You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সকাল থেকেই কারফিউ। বিকাল নাগাদ টুঙ্গীপাড়ার আকাশে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার এল। এর আগেও অনেকবার টুঙ্গীপাড়ার লােকজন হেলিকপ্টার নামতে দেখেছে। প্রতিবারই হাজার হাজার লােক টুঙ্গীপাড়ার কৃতীসন্তান শেখ মুজিবকে এক নজর দেখার জন্য দৌড়ে গেছে। কিন্তু এবার? কারফিউ-এর ভয়ে কেউই আর ঘর থেকে বেরুতে সাহসী হলাে না। বাংলাদেশ বেতারে তখন পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার গান আর মাঝে মাঝে সরকারি নির্দেশ ঘােষণা হচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে ধীরে ধীরে বাংলার অগ্নিপুরুষ ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকে তার জন্মভূমিতে নামানাে হলাে। কিন্তু তিনি আর জীবিত নেই। এবার টুঙ্গীপাড়ায় নামলাে একটা বস্তাবন্দি লাশ। হেলিকপ্টারে লাশের সঙ্গে যেসব সিপাহী এসেছিল তাদেরই দু’জন বেরিয়ে গেল মওলবীর খোঁজ করতে। আর উন্মুক্ত আকাশের নিচে বস্তাবন্দি বঙ্গবন্ধুর লাশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ে সবুজ ঘাস ভিজে উঠল। বাতাসের মর্মর ধ্বনিতে, মনে হলাে বজ্রকণ্ঠের সেই প্রতিধ্বনি, “রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরাে দেবাে…. এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বাে, ইনশাল্লাহ।”

সিপাহীরা টুঙ্গীপাড়া মসজিদের ইমাম সাহেবকে হাজির করলে মেজর সাহেব নির্দেশ করলেন মিনিট দশ-পনেরাের মধ্যে গােরস্থানে লাশটা দাফনের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করতে হবে। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে ইমাম সাহেব স্বীয় অপরাগতা জানালেন। বিনীতভাবে বললেন, মুসলমানের লাশ গােসল ও কাফনের পর জানাজা নামাজ ছাড়া দাফন করা সম্ভব নয় বলে ক্ষমাপ্রার্থী। এরপর মেজর সাহেবের সম্মতি পেয়ে ইমাম সাহেব স্থানীয় মাদ্রাসার কয়েকজন তালেবেলেম ডেকে আনলেন। রক্তাক্ত লাশটা গােসল করিয়ে কাফন পরানাের পর ছােট্ট অথচ ঐতিহাসিক জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হলাে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বিকেলের পড়ন্ত রােদে টুঙ্গীপাড়ায় দাফন হলাে বাংলার নয়নমণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। লােকালয়ের কল-কোলাহল থেকে বহু দূরে নদীমাতৃক গ্রাম বাংলার এক নিভৃত কোণে এই টুঙ্গীপাড়া গ্রাম। পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতির ছােট শাখানদী বাঘিয়া। মাত্র মাইল ছয়েক দূরে মূল মধুমতি নদী। এটাই হচ্ছে জেলার শেষ সীমানা। ওপারে খুলনা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই টুঙ্গীপাড়া গ্রামে বাংলা ১৩২৭ সালের ভরা বসন্তে ৩রা চৈত্র (১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ) মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টায় যে শিশুর জন্ম হয় এবং যিনি পরবর্তীকালে স্বীয় কর্মদক্ষতায় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের স্রষ্টা ও জাতির পিতা হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন, মাত্র সাড়ে ৫৫ বছর বয়সে (৫৫ বছর ৫ মাস ২৮ দিন) তার দাফন হলাে সেই টুঙ্গীপাড়াতেই। তিনি রইলেন চিরনিদ্রায় শায়িত। সপরিবারে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সময় বাংলাদেশে ছিলাম না। তাই সুদূর লন্ডনের বিবিসি রেস্টুরেন্টে বসে সেদিন তন্ময় হয়ে শুনলাম এই মহান নেতার দাফনের করুণ কাহিনী।
সূত্রঃ মুজিবের রক্ত লাল – এম আর আখতার মুকুল
Unicoded by সংগ্রামের নোটবুক

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!