You dont have javascript enabled! Please enable it!

মোশতাকের রাজনৈতিক পারিবারিক পরিচয় | কে ছিলেন খন্দকার মোশতাক

Note: এই লেখাটি ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের চারটি পত্রিকায় বাংলা ও ইংরেজিতে ছাপা হয়। সেটি হুবহু টাইপ করে আমাদের সংগ্রামের নোটবুক পাঠকের জন্য পড়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হল।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৯৪২ সাল হইতে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত। উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও প্রগতিশীল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের দায়ে বিভিন্ন সময়ে মোট ৭ বৎসরেরও অধিককাল তিনি কারাবরণ করেন। তাঁহার বর্তমান বয়স ৫৬ বছর।
খন্দকার মোশতাক ১৯১৯ সালে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির দশপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁহার পিতা-মাতার চতুর্থ পুত্র। তাঁহার পিতা মরহুম আলহাজ্ব খন্দকার কবিরউদ্দিন আহমদ (পীর সাহেব) তৎকালে প্রখ্যাত পীর ছিলেন। মাতা মরহুমা রাবেয়া ছিলেন ধর্মপ্রানা এবং সকলের শ্রদ্ধেয়া।

খন্দকার মোশতাক আহমদ শৈশবে কলিকাতার খিদিরপুর একাডেমীতে শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে এল এল বি লাভ করেন। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবলম্বন করেন এবং ১৯৪৬ সালে তাঁহাকে কুমিল্লা জেলে আটক করা হয়। বাংলা ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানী খন্দকার মোশতাক আহমদ ভাষা আন্দোলন কমিটির একজন সদস্য ছিলেন এবং এই জন্যই ১৯৫২ সালে তাঁহাকে কারাগারে আটক করা হয়।

তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। উপমহাদেশের বিভক্তির পর অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলের প্রথম উপ-নির্বাচনে তিনি নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁহাকে টাঙ্গাইলে গ্রেফতার ও আটক করা হয়।

১৯৫৪ সালে খন্দকার মোশতাক আহমদ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৯২ ক ধারা জারির পর তাঁহাকে আবার কুমিল্লা জেলে আটক করা হয়। মুক্তিলাভের পর তিনি যুক্তফ্রন্ট সংসদীয় দলের চীফ হুইপ নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পর পাকিস্তানে সকল রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং খন্দকার মোশতাক আহমদকে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কারাগারে আটক করা হয়।

১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হইলে খন্দকার মোশতাক আহমদ আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৬-দফা কর্মসূচীর পক্ষে জনগণকে উদ্বুদ্ধ এবং দেশব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৯৬৬ সালে ব্যাপক প্রচার অভিযান শুরু করেন। এই সময় তাঁহাকে পাবনা, রাজশাহী ও ঢাকা জেলে আটক রাখা হয়।

৩ বৎসর কারাগারে আটক থাকার পর ১৯৬৯ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন। সেই বছর আইয়ুব খানের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ সংগ্রাম পরিচালনার জন্য পাকিস্তানের ৮ টি রাজনৈতিক দল ‘গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ’ (ডাক) গঠন করে। খন্দকার মোশতাক আহমদ পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হিসাবে তিনি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি কুমিল্লার দাউদকান্দি-হোমনা নির্বাচনী এলাকা হইতে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁহার প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

ঢাকা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিমকোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী খন্দকার মোশতাক আহমদ দুইবার পাকিস্তান বার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। ইহার মধ্যে একবার তিনি জেলে আটক ছিলেন।


খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতা আন্দোলনকালে তিনি মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।

সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে খন্দকার মোশতাক আহমদ বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন। খন্দকার মোশতাক আহমদ কুমিল্লার দাউদকান্দি নির্বাচনী এলাকা হইতে পুনরায় জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি প্রথমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ ও বিদ্যুৎ দফতরের মন্ত্রী এবং পরে বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
খন্দকার মোশতাক আহমদ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
বিবরণ বাসস এর।

References:

দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ আগস্ট, পাতা ১ কলাম ৮ এবং পাতা ৮ কলাম ৪-৬
Bangladesh Observer, 17th August 1975, page 1 column 7 and page 8 column 4
Bangladesh Times, 17th August 1975, page 8 column 8
Dainik Bangla, 17th August 1975, page 1 column 1-2 and page 7 column 5

Unicoded by Dr Razibul Bari

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!