঠাতে পারবেনা, যেখানে এই সাইক্লোনে গংগিও অববাহিকার লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। আর্মি বলেছিল, যদি সৈন্য এবং হেলিকপ্টার সরানো হয় তাহলে ভারত পশ্চিম পাকিস্তানে আক্রমণ করে বসতে পারে। যে সময় পাক আর্মি এই স্টেটমেন্ট ইস্যু করে, সে সময় ভারত ঘুর্ণিঝড় আক্রান্তদের জন্য রিলিফ এবং সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর ইস্যু নিয়ে ব্যাস্ত ছিল।

আর আজ, সেই একই পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মিকে দেখে বোঝা যাচ্ছে গত নির্বাচনের ফলাফল গুলি করে দমন করার জন্য তাদের শেষ সৈন্যটিকেও সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে তারা সার্বিক ভাবে প্রস্তুত।

পাঞ্জাবীদের দ্বারা ডমিনেটেড আর্মি যে কোন পর্যায় পর্যন্ত নামতে প্রস্তুত এতে কোন সন্দেহ নেই।

গত সপ্তাহের বৃহস্পতি এবং শুক্রবারের বীভৎস চিত্র থেকে একটাই কথা বলাযায় যে এখানে অস্ত্রের বিজয় হয়েছে সেই সকল মানুষের উপরে যারা অহিংস ভাবে ভোটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত লোকেদের ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল।

সাংবাদিকেরা ধ্বংস যজ্ঞের এলাকা পরিদর্শন করেছে

গত সপ্তাহে যে সকল সংবাদমাধ্যম প্রতিনিধি অভিজাত ঢাকা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে গৃহবন্দী হয়ে অবস্থান করছিলেন তারা বাহীরে ঘটে চলা ধ্বংস যজ্ঞের কিছু খণ্ড চিত্র দেখেছেন। যেমন কিছু আর্মিরা সিভিলিয়ান ঘরবাড়িতে গুলি করছে, ডজন খানেক নিরস্ত্র যুবকের উপর মেশিনগান চালানো হচ্ছে, সিভিলিয়ান ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে আর্মি আগুণ দিচ্ছে।

কিন্তু দুজন ইউরোপিয়ান সাংবাদিক আর্মির চোখ ফাঁকি দিয়ে আরও কিছুদিনের জন্য ঢাকায় থেকেযান, তাঁরা ধ্বংস এবং হত্যা যজ্ঞের প্রমাণ খুঁজে খুঁজে মুছে ফেলার আগেই পরিদর্শন করেনেন।
তাদের দেওয়া তথ্য- এরআগে যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস থেকে আসা কামানের গোলা এবং টানা ম্যাশিনগানের শব্দ শুনে যা কিছু খারাপ অনুমান করছিলেন, তার সবটাই সত্য বলে নিশ্চিত করে। সেখানে দুইটি বিল্ডিঙে জ্বলতে থাকা আগুণ অনেকক্ষণ ধরে রাতের আকাশ আলো করে রেখেছিল।

বস্তিবাসীদের হত্যা করা হয়েছে

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেআসা দুজন সাংবাদিক দাবী করেন শত শত ছাত্র তাদের বিছানায় পুড়ে মরেছে এবং আরও শত শত ছাত্রকে গণকবরে পোড়ানো হয়েছে। তাঁরা পূর্বের নির্ভরযোগ্য ডিপ্লোম্যাটিক রিপোর্ট গুলোও সত্য বলে নিশ্চিত করেছেন- যেখানে বলাহয় বাঁশের তৈরি দির্ঘ বস্তিগুলো অবরুদ্ধ করে আগুণ লাগিয়ে দেওয়াহয় এবং কোন বস্তিবাসি পালাতে চেষ্টা করলে তাদের গুলি করে মারাহয়।

পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব বাংলার মাঝে বা পাক আর্মির মাঝে একমাত্রে বন্ধন ছিল মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস, যার কারণে ভারত ভাগের সময় এই বিভক্ত রাষ্ট্রের জন্মহয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার বীরুধে স্বর্গ রাষ্ট্র হিসেবে।

এমনকি আজও আর্মি তার ক্ষমতা বহাল এবং প্রয়োগ করছে ‘ইসলামিক স্টেট অফ পাকিস্তানের নামে’। যদিও জীবিত অথবা মৃত মানুষ পোড়ানো মুহাম্মদের (সঃ) বিশ্বাসের পরিপন্থী ও নিষিদ্ধ । পশ্চিম পাকিস্তানী মুসলমানদের এটা একটা প্রিয় অপরাধ যা তারা হিন্দুদের উপরেও করে থাকে।

স্বদেশের মুসলমানদের উপর ইসলামী রাষ্ট্রের নামে এমন আক্রমণ জাস্টিফাই করা হচ্ছে- এমনকি অন্যান্য ইসলামিক রাষ্ট্রের চোখেও, যাদের কাছে ইতোমধ্যেই পাকিস্তান সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে শুধু মাত্র সামরিক বীজয়ের পরে। এবং যেকোন সামরিক বীজয় রক্তক্ষয় কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিবে কারণ বহু দশকের সংগ্রামের পর আজ বাঙালিরা একজন মানুষের নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হয়েছে।

এসব থেকে ধারণা পাওয়া যায় পশ্চিম পাকিস্তানীরা পুড়িয়ে এবং গুলিকরে বাঙালিদের দমনের জন্য কতটা ঠাণ্ডা মাথায় হিসাব মিকাশ করেছে। যে রাতে ব্যাপক গণহত্যা শুরু হয় সে রাতে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বসে কিছু পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনৈতিক নেতা ব্যাক্তিগতভাবে এসকল প্রস্তাবনা দিয়েছেন।

Ref: দ্যা সান, বাল্টিমোর। রবিবার, এপ্রিল ৪, ১৯৭১

Translated by Mohammad Rashed Hasan

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!