You dont have javascript enabled! Please enable it! 1972 | বঙ্গবন্ধুর আমলে বিডিআর ও সেনাবিদ্রোহ - সংগ্রামের নোটবুক

বঙ্গবন্ধুর আমলে বিডিআর ও সেনাবিদ্রোহ

‘৭২ সালের এপ্রিল মাসে পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস বাহিনীর সৈনিক এবং জুনিয়র কমিশন্ড অফিসাররা (জেসিও) সরকারের কাছে দাবি জানাল তারা সেনাবাহিনী থেকে আসা অফিসারদের গ্রহণ করবে না। বিডিআরে কর্মরত সৈনিকদের মধ্য থেকেই অফিসার নিয়ােগ দিতে হবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করে অতি কষ্টে এ বিদ্রোহ সামাল দিতে হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে এ রকম দাবিকে কেন্দ্র করেই ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিলখানায় বিডিআর সৈনিকেরা বিদ্রোহ করে এবং ৫৭ জন কৃতী সেনা অফিসারকে হত্যা করে।
১৯৭২-এর মে মাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে সাধারণ সৈনিকেরা বিদ্রোহ করে বসেন। তারা অফিসারদের কমান্ড মানতে অস্বীকৃতি জানান। বিমানসেনাদের শতকরা ৯০ জনই মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মাত্র গুটিকয় অফিসার (পাইলট) এয়ারবেস থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেন এবং প্রশংসনীয় বীরত্বের পরিচয় দেন। বিমানবাহিনীতে স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ছিল খুবই কম। ফলে সৈনিকেরা অধিকাংশই অলসভাবে সময় পার করছিলেন। এঁদের অনেকেই অবসর সময়ে ইন্টারমিডিয়েট, গ্র্যাজুয়েশন এবং মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং নিজেদের অফিসারদের চেয়ে যােগ্যতর ভাবতে শুরু করেন। পৃথিবীর সব সামরিক বাহিনীতে অফিসার শ্রেণির সুযােগ-সুবিধা সাধারণ সৈনিকদের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাধারণ সৈনিকেরা অফিসারদের সমান কিংবা কাছাকাছি। সুযােগ-সুবিধা (বেতন, ভাতা ইত্যাদি) দাবি করেন, যা সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বিমানবাহিনীপ্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার বীর উত্তম অনন্যোপায় হয়ে বিদ্রোহ দমনের জন্য সরকারের শরণাপন্ন হন।
সরকার সেনাবাহিনীকে বিমানসেনাদের বিদ্রোহ দমন করার নির্দেশ দেয়। সেনাবাহিনী প্রধান এ বিদ্রোহ দমনের জন্য ১ম ইস্ট বেঙ্গলকে দায়িত্ব দেন। আমি দুটি কোম্পানি নিয়ে ঢাকা এয়ারবেসে প্রবেশ করে বিদ্রোহী বিমানসেনাদের নিরস্ত্র করি। এয়ার চিফ খন্দকার অত্যন্ত মৃদুভাষী, অমায়িক ভদ্রলােক। তাকে অফিসে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করলে তিনি বারবার। আমাকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন, আমি যেন বিমানসেনাদের সঙ্গে সদয় আচরণ। করি। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে আমরা কঠোর হব না। কয়েক শ বিদ্রোহী বিমানসেনাকে গ্রেপ্তার করে ক্যান্টনমেন্টে একটি সুরক্ষিত বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীকালে সরকার বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে এবং অল্প কয়েকজন ছাড়া সবাই চাকরি ফিরে পায়। কিন্তু চাপা ক্ষোভ থেকেই যায় এবং পরবর্তীকালে ১৯৭৭ সালে বেশ কয়েকজন অফিসার বিমানসেনাদের সশস্ত্র বিদ্রোহে নিহত হন। [1, pp. 125–126]

References:
[1] হাফিজ উদ্দিন, সৈনিক জীবন গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পচাত্তর [Military life, seventy one the pride, seventy five the blood bath], 1st ed. Prothoma, 2020.