You dont have javascript enabled! Please enable it!

স্পর্ধার জবাব দেয়া হবে

শেখ মুজিবর রহমানের বিচার হবে বুধবার। পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘােষণা করেছেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণার অভিযােগে মুজিবের এই বিচার। বিচার বসবে নিভূত আদালতে। ন্যায় বিচার জগতে এও এক ধরনের পরিহাস। মুজিবের বিচারক ইয়াহিয়া পাক শাসনযন্ত্র আত্মসাৎ করেছিলেন চক্রান্তের মাধ্যমে অস্ত্রের জোরে। পাকিস্তানের কোনাে আদালতে ইয়াহিয়ার এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিচার হয়নি। বিচার পাকিস্তানের আরও এক ক্ষমতা অপহরণকারী রাষ্ট্রপ্রধান আয়ুব খানের। কিন্তু মুজিবের বিচার আয়ুবও করেছিলেন ঐ একই অভিযােগে দেশদ্রোহিতার অভিযােগে। আজ আবার ইয়াহিয়া সেই মুজিবের বিচার বসাচ্ছেন। তবে প্রথম বিচার ছিল প্রকাশ্যে, বর্তমানের বিচার হবে গােপনে। অথচ সেদিনের মুজিবের সঙ্গে বর্তমানের মুজিবের পার্থক্য অনেক। সেদিনের মুজিবর রহমান আজ বঙ্গবন্ধু। সেদিন মুজিব ছিলেন এক অগ্রণী দেশকর্মী, একটি দলের প্রধান। আজ মুজিব হলেন পাকিস্তানের ভােটদাতাদের দ্বারা নির্বাচিত সমগ্র পাকিস্তানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেতা, স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আইনে যার অর্থ হলাে সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হলেন শেখ মুজিবর রহমান। সম্ভবত সে কারণেই মুজিবের বিচার হবে জনতার চোখের আড়ালে কয়েকজন রক্তপায়ী চক্রীর অস্ত্রের আড়ালে। কারণ চক্রীদের দরবারে জনতার রায়ের কোনাে মূল্য নেই। ওদের কাছে জনতার পরিচয় শুধু অজ্ঞাবহ ভূত্যের। তাই ইয়াহিয়ার স্পর্ধাও এতাে সীমাহীন।
মুজিবের অপরাধ? সীমান্ত গান্ধী-ভারত উপমহাদেশের অবিসংবাদী নেতা খান আবদুল গফফার খান প্রশ্ন করেছেন জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হওয়া ছাড়া মুজিব ও তার দলের লােকেরা আর কোনাে অপরাধ করেছেন? ইয়াহিয়াদের মতাে চক্রীদের কাছে বিচারের জন্য এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে? পাকিস্তান ইয়াহিয়াদের ন্যায় কিছু ব্যক্তির পৈত্রিক সম্পত্তি। ধর্মের দোহাই পেড়ে এঁরা ঐ দেশে যে কোনাে ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালাতে পারেন। সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের আজ্ঞানুসারে ওঁরা পাকিস্তানকে দিয়ে এই উপমহাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তাকে শিকেয় তুলে দিতে পারেন। এর বিরুদ্ধে কেউ যেন প্রতিবাদ না করে। প্রতিবাদ যে করবে বিচারের কাঠগড়ায় তাকেই দাঁড়াতে হবে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মতাে।
এই বিচার প্রহসনের পেছনে মুজিবকে খুন করার মতলব ইয়াহিয়ার আছে। গত চার মাসে বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ নরনারীকে খুন করে ইয়াহিয়া তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এখন মুজিবকে বিচারের নামে খুন করে সেই লক্ষ্য পূরণ তার উদ্দেশ্য।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং লােকসভায় দাঁড়িয়ে ঘােষণা করেছেন মুজিবের কোনাে ক্ষতি হলে ভারত দাঁড়িয়ে দেখবে না। ভারতের ও বিশ্বের সর্বত্র মুজিবের মুক্তির দাবি উঠছে এবং তা ক্রমেই আরও সােচ্চার হচ্ছে। মুজিবের বিচার করার অধিকার ইয়াহিয়ার নেই, বরং নির্বাচিত মুজিব ও তার দলের হাতে ক্ষমতা সমর্পণ করে সরে না দাঁড়ানাের জন্য ইয়াহিয়া যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা করেছে সেই অভিযােগের বিচারের জন্য জনতার আদালতের বিচারপতিরা প্রস্তুত হচ্ছেন। মুজিবের বিচার করার স্পর্ধার উপযুক্ত জবাব সেদিনই দেয়া হবে।

সূত্র: কালান্তর
১১.৮.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!