নড়াইলের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু
৯ আগস্ট ১৯৫৮
নড়াইল
১৯৪৭ সাল হইতে শুরু করিয়া জনাব সোহরাওয়ার্দী কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালন ভারগ্রহণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসলিম লীগ দল দেশের শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করে। এই সময় মরহুম লিয়াকত আলী খান, খাজা নাজিমুদ্দীন, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, চৌধুরী মােহাম্মদ আলী কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করিয়াছেন এবং জনাব সোহরাওয়ার্দীর পরেও মুসলিম লীগ নেতা জনাব আই, আই, চুন্দ্রীগড় কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রীর আসনগ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু ইহাদের সকলের আমলেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বিমাতাসুলভ ব্যবহার করা হইয়াছে। তাহাদের ৮ বৎসর কালীন শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তানকে মাত্র ১৪৮ কোটি টাকা | দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে জনাব সোহরাওয়ার্দীর মাত্র ১৩ মাস কালীন শাসনকালে পূর্ব পাকিস্তানকে ২১১ কোটি টাকা দেওয়া হইয়াছে। এই ঘটনা হইতেই পূর্ব পাকিস্তানবাসীরা কেন জনাব সোহরাওয়ার্দীকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পাইতে চায়, তাহার কারণ বোঝা যাইবে। কারণ একমাত্র জনাব সােহরাওয়ার্দীই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি সুবিচার করিতে সক্ষম।
মুসলিম লীগের দীর্ঘ ৮ বৎসর স্থায়ী শাসনকালে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ১০০০ কোটি টাকা খরচ করা হইলেও আলোচ্য সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মাত্র ১৪৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হইয়াছে। ফলে, লীগ শাহীতে প্রাচুর্যের দেশ পূর্ব পাকিস্তান দারিদ্র্য ও বেকারীর লীলা ভূমিতে পরিণত হইয়াছে। ইহাদেরই শাসনের ফলে অভাব-অনটন পূর্ব পাকিস্তানবাসীদের নিত্য সঙ্গী হইয়া দাঁড়াইয়াছে। তাহাদের কু-শাসন এবং অসমঞ্জস্য সম্পদ বণ্টনের ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের আজ এই দশা।
পূর্ব পাকিস্তান কৃষির দেশ। এখানকার শতকরা ৯৫ জন লােক কৃষির দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ পশ্চিম পাকিস্তানের কৃষি উন্নয়নের জন্য ১৯৮ কোটি টাকা ব্যয় করিয়াছেন এবং ১০ লক্ষ লোক অধিষ্ঠিত করাচীতে ৪০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। পক্ষান্তরে গােটা পূর্ব পাকিস্তানে একশতের বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তােলা হয় নাই।
সূত্র – বঙ্গবন্ধু ও গণমাধ্যম, পৃষ্ঠা – ২৩৩-২৩৪, বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট, ঢাকা, প্রকাশকাল ২০১৩