৯ আগস্টের ডাক পাক সরকার বাংলাদেশ ছাড়!
পূর্ব পাকিস্তান আজ মৃত: প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ: মুজিব নাম নহে, প্রতীক
আগরতলা, ১০ আগস্ট ॥ রক্তঝরা ৯ আগস্ট। ১৯৪২ সালের এই ঐতিহাসিক দিনটিতে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ সরকার ভারত ছাড়’ ডাক দিয়েছিলেন। আজ সেই একই উদ্দেশে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের ডাক ‘পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশ ছাড়। গতকাল স্থানীয় শিশু ময়দানে আগরতলা জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির দাবিতে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী শ্ৰীশচীন্দ্র লাল সিংহ উপরােক্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুজিব আজ আর একটি ব্যক্তি নয়, নামও নয়; মুজিব আজ একটি প্রতীক-ইতিহাস। পৃথিবীর নির্যাতিত, শােষিত ও নিপীড়িত মানবগণের আশা, আকাক্ষা ও প্রেরণার মূর্তপ্রতীক। শােষকের হাত হতে, শােষণের কবল হতে মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস শেখ মুজিব। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ দুটি ভিন্ন রাষ্ট্র। পাক সরকারের কোনাে অধিকার নেই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধানের বিচার করার। এই বিচার অবৈধ, আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধাচরণ। শ্রীসিংহ আরও বলেন, মােল লক্ষের ত্রিপুরা তের লক্ষ বাংলাদেশের শরণার্থীকে অতিথি হিসেবে আশ্রয় প্রদান করেছে; সামর্থ দিয়ে তা সম্ভবপর হয়নি, সম্ভবপর হয়েছে মানবতাবােধ শক্তিতে। সে জন্য ত্রিপুরা আজ ধন্য, ধন্যবাদহ। শ্ৰী সিংহ বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সােচ্চার হয়ে উঠার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবি করেন এবং এ ব্যাপারে ভারত সরকারের অনুসৃত নীতির সমর্থন জানান। উক্ত সভায় বাংলাদেশ হতে আগত শরণার্থী আব্দুল কুদ্দুস মাখন তেজোদৃপ্ত ভাষায় বক্তৃতা দান প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ব পাকিস্তান আজ মৃত। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার। অত্যাচারী পাক সরকার বাংলাদেশকে পদানত করার নিমিত্ত লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে, করছে। এই রক্ত দান ব্যর্থ হতে পারে না। মুক্তিবাহিনী স্বাধীন বাংলাদেশ হতে পাক হানাদারদের উচ্ছেদ করবেই করবে। সভায় ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রী সুখময় সেনগুপ্ত বলিষ্ঠ ভাষায় সংক্ষিপ্ত ভাষণ দান করেন। তিনি বলেন, অত্যাচারী ইয়াহিয়া সরকারকে বাংলাদেশ ছাড়া করার জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষের মরণপণ সংগ্রামের সাফল্য অবধারিত কোনাে শক্তি একে প্রতিহত করতে পারবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন ত্রিপুরার পশুপালন মন্ত্রী শ্রী প্রফুল্ল কুমার দাস। তাঁর ভাষণে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য পৃথিবীর রাষ্ট্রসমূহের নিকট আবেদন জানান এবং যে সব রাষ্ট্র ইয়াহিয়ার গণহত্যা কাজে সাহায্য করছে তাদের নিন্দা করেন। সভায় বাংলাদেশাগত আরও কয়েকজন বক্তা এবং ত্রিপুরা রাজ্য কংগ্রেসের কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
সূত্র: ত্রিপুরা
১১ আগস্ট, ১৯৭১
২৬ শ্রাবণ, ১৩৭৮