You dont have javascript enabled! Please enable it!

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে
রবিউল কামাল
বীরভূম

খাঁ সাহেব লিখেছেন, আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি ফৌজের বিরুদ্ধে জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেনি। জানি না জনতার ব্যাখ্যা তাঁর কাছে কি। কিন্তু দেশের শ্রমিক, কৃষক ও বুদ্ধিজীবী অর্থাৎ শতকরা আশি ভাগ জনগণ যদি জনতা হয় তাহলে তার তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। প্রমাণ- ইয়াহিয়ার তাবেদাররা এসএসসি (অর্থাৎ এস এফ) পরীক্ষার শত চেষ্টা করেও অনুষ্ঠিত করতে পারলাে না। বাংলাদেশের জনজীবন এখনও স্বাভাবিক করতে পারলাে না।
ফিরিস্তির এক নম্বর লিখেছেন আওয়ামী লীগ গান্ধী পন্থায় শান্তিজল ছিটিয়ে নিরস্ত্র জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। ঘটনা কি তাই? সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে মুজিবর রহমান জনগণকে বলেছিলেন “তােমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে তৈরি হও। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়াে, এরপর আর যাই হােক মুজিবরকে গান্ধীবাদী বলা যায় না। আর জনগণের মৃত্যুর উত্তর বলতে হয়- আক্রান্ত হওয়াই আপনাদের কাছে অপরাধ- তাই না?
আমি ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম। পঁচিশে মার্চের রাতে পাকিস্তানি জঙ্গি বাহিনী বাংলাদেশের জনগণকে আচমকা আক্রমণ করেছে- এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরই মুক্তিবাহিনী গঠন করা হতে থাকে। সাতাশে মার্চে শুনলাম মাইক করে ছাত্রলীগের ছেলেরা শহরে বলে বেড়াচ্ছে, ‘মােল বছরের ঊর্ধ্বে যে সমস্ত যুবকরা আছেন তারা ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে সামরিক ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করুন। সকাল বিকাল ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। সেখানে দেখলাম শহরের অনেক যুবক ট্রেনিং নিচ্ছে, শুধু যুবক নয় লুঙ্গি পরে অনেক বয়স্কও। তারপর বারােই এপ্রিল। ময়মনসিংহ জেলার দিকে পাকবাহিনী মধুপুর জঙ্গল হয়ে এগিয়ে আসছে। ঐ দিন সকালে ট্রেনিং সেন্টারে ই পি আরের কমান্ডার এ খবর দিলেন এবং আরও বললেন, আমরা প্রথমে তিরিশ জন কমান্ডােকে পাঠাবাে। সঙ্গে সঙ্গে তিরিশ জন যেতে সম্মতি জানালাে। তখনই ঐ তিরিশ জন যে যে পােশাকে ছিল, রওনা দিল ট্রাকে করে তিরিশ মাইল দূরে অবস্থিত মধুপুর জঙ্গলের দিকে শত্রুসেনা খতমে। কী উদাত্ত আহ্বান আর কী প্রাণবন্ত সাড়া! এরপরও কি বলা যায় মুক্তি বাহিনীর রিক্রুটিংয়ে দলীয় রাজনীতি কাজ করছে?
খাঁ সাহেব বিশিষ্ট মনােভাব নিয়েও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনলে শুনতে পাবেন সেখান থেকে গীতাও পাঠ হয়। কী করে এটা সাম্প্রদায়িক মনােভাব হলাে?
যখন ঘাের সাম্রাজ্যবাদ বিরােধীরা সাম্রাজ্যবাদীদের পরিচালকের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে, আলাপআলােচনা করছে, মায় ঘাের সাম্রাজ্যবাদীদের নিজ দেশ সফরের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে, তখন খাঁ সাহেবরা চুপ করে থাকেন কিংবা বলেন, এটা সাম্রাজ্যবাদ বিরােধীদের একটি কৌশল সাম্রাজ্যবাদীদের পরাস্ত করার। অথচ যখন আক্রান্ত দেশ সাহায্য নিচ্ছে প্রাণ বাঁচানাের জন্য তখনই তাদের সব মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়। আমরাও বলতে পারি এটা আক্রান্ত দেশের একটি রণকৌশল, যাতে সিংহলের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
মুখের ভাষা কেড়ে নিলে, মাতৃভাষা কেড়ে নিলে এবং তার প্রতিবাদ করলে যদি খাঁ সাহেবরা তাকে জঘন্য দাঙ্গা বলেন, তাহলে এ কথা স্বভাবতই মনে হয় খাঁ বােবা হয়ে থাকতে বলছেন। অর্থাৎ শােষক শ্ৰেণীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খােলাকেই অন্যায় বলছেন।।
আর এ কথাই সবার জানা আছে উর্দুভাষী লােকেরা উনিশশ আটান্ন সালের সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর থেকেই পূর্ববাংলার জনগণের ন্যায়সংগ্রামে সামিল হওয়াতাে দূরের কথা, শাসক শ্রেণীর তাঁবেদার হয়ে কাজ করেছে। জনগণের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।
আওয়ামী লীগ যদি সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য পুষ্ট হতাে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়াহিয়াকে অস্ত্র সাহায্য দিতাে না। শতকরা একভাগ বেইমানরা প্রবল কারণ শাসকশ্রেণী (শােষক শ্রেণী) তাদের সহায়। আর ঐ শােষক শ্রেণীর ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে হাে-চি-মিন বলেছিলেন- বিশ্বে অ্যাটমের চেয়েও একটি প্রবল শক্তি আবিষ্কার হয়েছে তা জনশক্তি। তাই যাদের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল তারা আপাতত প্রবল হলেও জনশক্তির জয় অবশ্যম্ভাবী।

সূত্র: দর্পণ
২০.০৮.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!