১৯৬১ ও ১৯৬২ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করা হয়। ঐ সময় সংস্কৃতিকর্মীরা সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রবীন্দ্রশতবার্ষিকী পালন করেন। এ ঘটনা সংস্কৃতিসেবীতাে বটেই রাজনীতিবিদদেরও অনুপ্রাণিত করে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তান বা কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালিদের সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চাইছে।
এ সময় কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আন্দোলন নিয়ে সমঝােতা হয়। খােকা রায় লিখেছেন, আন্দোলনের অবস্থা বিরাজ করলেও কমিউনিস্ট পার্টির সামর্থ্য ছিল না একা আন্দোলন করার। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনে সাফল্যের সম্ভাবনা আছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যােগাযােগের জন্য জহুর আহমদ চৌধুরীকে অনুরােধ জানানাে হয়। তিনি আলাপ করেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে। ১৯৬১ সালের শেষের দিকে গােপন এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে ছিলেন মণি সিংহ ও খােকা রায়। আওয়ামী লীগের পক্ষে শেখ মুজিব ও মানিক মিয়া। দু’দলের মধ্যে সমঝােতা হয়েছিল এবং তা জানিয়ে দেয়া হয়েছিল পার্টির কর্মীদের।
“আন্দোলনের দাবী নিয়ে আলােচনার সময় শেখ মুজিবুর রহমান বারবার বলেছিলেন যে পাঞ্জাবের ‘বিগ বিজনেস’ যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে শােষণ করছিল ও দাবিয়ে রাখছিল তাতে, ওদের সাথে আমাদের থাকা চলবে না। তাই এখন থেকেই স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্যে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে; আন্দোলনের প্রােগ্রামে ঐ দাবী রাখতে হবে, ইত্যাদি।”৪
মণি সিংহ ও খােকা রায় বােঝালেন যে, সে পরিস্থিতি এখনও আসেনি। যখন আসবে তখন দেখা যাবে। মুজিব বললেন, “ভাই এবার আপনাদের কথা মেনে নিলাম। আমাদের নেতাও অর্থাৎ (সােহরাওয়ার্দী সাহেব) আপনাদের বক্তব্য সমর্থন করেন। তাই এখনকার মত সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমার কথাটা থাকলাে ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৬১ সাল থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।”৫
Ref:
৪. খােকা রায়, সংগ্রামের তিন দশক, ঢাকা, ১৯৮৬, পৃ. ১৮২-১৮৩।
৫. ঐ
৬ দফা স্বাধীনতার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু – মুনতাসীর মামুন, p 12