You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.24 | করাচিতে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বক্তৃতা - সংগ্রামের নোটবুক

করাচিতে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বক্তৃতা

প্রেসিডেন্টের সাংবাদিক সম্মেলন
তাং- ২৪ মে ১৯৭১

(নিম্নোক্ত সারাংশটি পাকিস্তান টাইমে প্রকাশিত প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের ৭২ মিনিট দীর্ঘ সাংবাদিক সম্মেলন হতে নেয়া হয়েছে।)

করাচি, মে ২৪ঃ প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আজ সাংবাদিক সম্মেলনে জানান যে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন।
আজ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান যে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই তার মুল লক্ষ্য এবং তিনি কখনই তার মুল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।
প্রেসিডেন্ট আরো জানান যে পূর্ব পাকিস্তানে যে বিদ্রোহ চলছে, তা তার ক্ষমতা হস্তান্তরে একটি বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছিল, যদিও তা ছিল একটি অস্থায়ী সমস্যা।
সেই সাথে তিনি বলেন যে গত দুই বছর ধরে চলমান পরিস্থিতিতে দেশে নির্বাচন দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিলো। তিনি বলেন- “আমি এই নির্বাচন ব্যর্থ হতে দিতে পারি না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসা মাত্রই আমি আমার লক্ষ্য পুরন করব। যদিও তিনি আবারো একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেন যে – “আমি কোন অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করবোনা।
এই ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টাতে কোনও পরিবর্তন ঘটেছে বা সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন- একজন সৈনিক হলে আপনি বুঝতে পারতেন যে সেনাবাহিনীতে লক্ষ্যপূরণ হল যুদ্ধের অন্যতম নীতি, এবং আমার লক্ষ্য এখনও আগের মতই অটুট আছে আর তা হল ক্ষমতার হস্তান্তর।
তিনি বলেন যে তিনি গত দুই বছর ধরেই এই কথা বলে আসছেন, কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করছে না। কিন্তু, তিনি এখনও এটি করার আশা করেন।
তিনি বলেন- এমনকি আমার নিজের অনেক জনগনের এই বিষয়টি পছন্দ নয়, কিন্তু তারপরো আমি এটা করবো, কেননা আমি তাদের সাথে একমত নই। আমার বিশ্বাস যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ক্ষমতার যোগ্য এবং তারা তা পাবে।

রাজনৈতিক বিদ্রোহঃ
তার ৭০ মিনিটের সাংবাদিক সম্মেলনের বেশিরভাগ সময়টিতেই প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানের ঘটে যাওয়া বিপর্যয় নিয়ে কথা বলেন। “পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে তা ছিল একটি বিশাল রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং ব্যাক্তিগতভাবে এই ঘটনা আমাকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন যে- সমগ্র জাতির জন্য আমি যে বিশয়গুলি পরিকল্পনা করেছিলাম এবং করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম, তা একটি বিশাল বড় বাধার মধ্যে পড়ে গিয়েছে এবং এটি আমার সরকার এবং আমার জন্য একটি প্রবল পরিতাপের বিষয়।
তিনি বলেন- দেশের পূর্বাংশের মানুষের জীবনেও এই অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্রোহের কারনে অনেক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে আমার ভবিষ্যত সকল পরিকল্পনার মূলে থাকবে আমার পূর্ব পাকিস্তানের নীরিহ মানুষগুলির জীবনযাত্রার উন্নয়ন।

প্রেসিডেন্ট বলেন- আমি বিশ্বাস করি যে এই মানুষগুলি নিরপরাধ।একইসাথে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার জন্য সারা পৃথিবীর কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যের আহবানের জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই সবাইকে। আমি এই আহবান গ্রহন করছি এবং সকল ধরনের সাহায্যকে স্বাগতম জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটেছে তা গত বছরের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং এটি হচ্ছে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় এবং এটি রাজনৈতিক পরিবেশের দারুন ক্ষতিসাধন করেছে।

যথেষ্ট পরিমান খাদ্যমজুদের নিশ্চয়তাঃ
রাষ্ট্রপতি আরো ঘোষণা দেন যে পূর্ব পাকিস্তানে আগামী তিন মাসের জন্য যথেষ্ট পরিমান খাদ্য মজুদ রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার ফলে খাদ্য কর্মসূচী বাধাগ্রস্ত হলেও তা আবারো চালু হচ্ছে। তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ ব্যাবস্থা পুনঃনির্মাণে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
পূর্ব পাকিস্তানের বিপর্যয় মোকাবেলায় বিশ্ববাসীর সাহায্য গ্রহন করার কথা আবারো উল্লেখ করে তিনি বলেন যে এ বিষয়ে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্ট এর সাথে কথা বলেন এবং তার কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্যের আবেদন জানান। তিনি আরো বলেন যে উ থান্ট তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানে কোন খাদ্যের ঘাটতি হবেনা। তিনি বলেন- “আমি কোন পাকিস্তানীকে অনাহারে মরতে দেবনা। তিনি আরো বলেন যে এছাড়াও আরো অনেক দেশ সাহায্যের আহবান জানিয়েছে, এবং তিনি কৃতজ্ঞতার সাথে তা গ্রহন করবেন।
তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানে গৃহহীন মানুষদের পুনর্বাসন করতে হবে। সবচেয়ে বেশি চিন্তার কথা এই যে, তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ কোষাগার এবং ব্যাংক লুট হয়েছে এবং এই বিপুল পরিমান অর্থ গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। আমাদের এই মুদ্রাস্ফীতি রোধ করতে হবে।

শরণার্থীঃ
ভারতীয় সীমান্তে শরণার্থীদের ঢল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রেসিডেন্ট বলেন যে আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক মানুষ হুজুগে পড়ে সীমান্তের ওপাড়ে চলে গিয়েছে। তিনি বলেন যে বিশ্বের দরবারে এই শরণার্থীর বিষয়টি একটি মুল আলোচ্য বিষয় হয়ে দারিয়েছে। তিনি বলেন যে শরণার্থীদের যেকোন সময়ে তাদের নিজ দেশে ফিরে আসার জন্য, নিজের ঘরে ফিরে আসার জন্য আহবান জানানো যাচ্ছে।
ভারতের বিষয়ে তিনি বলেন যে, তাড়া বিভিন্ন ছুতোয় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের অন্তর্বর্তী বিষয়ে নাক গলাচ্ছে, এবং তারা নাক না গলালেই বরং পরিস্তিতি আরো ভালোর দিকে এগোবে।
প্রেসিডেন্ট গত শুক্রবারে দেওয়া তার ঘোষনার আবারো পুনরাবৃত্তি করে বলেন যে সত্যিকারের পাকিস্তানী নাগরিকদের দেশে শান্তি এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসার সাথে সাথে গৃহে প্রত্যাবর্তন করা উচিত। তিনি বলেন, যেকোন পাকিস্তানী নাগরিক যারা চাপে পড়ে, হুমকির মুখে পড়ে অথবা সঙ্ঘাতের কারনে পাকিস্তান ছেড়েছেন তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত আনা হবে। কোন উপায়ে তাদের ফেরত আনা হবে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পাকিস্তানী নাগরিক কিনা তা অনুসন্ধান করার পরই তাদেরকে দেশে ফেরত নেয়া হবে।

ক্ষমাঃ
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আরো বলেন যে তিনি যারা পথভ্রষ্ট এবং ভুল নেতৃত্বের ফলে দেশে রাষ্ট্রের ক্ষতি করে এমন কর্মকাণ্ড সমর্থন বা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের ক্ষমা করে দিতে প্রস্তুত আছেন কিন্তু যারা দেশদ্রোহী এবং যারা লুটতরাজ, খুন-খারাবি ও ধর্ষণ চালিয়েছে, তাদের তিনি কখনই ক্ষমা করবেন না।
তিনি বলেন- প্রতিটি দেশেরই অধিকার আছে অপরাধীদের শাস্তি দাওয়ার এবং আমি তাদের ন্যায্য শাস্তি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবো।

নিষিদ্ধ দল আওয়ামীলীগের কেউ জাতীয় পরিষদে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে প্রেসিডেন্ট জানান, জনগন তাদের প্রতিনিধি হিসাবে ব্যাক্তিকে নির্বাচন করেছে, কোন দলকে নয়। তিনি বলেন, কাজেই আওয়ামীলীগ দল হিসেবে অকার্যকর থাকলেও দলের অন্তর্ভুক্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অবশ্যই জাতীয় পরিষদে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যদি না তাদেরকে অপরাধ কমিশন অযোগ্য বলে ঘোষণা না করে থাকে। যারা রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকান্ডের জন্য অপরাধ কমিশনে দোষী সাব্যাস্ত হয়েছেন তাদের এলাকায় পুনরায় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হবে। যদিও এই সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত নয়, কেননা তিনি এখনও এই বিষয়ে তার আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেননি বলে তিনি জানান। একি সাথে তিনি এ বিষয়েও জোর দেন যে একটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার তত্ত্বাবধানে এবং প্রতিটি পাকিস্তানীর এ বিষয়ে গর্ব হওয়া উচিত। তিনি কখনই এই নির্বাচন বিফলে যেতে দিবেন না।
নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগ এর শেখ মুজিব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন সময় হলে পাকিস্তান সরকার তার মুখোমুখি হবে এবং তার প্রাপ্য অংশ তাকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দাওয়া যুদ্ধের হুমকির কথা উল্লেখ করে পাকিস্তান ভারতের সাথে কোন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে কিনা তা জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট তা সম্পূর্ণভাবে উরিয়ে দেন এবং বলেন, আশা করি এমন কিছুই ঘটবে না। যুদ্ধ কখনই সমাধান হতে পারেনা। নিশ্চয়ই তিনিও (ইন্দিরা গান্ধী) তা মন থেকে চান না। পাকিস্তান সবসময়েই তার প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। যুদ্ধ কোন কিছুর সমাধান করতে পারেনা। আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই নতুন পলিসি চালু করবেন বলে জানান তিনি। আইনানুগ নীতিমালায় পরিবর্তন আসছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে।

সংবাদ মাধ্যমঃ
সংবাদমাধ্যমগুলির উপর আরোপিত সেন্সরশিপ তুলে দাওয়ার যে দাবি জনাব জুলফিকার আলি ভুট্টো তুলেছেন সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় এ সংবাদ সম্মেলনে। উত্তরে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া বলেন- বর্তমানে সংবাদপত্র গত দুই বছর ধরে সর্বাপেক্ষা স্বাধীন অবস্থায় আছে। তবে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে এ স্বাধীনতায় কিছুতা নিয়ন্ত্রন প্রনয়ন করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন- আমরা শুধু কিছু সাধারন নিয়মাবলী অনুসরন করতে বলেছি সংবাদ মাধ্যমগুলিকে। একি সাথে তিনি জানান যে বিদেশি সাংবাদিকদের সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগটি তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই নেয়া হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিব এবং নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ দল চেয়েছিল ঢাকা এবং চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট দখল করা এবং প্রেসিডেন্ট এবং তার সতীর্থদের গ্রেফতার করা। কিন্তু শেখ মুজিব ভুলে গিয়েছিল যে তারা এমন একটি সেনাবাহিনির মুখোমুখি হবে যারা দ্রুতগামী এবং তীব্র শক্তিতে আক্রমণকারী। এমতাবস্থায় সেখানে বিদেশি সাংবাদিকদের অবস্থান নিরাপদ হবে বলে আমাদের মনে হয়নি। উপস্থিত বিদেশি সাংবাদিদের উদ্দেশ্য তিনি আরো বলেন- যদিও এখন আবারো সব খুলে দেয়া হয়েছে। আপনারা যেকোন সময়ে গিয়ে দেখে আসতে পারেন যে পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আছে।

একজন প্রতিনিধি প্রশ্ন করেন, আওয়ামীলীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়ী প্রতিনিধিগন বাংলাদেশ এর প্রতি অনুগত থাকবে বলে অঙ্গীকার করেছে, তাহলে তারা কিভাবে পাকিস্তানের অনুগত নাগরিক হয়? উত্তরে তিনি বলেন আওয়ামীলীগের করা ছয় দফা দাবি পাকিস্তানের মুল উদ্দেশ্যের সাথে যায়না। কিন্তু শেখ মুজিব সমঝোতায় রাজি ছিলেন, এবং আমরা তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তিনি আরো বলেন যে একটি প্রদেশের নাম বাংলাদেশ হলে তার কিছু আসে যায়না, কিন্তু তিনি কখনই বুঝেননি যে তারা বাংলাদেশ বলতে পাকিস্তানের অংশ নয়, নতুন দেশ বুঝাচ্ছে।

আরো একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সামগ্রিকভাবেই খারাপ যাচ্ছিল এবং পূর্ব পাকিস্তানের এ সকল ঘটনা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলছে। পূর্ব পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি ঘটানর জন্য কি উদ্যোগ নিয়েছেন জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ২৪ দিন পর্যন্ত শেখ মুজিব একটি প্যারালাল সরকার ব্যাবস্থা চালিয়েছে সেখানে, এর পর আর্থিক অবস্থা উন্নতির আর কত খানিই বা আশা করা যায়?

আমাদের প্রথম কাজ হবে খাদ্য, চিকিতসা, বাসস্থান নিশ্চিত করে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা।
বিদ্রোহ ঘটার পড়ে আমি একদিনও শান্তিতে দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। অতি দ্রুতই পাকিস্তান তার পূর্বাংশে আইন এর শাসন ফিরিয়ে আনবে এবং আবারো সবকিছু নতুন করে গড়ে তুল্বে। তিনি আরো বলেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ক্ষমতার বন্টন এবং দেশের অরথনৈতিক অবস্থান একে অপরের পরিপুরক। একটির উন্নতি অপরটি গড়ে তুলতে আরো বেশি সাহায্য করবে। তিনি বলেন- সেকারনেই আমি চাই ক্ষমতা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ফিরে যাক। যেহেতু তিনি একজন সৈনিক কাজেই অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধারে তিনি সকল বিশেষজ্ঞদের সাহায্য কামনা করেন।

তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তিনি মনে করেন কিনা যে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ গত তেইশ বছর ধরে শোষণের স্বীকার হয়েছে, উত্তরে তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে হ্যা, কিন্তু তার দায়টা ঐতিহাসিক, এর জন্য কেউ দায়ী নয়। তিনি বলেন, দেশ বিভাগের আগে পূর্বপাকিস্তান ছিল অবিভক্ত বাংলার অংশ। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মুসলিম জনগন পেশায় ছিলেন শ্রমিক, দিনমজুর এবং কৃষক। পূর্বপাকিস্তানের মানুষ এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছে প্রায় ১০০ বছর ধরে। যার ফলে পাকিস্তানের দাবীর আন্দোলন ও তারাই শুরু করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর চলে আসা এ শোষণের দায় ঐতিহাসিক, পাকিস্তানে এর মুল রচিত হয়নি।
বাঙ্গালির এমন নিপীড়নের দায় ইতিহাসের। কিন্তু একজন সৈনিক হিসাবে, যিনি পূর্বপাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন, তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে দেশ বিভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতির লক্ষ্যে কি দারুন সব উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছিল। তারা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে থেকেই যাত্রা শুরু করেছিলো, যার কারনে পশ্চিম পাকিস্তান এগিয়ে গেছে, এবং কোন সন্দেহ নাই যে পশ্চিম পাকিস্তান অনেক দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয়েছে কেননা তারা উত্তম প্রশিক্ষনে শিক্ষা লাভ করেছিল।

বেআইনি হিসেবে ঘোষিত আওয়ামীলীগ দলের সকল নেতাকর্মীকে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট নেতিবাচক উত্তর দেন। তিনি বলেন যে এই দলটির মাঠে নিয়োজিত কর্মীদের অংশগ্রহনের বাইরেও একটি অন্তর্বর্তী সার্কেল ছিল। এছারাও অনেক মানুষ আছেন যারা স্বায়ত্তশাসন এবং নিপীড়নের অপসারণের শপথ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তারা কেন শাস্তি পাবেন? তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষই ভালো। তারাই আমাদেরকে সাহায্য করবে অপরাধীদের খুজে বের করতে।

মুজিবের পরিকল্পনাঃ

আরও একটি প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন যে তিনি শেখ মুজিবকে প্রধান মন্ত্রী হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আগ্রহী ছিলেন না। মুজিব দুইটি জাতীয় পরিষদ, দুইটি সংবিধান এবং ক্ষমতার হস্তান্তরের দেশের পূর্বাংশে করার দাবি জানিয়েছিলেন যে তিনি দুই দেশের বিভক্তিকে একটি আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় রুপ দিতে পারেন। “যখন তিনি তা করতে পারেননি, তিনি সঙ্ঘাতের মধ্য দিতে বাস্তবায়ন করতে গিয়েছিলেন এবং আমি সেটা রুখে দিয়েছি”-তিনি বলেন।

আমি পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন দলের নেতাদের সাথেও শেখ মুজিবের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছি এবং তারা এধরনের চুক্তিতে রাজি হয়নি। আমি তাদেরকে মুজিবের কাছে পাঠিয়েছিলাম যেন তিনি তার মত পরিবর্তন করেন, উলটো আমার নেতারাই মুজিবের অনড় অবস্থানের মুখে দুই ঘন্টার মাথায় আমার কাছে ফিরে এসেছে।
তিনি বলেন, আমি কোন দ্রুত সিধান্তে পৌছাইনি। আমার পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানকে উদ্ধার করা, ধ্বংস করা নয়।
জনাব এম এম আহমাদ সাহেবের ওয়াশিংটন এবং লন্ডন যাত্রার বিষয়ে প্রশ্ন করলে রাষ্ট্রপতি জানান যে এই উদ্যোগটি অত্যন্ত উপকারী এসেছে এবং এ সফরের ফলে বহির্বিশ্বে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনাসহ, কাঠামোগত পুনঃনির্মাণেও সকলের সাহায্য পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরো জানান যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার লেখা চিঠির জবাব দিয়েছেন, এবং সেটি ছিল অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ একটি চিঠি। তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া বিপর্যয় সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং সাহায্যের আহবান জানান।
-এ পি পি।

Ref: ওয়াশিংটন দুতাবাস কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তিকা- ব্যাকগ্রাউন্ড রিপোর্ট-৪, ২৪ মে, ১৯৭১