You dont have javascript enabled! Please enable it! ৭০ এর ঘুর্ণিঝড়ে পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা - সংগ্রামের নোটবুক

৭০ এর ঘুর্ণিঝড়ে পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা

পাকিস্তান অর্জনের পরপরই বাঙালিদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। ভাষার দাবি, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি, গণতন্ত্রের দাবি প্রতিনিয়ত উপেক্ষিত হয়। চেপে বসে সামরিক শাসন। পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের কলােনিরূপে শাসিত হতে থাকে। অধিকারবঞ্চিত মানুষ স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়। সােনার বাংলা শ্মশান কেন?’ শিরােনামে একটি প্রচারপত্র বাঙালিদের জাগিয়ে তােলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ স্বাধিকার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তােমার আমার ঠিকানা – পদ্মা, মেঘনা, যমুনা’, ‘ঢাকা না পিন্ডি—ঢাকা, ঢাকা’–এ ধরনের স্লোগান অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা লাভ করে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে প্রদত্ত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য জনগণ ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য গড়ে তােলে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতারূপে গণ্য করেন। পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত গােয়েন্দা বিভাগ ইয়াহিয়াকে ধারণা দেয় যে দুই প্রদেশ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হতে পারবে না।
পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে, এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলে ১২ নভেম্বর আঘাত হানে এক ভয়াবহ জলােচ্ছ্বাস। ভােলা ও পটুয়াখালীর নিম্নাঞ্চলে অন্তত চার লাখ মানুষ নিহত হয়। ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসল হারিয়ে অগণিত মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। সেকালে রাস্তাঘাট ও টেলিযােগাযােগব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল এবং নিম্নমানের। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহ করতেই কেন্দ্রীয় সরকারের এক সপ্তাহের বেশি সময় কেটে গেল । ১০-১২ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কিংবা সরকারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা কেউ দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে আসেননি। সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলাে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া চীন সফর শেষে ঢাকা হয়ে রাজধানী পিন্ডিতে উড়ে গেলেন, কিন্তু দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে গেলেন না। দেশের এই অঞ্চলের মানুষের প্রতি কী নিদারুণ অবহেলা, অমানবিক আচরণ। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সহায়-সম্বলহীন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা চরমে পৌছায়। বয়ােবৃদ্ধ মওলানা ভাসানী দুর্যোগকবলিত এলাকা পায়ে হেঁটে পরিদর্শন করে এসে পল্টন ময়দানে এক

জনসভায় তাঁর সেই বিখ্যাত বা বহুল প্রচারিত খেদোক্তিটি করেন, ‘ওরা কেউ আসেনি। আমারও জনা বিশেক নিকটাত্মীয় ভােলার সেই ভয়াবহ জলােচ্ছাসে প্রাণ হারান। আমার পিতা লালমােহন উপজেলায় নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন, ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আমি চার দিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি লালমােহনে যাই। রাস্তায়, খেতে, নদী-নালায় তখন অগণিত লাশ ভেসে আসছে। স্মরণকালের এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলা দেখে হতবাক হয়ে পড়ি।
১২ নভেম্বরের ধ্বংসলীলার বিবরণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রসমূহ রিলিফ টিম পাঠাতে থাকে উপকূলীয় অঞ্চলে। সরকার অবশেষে ত্রাণকার্যে সেনাবাহিনী নিয়ােগ করে। সিঙ্গাপুর থেকে হেলিকপ্টার বহর নিয়ে এল ব্রিটিশ আর্মির রয়্যাল মেরিন কমান্ডাে দল । আমার পল্টন ১ম ইস্ট বেঙ্গল পটুয়াখালী জেলার ত্রাণকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পেল। ডিসেম্বরের গােড়ার দিকে আমি ‘বি’ কোম্পানি নিয়ে গলাচিপা থানায় ত্রাণকার্যে আত্মনিয়ােগ করি। সঙ্গে আমার কোম্পানি অফিসার সেকেন্ড লে. শফি ওয়াসিউদ্দিন, জিএইচকিউতে কর্মরত লে. জেনারেল খাজা ওয়াসিউদ্দিনের পুত্র। এঁরা ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য। শফি কিছুটা পাগলাটে ধরনের তরুণ। কীভাবে কমিশন পেলেন, এটাই আশ্চর্যের বিষয়। সম্ভবত তাঁর ক্ষমতাবান পিতা এ ক্ষেত্রে কলকাঠি নেড়েছেন। পুরুষানুক্রমে ঢাকার বাসিন্দা। হলেও তাঁরা বাঙালি বলে পরিচয় দিতেন না, নিজেদের কাশ্মীরি বলে জাহির করতেন। খাজা ওয়াসিউদ্দিন আর্টিলারি কোরে সাধারণ মানের অফিসার ছিলেন, পিতা খাজা শাহাবুদ্দিন আইয়ুব খানের ক্যাবিনেটে প্রভাবশালী মন্ত্রী থাকায় এবং পারিবারিক প্রভাবে জেনারেল পদে অভিষিক্ত হন। | লে. কর্নেল জলিল পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে ত্রাণকার্য পরিচালনা করেন। সাহায্যকারীরূপে সঙ্গে রয়েছেন অ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন নিসার। আমার সঙ্গে তাঁদের যােগাযােগের মাধ্যম জিআরসি-৯ বেতারযন্ত্র । টেলিফোন-সংযােগ নির্ভরযােগ্য নয়, চিৎকার করে কথা বলতে হয়। গলার স্বর আরেকটু উচু করতে পারলে সম্ভবত টেলিফোন ছাড়াই পটুয়াখালীতে শােনা যেত। জেলা সদরের সঙ্গে সেকালে সড়কপথে যােগাযােগ সম্ভব ছিল না, লঞ্চ ও নৌকাই ছিল প্রধান অবলম্বন। গলাচিপা হাইস্কুলের ক্লাসরুমে আমার সৈনিকেরা অবস্থান করছে, আমি স্কুল প্রাঙ্গণে একটি তাঁবুতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। স্কুল প্রাঙ্গণে অন্য একটি তাঁবুতে ব্রিটিশ রয়্যাল মেরিনের একটি প্লাটুন ডেরা গেড়েছে। এদের অধিনায়ক লে. রবার্টের সঙ্গে দুই দিনেই অন্তরঙ্গতা জমে ওঠে।
ব্রিটিশ হেলিকপ্টারে চড়ে আমি ও রবার্ট প্রায় প্রতিদিনই বিশাল আগুনমুখা

নদী পেরিয়ে উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহে ত্রাণসামগ্রী পৌছে দিই। তখনাে উপকূলে বহু আদম সন্তানের লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। মানুষ ও গবাদিপশুর মৃতদেহ পচে ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্পিডবােটে চড়ে বিভিন্ন দ্বীপে গিয়ে আমাদের সৈনিকেরা এসব দেহাবশেষ মাটিচাপা দিচ্ছে।
পটুয়াখালীর সাধারণ মানুষ ১৯৭০ সালের আগে হেলিকপ্টার দেখার সুযােগ পায়নি। হাজার হাজার মানুষ এই অদ্ভুত বস্তু দেখার জন্য হেলিপ্যাডে প্রখর রােদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে। বারবার দেখেও তাদের আশ মেটে না। রবার্ট আমাকে একদিন বলে, এরা তাে হেলিকপ্টারের ওঠানামা দেখেছে। এখনাে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন? এদের কোনাে কাজ নেই?
| ‘এসব হতদরিদ্র মানুষের জীবনে কোনাে বিনােদন নেই, সুতরাং লেট দেম এনজয়, আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর ।।
আমি প্রতিদিনই গলাচিপা থানার বিভিন্ন এলাকায় স্পিডবােট নিয়ে ত্রাণ তৎপরতা তদারক করছি। একদিন সকালে পটুয়াখালীতে অবস্থিত ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার থেকে অ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন নিসার আমাকে ফোন করেন। ইংরেজি ভাষায় কথােপকথন এ রকম : | ‘হ্যালাে হাফিজ, খবরটবর কী? সব ঠিকঠাক চলছে তাে?’ বললেন নিসার।।
ইয়েস স্যার, সবকিছুই ঠিকমতাে চলছে। | ‘আচ্ছা, বরিশালে কি কালাে কুকুর পাওয়া যাবে?
কালাে কুকুর তাে সবখানেই পাওয়া যায়। রিলিফ ওয়ার্কে কালাে কুকুরের প্রয়ােজন কেন?
| ‘হা হা হা ইয়ার, এত দেশ-বিদেশ ঘুরেও ফুটবল ছাড়া কিছুই চিনলে না তুমি। আরে, ব্ল্যাক ডগ হলাে একপ্রকার হুইস্কির নাম। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রিয় ড্রিঙ্ক হলাে এটি। তিনি আগামী পরশু সকালে তােমার এলাকায় আসবেন। ত্রাণকার্য পরিদর্শনের জন্য। দুপুরে লাঞ্চ করবেন আমাদের সঙ্গে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে। এখানে তাকে ব্ল্যাক ডগ সার্ভ করা হবে।’
শুনে অবাক হলাম। একে তাে দেরি করে এসেছেন প্রেসিডেন্ট, উপরন্তু ভয়াবহ দুর্যোগকবলিত এলাকায় এসে দিনের বেলা প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে তার কোনাে সংকোচ নেই! বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে হারিয়েছি মহাপ্লাবনে, মনটা বিষন্ন ছিল। ক্যাপ্টেন নিসারকে বললাম, ‘ব্ল্যাক ডগের খালি বােতলটা ইয়াহিয়ার শরীরে প্রবিষ্ট করালে কেমন হয়? ‘মন্দ হয় না, গুড আইডিয়া, নিসারের মন্তব্য। দুদিন পর চরকাজলে আমরা মানুষ ও গবাদিপশুর মৃতদেহ মাটিচাপা

দিচ্ছি, এ সময় হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া । সঙ্গে একঝক উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা। বাঙালি ব্রিগেডিয়ার মজিদ-উল-হকও ছিলেন। সিও লে. কর্নেল জলিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন যে হাফিজের বাড়ি ভােলায়, সে বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছে মহাদুর্যোগে। আমি আমাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে প্রেসিডেন্টকে জানালাম।
হেলিকপ্টার দেখে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষ ছুটে এল খাদ্যপ্রাপ্তির আশায়। খাদ্য নয়, তারা পেল বক্তৃতা, তা-ও উর্দু ভাষায়। এক বৃদ্ধ কান্নাকাটি করে তার স্বজন হারানাের ব্যথা প্রেসিডেন্টের কাছে ব্যক্ত করেন। তিনি ঘর্মাক্ত কলেবর, কিছুটা বিরক্ত হয়ে আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেন, তুমি এই ওল্ডম্যানকে বলাে, তুমি কতজন নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছ? আমি বৃদ্ধকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, “চাচা মিয়া, দুঃখ করবেন না, আমিও আপনার মতাে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। প্রেসিডেন্ট বললেন, কান্নাকাটি করে লাভ নেই, মনে ফুর্তি রেখে কাজ করাে। ভাতের বদলে রুটি খেলে। দেহে শক্তি পাবে। ব্রিগেডিয়ার মজিদ তাঁর বক্তব্য বাংলায় তরজমা করলেন। একটু পরই প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টারে চড়ে বিদায় হলে হতাশ বৃদ্ধের উক্তি আমার আজীবন মনে থাকবে। তার জিজ্ঞাসা, এই হালারা কারা?’ চকিতে আমার মনেও প্রশ্ন জাগল, তাই তাে, এরা কারা? জনগণ এদের ভাষা বােঝে না, ক্ষয়ক্ষতির এত দিন পর এসে সমবেদনা জানানাে তাে দূরের কথা, উল্টো হম্বিতম্বি করে গেলেন। এঁরাই রাষ্ট্রের কর্ণধার! বন্দুকের জোরে প্রেসিডেন্ট হয়ে বেতারে ভাষণ দেন, ‘জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। সুদূর রাজধানীতে বসে হুইস্কির গ্লাস হাতে দুঃখী জনগণের ভাগ্য | নির্ধারণ করেন। দুর্যোগকবলিত মানুষের প্রতি সীমাহীন অবহেলার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হয় এবং সামরিক জান্তার অমানবিক আচরণের প্রতিবিধান করার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও আমূল বদলে যায়।
পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্টের ভােজন হলাে খাসা, কালাে কুকুর’ও জোগাড় করা হয়েছে ঢাকা থেকে। খাদ্য ও পানীয়ের ব্যয় বহন করা হয়েছে দুর্যোগকবলিত মানুষের জন্য প্রদত্ত রিলিফ ফান্ড থেকে। ইয়াহিয়া রাতে ত্রাণকার্যের অগ্রগতি সম্পর্কে রেডিওতে ভাষণ দিলেন, একপর্যায়ে বললেন, সেনাবাহিনীর লে. হাফিজ বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয় হারানাের পরও উপদ্রুত এলাকায় রিলিফ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। প্রেসিডেন্টের মুখে আমার মতাে অভাজনের নাম! বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা চিঠির মাধ্যমে আমার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সিভিল

অ্যাওয়ার্ড ‘তমঘা-ই-খেদমত’-এর জন্য আমার নাম সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানাে হলাে।
জলােচ্ছ্বাস-কবলিত উপকূলীয় এলাকার ৯টি আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হলাে। ৭ ডিসেম্বর যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলাে। ক্ষমতাসীন জান্তার হিসাবনিকাশ ভন্ডুল করে আওয়ামী লীগ সারা দেশে ১৫১টি আসনে জয়লাভ করে। ১৭ জানুয়ারি ‘৭১ উপকূলীয় এলাকার ৯টি আসনেও সহজেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হলেন। ভােলায় জাতীয় সংসদের দুটি আসন, এমএনএ নির্বাচিত হলেন আমার পিতা এবং প্রখ্যাত ছাত্রনেতা তােফায়েল আহমেদ। | পূর্ব পাকিস্তানে দুটি ছাড়া সব কটি আসনে (১৬০টি) বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ। এ দল পশ্চিম পাকিস্তানে কোনাে আসন পায়নি। অপর দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে সর্বাধিক (৮১টি) আসনে বিজয়ী হয় জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি। পূর্ব পাকিস্তানে এ দল কোনাে আসনে প্রার্থীই দিতে পারেনি। সাধারণ নির্বাচনের আগে এবং অব্যবহিত পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘােষণা করেন যে নির্বাচিত সরকারের কাছে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং একপর্যায়ে শেখ মুজিবকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলে আখ্যায়িত করেন। ভুট্টো আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তরের বিরােধিতা করেন এবং তার প্ররােচনায় ইয়াহিয়া এবং সামরিক জান্তা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকেন। ৩ মার্চ ‘৭১ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে ইয়াহিয়া ঘােষণা করেছিলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের পিপলস পার্টি ছাড়া অন্যান্য দলের কয়েকজন নবনির্বাচিত এমএনএ ঢাকায় অধিবেশনে যােগদানের জন্য উপস্থিতও হয়েছিলেন। এ সময় ভুট্টোর কুমন্ত্রণায় বিভ্রান্ত হয়ে ইয়াহিয়া জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করেন। ফলে সারা পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে। [1, pp. 70–74]

Reference:

[1] হাফিজ উদ্দিন, সৈনিক জীবন গৌরবের একাত্তর রক্তাক্ত পচাত্তর [Military life, seventy one the pride, seventy five the blood bath], 1st ed. Prothoma, 2020.