You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.12 | পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত কর্তৃক কংগ্রেসম্যান গ্যালেঘারকে লিখিত চিঠি - সংগ্রামের নোটবুক

পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত কর্তৃক কংগ্রেসম্যান গ্যালেঘারকে লিখিত চিঠি। ১২ মে, ১৯৭১

পাকিস্তান দূতাবাস
ওয়াশিংটন ডি সি ২০০০৮
১২ই মে, ১৯৭১

প্রিয় মিঃ গ্যালাঘার,
পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ নিয়ে আমি আপনার বিবৃতি দেখেছি, যাতে এক কোটি থেকে তিন কোটি মানুষের অনাহারে মৃত্যু হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আমি আমার দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য আপনার মানবিকতার উদ্বেগের প্রশংসা করি এবং আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ভয় যাতে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণের আশঙ্কা করা হয়েছে তার যথাযথ কোনো ভিত্তি নেই। দুর্ভাগ্যবশত, শত্রুরা পাকিস্তানকে নিয়ে সব ধরনের মিথ্যা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। এ কারনেই অবস্থান পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ।

পাকিস্তান আর্মিবাহিনী আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রাথমিক কাজ পুনঃস্থাপন সম্পূর্ণ করার পর এখন ত্রাণ সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজে যুক্ত। পাকিস্তান সরকার তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ, যা হল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। খাদ্য মজুদ ও বিতরণের একটি ব্যাপক জরিপ পূর্ব পাকিস্তানে প্রয়োজন হওয়ায় এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। অনুরূপ একটি ব্যাপক জরিপ ১৯৭১ এর ২৬শে এপ্রিল ইউএস এআইডি এর কর্মকর্তা কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে সম্পন্ন হয়েছিল। এটা পরিষ্কার ভাবে স্বীকৃত হয়েছে যে, এখানে কোন খাদ্য ঘাটতি নেই। কিন্তু সেখানে বিতরণের প্রকৃত অসুবিধা হয় যা সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মোকাবেলা করছে।

মার্চ এর শেষে পূর্ব পাকিস্তানের গুদামগুলোতে ৬,৮৬,০০০ টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল যা কিনা আমাদের সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। উপরন্তু, সেখানে ৮,০০,০০০ টন খাদ্যশস্য পাইপলাইনের মধ্যে আছে। তার মধ্যে উদ্বৃত ৩,০০,০০০ টন চাল পূর্ব পাকিস্তানে সহজলভ্য, যা কিনা ৭দিন সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে পৌছতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত গুদামগুলোর মজুদ আগামী তিন মাসের খাদ্য চাহিদা পূরণে পর্যাপ্ত। পাইপলাইনেও পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য আছে এবং সরকার এরই মধ্যে পরবর্তী মাসগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান পয়েন্ট চিটাগাং ও খুলনা বন্দরে যন্ত্রপাতির কোন গুরুতর ক্ষতি হয় নি এবং এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শ্রমশক্তি যা মার্চ এর অসহযোগ আন্দোলন এবং এর পরবর্তী বিশৃঙ্খল অবস্থার সময় গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছে, ধীরে ধীরে ফিরে আসছে। অন্তত ৫০% শ্রমিক এরই মধ্যে ফিরে এসেছে এবং আমরা আশা করি যে অতি দ্রুতই বন্দরের ১০০ভাগ স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। এটা সত্য যে চিটাগাং থেকে অভ্যন্তরীণ রেলপথ ভেংগে পড়েছে কেননা একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এটির সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যে যেসব পণ্য চিটাগাং অবতরণ করছে, উপকূলীয় স্টিমার ও বারজ দ্বারা সমান্তরাল সমুদ্র ও নদী পথে নারায়ণগঞ্জ পাঠানো হচ্ছে, যেখান থেকে অভ্যন্তরীণ ভাগে পরিবহনের জন্য সড়ক ও রেল সুবিধা সহজেই পাওয়া যায়।

সরকার সড়ক ও রেলপথের ক্ষতি মেরামতের জন্যও জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হচ্ছে, ঐসব এলাকার খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে যেখানে সড়ক ও রেলপথ এখনও অনধিগম্য।

তাছাড়া, সরকার তার গ্রামীণ কার্যক্রম তীব্রতর করছে যা কিনা আগামী বছরের জন্য ২৪৮ মিলিয়ন রুপি থেকে ৩১০ মিলিয়ন রুপি হচ্ছে, যাতে পূৃর্ব পাকিস্তানের জনগণের খাদ্য ক্রয়ক্ষমতা সহজ হয়।

এছাড়াও যে কোন সম্ভাব্য ক্ষুদ্র এলাকাসমূহের জন্য জরিপ তৈরি হচ্ছে যেখানে খাদ্যের বিনামূল্য বিতরণের প্রয়োজনীয়তা হতে পারে। এবং এই বিনামূল্য বিতরণ কার্যক্রম সন্দেহাতীত ভাবে গৃহীত হবে।

১৯৭১ এর ৪ই মে, পূর্ব পাকিস্তানের একজন এআইডি কর্মকর্তা একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেন যেখানে তিনি এক কোটি থেকে তিন কোটি মানুষের দুর্ভিক্ষ পীড়নের ঝুঁকির গুজব প্রত্যাখ্যান করেন। তার সিদ্ধান্ত এমন হয় যে, একটি রক্ষণশীল অনুমানের ভিত্তিতেও আমাদের উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থায় দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা খুবই কম। দেশের ভয় খাদ্যশস্য উৎপাদন, আমদানি ও বিতরণের সবচেয়ে হতাশা পূর্ণ অনুমানের উপর ভিত্তি করে। যেখানে কদাচিৎ সবকিছু একই পদ্ধতিতে একই সংগে ভুল হওয়ার কোন কারন অনুমান করা যায় না।

আমরা নিশ্চিত যে আমাদের বন্ধুদের সহায়তায় এবং আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি কার্যকারী ভাবে দূরীভূত হতে পারে। পাকিস্তান সরকার এই পরিস্থিতিতে তার দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন। এটা তার জনগণের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের জন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করবে।

আপনার অনুগত
স্বাক্ষরিত
(এ হিলালী)
মান্যবর
কমেলিয়াস ই গ্যালাঘার
ইউনাইটেড স্টেট কংগ্রেস
২৩৫, ক্যানন হাউস অফিস ভবন
ওয়াশিংটন ডি সি ২০৫১৫

Ref: পাকিস্তান দূতাবাসের দলিলপত্র ১২ মে, ১৯৭১