You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.04 | ঢাকা নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম চাঁদপুরে বােমা : যশাের দূর্গের কাছে আমরা | দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকা নারায়ণগঞ্জ চট্টগ্রাম চাঁদপুরে বােমা : যশাের দূর্গের কাছে আমরা 

শনিবার সকালে ঢাকার দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমান বাহিনী আক্রমণ চালায়। এদিন নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর ও চট্টগ্রামেও বিমান আক্রমণ হয়। সব কটি জায়গাতেই আমরা বােমা ফেলেছি।চট্টগ্রামে অবস্থিত তৈল শােধনাগারটি বিমান আক্রমণে জখম হয়ে দাউ দাউ জ্বলছে বলে খবর পাওয়া যায়।এদিকে বয়রা, হিলি, আখাউড়া সীমান্তে আমাদের স্থল বাহিনীও শুক্রবার রাত থেকে কদম কদম এগিয়ে চলেছেন। যশােহর দূর্গ আর খুব বেশী দূর নয়। আর মাইল দশেক পথ বলে শনিবার দুপুরে কলকাতার খবর পাওয়া যায়।

শনিবার কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, নির্দেশ এসেছে এখন শুধু আত্মরক্ষা নয় আক্রমণ-ও চালাতে হবে। বয়ড়া, হিলি, ত্রিপুরা সীমান্তে শুক্রবার রাত থেকেই ভারতীয় সেনার সংখ্যা আরও বাড়ানাে হয়েছে; সংহত করা হয়েছে এবং জওয়ানরা এগিয়ে চলেছেন।

তাদের লক্ষ্য-পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণ। তবে, বাংলাদেশের জনসাধারণ যাতে বিপন্ন না হন এবং ওখানকার অর্থনৈতিক কাঠামাে যাতে ভেঙ্গে পড়ে সেদিক লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর উপর আর কোন বিধিনিষেধ আরােপ করা হয় নি বলে ওই মুখপাত্র মন্তব্য করেন। জনৈক বিদেশী সাংবাদিক ওই মুখপাত্রকে প্রশ্ন করেন-যশাের কতদিনে দখল করবেন? মুখপাত্রের জবাব-কোন দুর্গ বা ঘাঁটি দখল আমাদের লক্ষ্য নয়। আমাদের লক্ষ্য।-পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাজয়। বাংলাদেশের জনগণের পছন্দমত সরকার স্থাপনে সহায়তা।

প্রশ্ন ছিল-মুক্তিবাহিনী যখন বাংলাদেশে লড়াই চালাচ্ছে তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোন অভিযান হলে তা কি একই কাজের পুনরাবৃত্তি হবে না?

মুখপাত্র বলেন-পুনরাবৃত্তি কেন? এই দুই বাহিনীর কাজ হবে পরিপূরক। কারণ, আমাদের দুই বাহিনীরই লক্ষ্য-বাংলাদেশে পাক সেনাবাহিনীর পরাজয়।

পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জি-ও-সি ইন সি লে: জে: জগজিৎ সিং অরােরা এদিন বলেন-আমাদের লক্ষ্য-ওই পরাজয়। যতক্ষণ না তা হচ্ছে আমাদের লড়াই চলবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল অরােরা বলেন, বাংলাদেশে এই অভিযান কতদিন চলবে তার পূর্বাভাস বা আগাম হিসাব দেওয়া কোন সেনাপতির পক্ষেই সুবিবেচনার কাজ নয়। এমনিতে পশ্চিম রণাঙ্গনের চেয়ে পূর্ব । রণাঙ্গনে কাজ ‘অপেক্ষাকৃত সহজ’ হলেও বাংলাদেশ নদনদীতে ভরা। এতে আমাদের কিছু সময় লাগবে।জেনারেল অরােরা বলেন, “আমার ছেলেরা চমৎকার লড়ছে। একথা স্বীকার করতে হবে যে, পাক বাহিনীও জোর লড়াই চালাচ্ছে।

 বাংলাদেশে পাক বাহিনীর সংখ্যা কত? ভারতীয় এই সেনাপতির আন্দাজ-চার ‘ডিভিশন’-অর্থাৎ ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মত । তিনটি ডিভিশন বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্ত এবং আরেকটি সম্ভবত পূর্ব সীমান্তের দিকে।আর পাক জঙ্গী বিমান?-এই হিসাব অনুসারে ছিল ২৩টি। কয়দিন আগে আমরা তার ৩টি নষ্ট করার পর রইল বাকি-২০টি। (শনিবার সকালে আরও ৭টি ফেলা হয়।)  মার্কিন, চীন, ইতালীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাক বাহিনী যুদ্ধ চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের কাছে কোন রুশ অস্ত্রপাতি নেই বলে মুখপাত্র মন্তব্য করেন।

৪ ডিসেম্বর ‘৭১

Reference: ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা