You dont have javascript enabled! Please enable it!

বঙ্গবন্ধুকে দাফন করার ব্যাপারে মোশতাক 

দিনের প্রথম দিকে (১৫ আগস্ট) আমি (কে এম শফিউল্লাহ) খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সমাধিস্থ করার ব্যাপারে তার মত জানতে চেয়েছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করার কারণ ছিলো সমাধির স্থান জানার জন্য। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর কবর কি নতুন পার্লামেন্ট বিল্ডিং এর প্রাঙ্গণে হবে নাকি পুরাতন হাই কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় হবে (যেখানে জাতীয় চার নেতার সমাধি)। খন্দকার মোশতাককে যখন আমি এই প্রশ্ন করেছিলাম তখন এয়ার চীফ এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারও ছিলো। আমাকে অবাক করে দিয়ে খন্দকার মোশতাক রেগে উঠল এবং বলল, “প্রতিদিন কত লোকই তো মরে, সেসবের দেখভাল কি আমি করব? তাকে ঢাকা বাদে সেখানে খুশি সেখানে কবর দাও।”
খন্দকার মোশতাকের এই মন্তব্যে আমি কী প্রতিক্রিয়া দেখাব বুঝতে পারছিলাম না। আমি একদম বধির হয়ে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু যে সে কোন ব্যক্তি নন যে তাঁকে যেকোন স্থানে কবর দেয়া হবে। এসবের বাইরেও তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট এবং রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপ্রধানকে সমাধি দেবার সময় অনেক নিয়ম কানুন মানতে হয়। যেভাবেই তার মৃত্যু হোক না কেন সঠিক নিয়ম মেনেই আমাদের উচিৎ তাঁকে সমাধিস্থ করা এবং প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ পালন করা। প্রেসিডেন্টের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের অন্যতম হচ্ছে গান ক্যারিয়েজে করে তার কফিন বহন করে নিয়ে আসা এবং গার্ড অব অনার দেয়া, ইত্যাদি। খন্দকার মোশতাক এসব তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জন্য করতে চাচ্ছিলনা। সে চাচ্ছিল যেন ঢাকা বাদে যে কোন জায়গায় কবর দেয়া হয়। খন্দকার মোশতাকের এই আচরণ দেখে আমি এয়ার চীফ এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকারের দিকে তাকালাম। সে সামান্য একটু হা সূচক মাথা নাড়ল – যার অর্থ আমাদের জিনিসটা দেখতে হবে। আজকের দিন পর্যন্ত আমি নিজেকে অভিশাপ দেই এটা ভেবে যে কেন আমি খন্দকার মোশতাকের কাছে সমাধিস্থ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম?
আমরা কী করতে পারতাম? খন্দকার মোশতাক চাচ্ছিলনা যে প্রেসিডেন্টকে ঢাকায় সমাধিস্থ করা হোক। আর আমরাও জাতির পিতাকে যেখানে খুশি সমাধিস্থ করতে পারিনা। তাই সিদ্ধান্ত হল বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর নিজ গ্রামে তাঁর পিতার কবরের পাশে সমাধিস্থ করা হবে। খন্দকার মোশতাক যে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকার বাইরে কবর দিতে বলবে সেটা আমার ধারণারও বাইরে ছিলো। বঙ্গবন্ধুর সাথে তার (মোশতাকের) মতের অমিল থাকতেই পারে, কিন্তু তিনি (বঙ্গবন্ধু) মারা যাবার পরে লাশের সাথে নিশ্চই নয়। যদি এরকম সামান্যতম চিন্তাও আমার মাথায় আসতো আমি মোটেও তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতাম না। সমস্যাটা তখনই হল যখন আমি খন্দকার মোশতাকের কাছে সমাধির ব্যাপারে সুনির্দিস্ট নির্দেশনা চাইলাম। কতোটা বিদ্বেষপূর্ণ মানুষ ছিলো সে!
দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু তার সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চুড়া এই ঢাকায় হলেও আমরা এতোটাই অকৃতজ্ঞ যে তাঁকে রাজধানীতে শেষ বিশ্রামটুকু নিতে একটু জায়গা দিতে পারলাম না। খন্দকার মোশতাকের জন্য এটা করা গেলনা। খন্দকার মোশতাক কতোটা নির্দয় ও হৃদয়হীন ছিলো! রাজনীতি কতোটা আশ্চর্যের, কতোটা নিষ্ঠুর এবং কতোটা অমানবিক। বঙ্গবন্ধুর জন্য আমার খারাপ লাগে যে খন্দকার মোশতাকের মত কপটকে তিনি চিনতে পারেননি এবং তাকে (মোশতাক) তাঁর ঘনিস্ট বন্ধু মনে করতেন। কিছুক্ষণের ভেতর এয়ার ভাইস মার্শাল খন্দকার একটি হেলিকপ্টার যোগাড় করলেন এবং আর্মি থেকে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ একটি কন্টিনজেন্ট প্রস্তুত করে প্রেসিডেন্টের লাশের সাথে টুঙ্গিপাড়ায় কবর দিতে পাঠানো হল। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পিতার কবরের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। আমাকে বলা হয়েছিলো যে কবর দেবার পূর্বে সব ধরণের ধর্মীয় আচার পালন করা হয়েছিলো। বাকিদের ব্যাপারে জেনেছি, তাদের সবাইকে বনানী গোরস্থানে কবর দেয়া হয়েছে।

Ref: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC (অনুবাদ)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!