You dont have javascript enabled! Please enable it!

পূর্ববঙ্গের মুক্তি সংগ্রাম ও চীন
শতদল রায়

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকেই লক্ষ করে আসছি আমার পরিচিত বেশ কিছু নকশালপন্থী তাত্ত্বিক নেতা এবং আপনাদের পত্রিকার মতামতের পাতায় বেশ কিছু লেখক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুটি বক্তব্য প্রচার করার চেষ্টা করে চলেছেন। তাদের প্রথম বক্তব্য হলাে মুজিবর রহমান ও তার দল আওয়ামী লীগ পুরােপুরি ধনতন্ত্রের পাহারাদার এবং দ্বিতীয় বক্তব্য হলাে, বাংলাদেশের ভেতরে বর্তমানে যে গেরিলা কায়দায় লড়াই চলছে তা প্রধানত চালাচ্ছে তােহা আর মতীনের অসংখ্য অনুগামীরা যারা মাও সে তুং-এর নির্দেশিত পথে বিশ্বাসী এবং মার্কসবাদে অনুপ্রাণিত।
তাদের প্রথম বক্তব্যটি যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেই তবু দ্বিতীয় বক্তব্যটি আমাদের কাছে কিছুতেই খুব স্পষ্ট নয়। কারণ দ্বিতীয় বক্তব্যটি নিয়ে আলােচনা করতে গেলে বাংলাদেশের মধ্যকার লড়াই এবং তাকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্ব জুড়ে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির হয়েছে, সেটাও আমাদের অতি অবশ্যই আলােচনা করতে হবে। আমরা জানি মুক্তিযযাদ্ধাদের হাতে যে সমস্ত রাইফেল রয়েছে, সেগুলাে তারা বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করেছে কিন্তু ইয়াহিয়া খার মিলিটারির হাতে যে সমস্ত রাইফেল আছে তা তারা পেয়েছে প্রধানত আমেরিকা এবং লালচীন থেকে। সামান্য রাজনৈতিক জ্ঞান আছে এমন একটা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও ভালােভাবেই জানে যে, আজকের যুগে আমেরিকা যতাে রাইফেল তৈরি করে থাকে তা শুধু পৃথিবীর সর্বত্র কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের গুলি করে মারার জন্যই। সুতরাং ইয়াহিয়া খা আমেরিকার সেই উদ্দেশ্য মােল আনা কার্যকর করার জন্যই কম, তােহা এবং কম. মতীনের অনুগামীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। কিন্তু মাও সে তুং-এর দেশ লালচীন তাে সেই একই উদ্দেশ্য নিয়ে নিয়ে রাইফেল তৈরি করে না বরঞ্চ লালচীনের তৈরি রাইফেল প্রতিটি কমিউনিস্ট বিপ্লবীর বুকে আনে অজেয় সাহস এবং আস্থা। তবে কেন বাংলাদেশের বুকে লালচীনের তৈরি রাইফেল লালচীনেরই পথে বিশ্বাসী হাজার হাজার বিপ্লবী তরুণের কাছে আজ মৃত্যুর পরােয়ানা হয়ে দেখা দিল? এই ধরনের অদ্ভুত ঘটনার সাথে চেয়ারম্যানের চীন আক্রান্ত হতে পারে সুতরাং বিপ্লবের কাজ তাড়াতাড়ি করুন’– আমাদের দেশের নকশালদের এই স্লোগানটির সামঞ্জস্য কোথায়? আর তা ছাড়া আজ যখন ইয়াহিয়া খাঁর মিলিটারির হাতে লালচীনের তৈরি রাইফেল উঠেছে তখন ভবিষ্যতে ইন্দিরা গান্ধীরা মিলিটারির হাতেও কি লালচীনের তৈরি রাইফেল আমরা দেখতে পাবাে না? এর গ্যারান্টি কোথায়?

সূত্র: দর্পণ
০৩.০৯.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!