You dont have javascript enabled! Please enable it!

যুদ্ধের পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়ে গেলেও সংখ্যাটা বাড়তে লাগলো!

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই জনযুদ্ধ, মুক্তিবাহিনী জনগণের মধ্য থেকে উঠে আসা গণবাহিনী। শতকরা ৯০ জনই ছিল সহজ-সরল স্বল্প শিক্ষিত গ্রামীণ যুবক। এদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। বিজয়লাভের কিছুদিনের মধ্যেই হাইজ্যাক হয়ে গেল তাদের গৌরবগাথা। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থানকারী অনেক রাজনীতিক যুদ্ধজয়ের কৃতিত্ব দাবি করেন। শহরাঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলাে যারা চালু রেখেছিলেন, সেসব বুদ্ধিজীবীর অনেকে মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের অংশীদার হলেন।
প্রকৃত মুক্তিযােদ্ধাদের অধিকাংশই অস্ত্র জমা দিয়ে পূর্বতন পেশায় ফিরে যান। ছাত্ররা স্কুল-কলেজে তাদের শিক্ষা সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়। অস্ত্র জমা নেওয়ার পর মুক্তিযােদ্ধারা কিছুটা হতােদ্যম হয়ে পড়েন। অসংখ্য ভুয়া মুক্তিযােদ্ধার দাপটে তারা ক্রমেই লােকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধে অবশ্যই দেশের অধিকাংশ মানুষের সমর্থন ছিল, সে কারণেই স্বাধীনতাসংগ্রাম সফল হয়েছে। তবে সশস্ত্র সংগ্রামে যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কারও তুলনা হতে পারে না। তারাই জাতির সূর্যসন্তান। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে অস্ত্রধারী যােদ্ধার সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ হাজার, ‘৭২-এর মার্চ-এপ্রিলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াল প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজারে। আজ অবধি এ সংখ্যাবৃদ্ধি কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। মুক্তিযােদ্ধাদের শতকরা ৯০ জনই ছিল দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উদ্ভূত। গুলশান-বনানীর বাসিন্দারা নিজেদের সযত্নে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। এঁরা কেউ কেউ পাদপ্রদীপের আলােয় উদ্ভাসিত হয়েছেন যুদ্ধজয়ের পরবর্তী সময়ে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অধিকাংশই সামরিক বাহিনীর কিংবা দু-এক মাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিফৌজের সদস্য। এরা প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা এবং এরাই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ। এঁদের মৃত্যুতে পরিবার সীমাহীন দুরবস্থার মধ্যে নিপতিত হয় এবং দীর্ঘদিন অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটায়। তাদের দুর্দশার অবসান ঘটানাের জন্য তেমন। কোনাে জাতীয় প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায়নি বহু বছর ধরে। আপনজনকে চিরতরে হারানাের বেদনা অবর্ণনীয়। ১ম ইস্ট বেঙ্গল মুক্তিযুদ্ধে ১০০ সৈনিক এবং ৩ জন অফিসারকে হারিয়েছে। সৈনিকেরা

অতিসাধারণ পরিবারের সদস্য। এসব অনেক পরিবারের পক্ষে শহীদের খোঁজখবর পাওয়াও কষ্টসাধ্য ছিল। ‘৭২-এর গােড়ার দিকে আমরাই পরিবারকে চিঠি দিয়ে তাদের মৃত্যুর খবর জানাই। তাদের দরিদ্র পিতামাতা ঢাকা সেনানিবাসে এসে উপস্থিত হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এদের সান্ত্বনা জানানাের ভাষা আমাদের জানা ছিল না, ছিল না তাদের হাতে তুলে দেওয়ার মতাে সম্পদ কিংবা সাহায্য। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এরা সরকার থেকে পেনশন পেত মাত্র ১০০ থেকে ২০০ টাকা। অথচ এদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত রাষ্ট্রের বহু ভাগ্যবান নাগরিক মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার জমা করতে পেরেছেন বিদেশি ব্যাংকে। [1, pp. 117–118]

References:

[1] হাফিজ উদ্দিন, সৈনিক জীবন গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পচাত্তর [Military life, seventy one the pride, seventy five the blood bath], 1st ed. Prothoma, 2020.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!