You dont have javascript enabled! Please enable it!

মাগুরার জনসভায় বঙ্গবন্ধু
১০ আগস্ট ১৯৫৮
মাগুরা

বিগত সাধারণ নির্বাচনে জনসাধারণ ২১ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টকে ভোটদান করিয়াছিল। কিন্তু জনাব আবু হোসেন সরকারের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ২১ দফার একটিমাত্র দফাও কার্যকরী করিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। তদুপরি মুসলিম লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে যে নীতি অনসুরণ করিয়াছিল যুক্তফ্রন্টও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হইয়া ঠিক অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে ও জনসাধারণের প্রতি মুসলিম লীগের মতই চরম অবিচার করিতে থাকে। দেশ যখন এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন ঠিক সেই সময় জনাব আবু হােসেন সরকার তাঁহার সরকার পরিত্যাগ করেন এবং এই মর্মে ঘোষণা প্রকাশ করেন যে, আসন্ন দুর্ভিক্ষে কমপক্ষে হইলেও দেশের ১০ লক্ষ লােক জীবন হারাইবে।

দেশের অনুরূপ সঙ্কটময় মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তিদান করেন। দুর্ভিক্ষের হাত হইতে জনগণকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সরকার বার্মা, থাইল্যান্ড, ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েট ইউনিয়ন প্রভৃতি রাষ্ট্র হইতে চাউল আমদানী করেন। বিদেশ হইতে ৮০ কোটি টাকার চাউল আমদানী করা হয়। লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করিয়া ও অন্যান্য পদ্ধতিতে ঐ চাউল প্রদেশের সর্বত্র বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অনুরূপ কার্যতৎপরতার ফলে দেশের জনসাধারণ অবধারিত মৃত্যুর হাত হইতে রক্ষা পায়।

মাত্র ২০ মাসকাল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার কুখ্যাত নিরাপত্তা আইন বাতিল করেন। জনসাধারণকে নির্বিবাদে সভা-সমিতি অনুষ্ঠান ও সকল প্রকার নাগরিক অধিকার প্রদান করা হয়। সরকারের পক্ষ হইতে পাটের লাইসেন্স ফি উঠাইয়া দেওয়া হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় ও বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘােষণা করা হয়। জনাব সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশের উন্নয়ন খাতে ৪৫ কোটি টাকা ও টেষ্ট রিলিফের জন্য ১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। একমাত্র জনাব সােহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বই পাকিস্তানকে যে কোন প্রকার বিপর্যয়ের হাত হইতে রক্ষা করিতে পারে।

সূত্র – বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম, পৃষ্ঠা – ২৩৪-২৩৫, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০১৩

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!