স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের জন্য
যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্ব ও পঃ বাংলার পাশে দাঁড়াতে হবে
ত্রিপুরা রাজ্য ২য় যুব সম্মেলনের আহ্বান
আগরতলা, ২৪ মে পশ্চিম বাংলায় ১৪৪ ধারা জারি করে, পুলিশ সি.আর.পি, মিলিটারি দিয়ে অত্যাচার করে গণতান্ত্রিক শক্তির উপর তীব্র আঘাত হানছে জনগণের শত্ৰু কংগ্রেস সরকার। অপরদিকে পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়ার অত্যাচারী সামরিক বাহিনী জনগণের রায়কে পদদলিত করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েম করেছে। এই অত্যাচারের সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার জনগণ তীব্র প্রতিরােধ গড়ে তুলেছেন। পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার জনগণের উপর অত্যাচার গণতন্ত্রের উপর আঘাত। এই আঘাত প্রতিহত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকল্পে সারা দেশের যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার জনগণের সংগ্রামের পাশে সমস্ত প্রকার সাহায্য ও সহানুভূতি নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
গত ২৩ এপ্রিল মেলাঘর কালীতলায় অনুষ্ঠিত ত্রিপুরা রাজ্য গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের ২য় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে সম্মেলনের প্রধান অতিথি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উপরােক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নব নির্বাচিত সভাপতি খগেন দাস। প্রথমেই মেলাঘরে বেকার যুবকদের সংগ্রামে নিহত শহীদ কাজল বর্মনের স্মৃতির প্রতি ১ মিনিট নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানানাে হয়।
প্রধান বক্তার ভাষণে মাকর্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য কমিটির সম্পাদক নৃপেন চক্রবর্তী বলেন, পূর্ব বাংলাকে পাঞ্জাবের একচেটিয়া পুঁজির উপনিবেশ হিসেবে রাখা হয়েছিল। পূর্ব বাংলার সমস্ত ধন-সম্পদের উৎপাদনের মালিকানা ছিল এই পুঁজিপতিদের। মুজিবুরের আওয়ামী লীগের দাবি ছিল বাঙালিদের কিছু সুযােগ-সুবিধা দেওয়া। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সামরিক চক্রের নায়ক ইয়াহিয়া সে সুযােগ দেয়নি। লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে হাজার হাজার গ্রাম পুড়িয়ে দিয়ে, লুঠতরাজ চালিয়ে ফ্যাসিস্টরাজ কায়েম করেছে। আমাদের দেশের কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য চোখের জল ফেলছেন। পূর্ব বাংলা থেকে আগত শরণার্থীদের জন্য ইয়াহিয়ার নিকট খিচুড়ির পয়সা দাবি করছেন এবং আবার ইয়াহিয়ার রক্তাক্ত হাতে শরণার্থীদের তুলে দেওয়ার জন্য আপােষের চেষ্টা করছেন। আবার তিনিই পশ্চিম বাংলার জনগণের উপর তীব্র অত্যাচার চালাচ্ছেন। গণতন্ত্রের অধিকার হরণ করেছেন।
আজকে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন কমিউনিস্ট গ্রুপ এবং পূর্ব বাংলার সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী প্রবীণ কৃষক নেতা মওলানা ভাসানীসহ আওয়ামী লীগ এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ সংগ্রাম শুরু করেছেন। ভিয়েতনামে যেভাবে জনগণ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন সেই পথের দিকে এই সংগ্রাম চলছে। আজকে তাই ভারতবর্ষের সংগ্রামী যুবকদের দায়িত্ব নিজের দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য পূর্ব বাংলার সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে তাদের সর্বপ্রকার সাহায্য করা।
তিনি বলেন, এটা সত্যিই দুঃখজনক পৃথিবীর সমাজতান্ত্রিক শিবির বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে এখনও স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সােভিয়েত সংশােধনবাদী নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলাের মতাে আপােষের চেষ্টা করছে আবার চীনের হটকারি নেতৃত্ব জনগণের এই অভুত্থানকে স্বীকার করছে না। মুসলিম লীগ ছাড়া সমস্ত বিরােধী দল এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
যে মুসলিম লীগ ইয়াহিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের উপর অত্যাচারে সাহায্য করছে সেই মুসলিম লীগকে নিয়ে কংগ্রেস পশ্চিম বাংলার সরকার কায়েম করেছে আর তাদের সাথে আছে দক্ষিণপন্থী কমিউনিস্ট পার্টি। তীব্র গণআন্দোলনের মাধ্যমে ইন্দিরা সরকারকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করার জন্য তিনি জনগণকে আহ্বান জানান।
শরণার্থীদের অবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পে শরণার্থীরা তীব্র দুর্দশার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ আমলা তাদের রেশন চুরি করছে। কংগ্রেস সরকার আগামী নির্বাচনের তহবিল সংগ্রহের জন্য রিলিফ চুরিতে সাহায্য করছে। এই জিনিস ত্রিপুরার মানুষ চলতে দেবে না। সস্তা দরে খাদ্য ও রেশন দেওয়া এবং চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরােধ গড়ে তােলার জন্য আহ্বান জানান। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য প্রধান অতিথির ভাষণে বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য্য গত মধ্যবর্তী নির্বাচনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করে বলেন, গত নির্বাচনে পশ্চিম বাংলার মানুষ রায় দিয়েছিলেন শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের অধিকারের স্বপক্ষে অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তাই সরাসরি পশ্চিম বাংলায় কংগ্রেস শাসন ক্ষমতায়।
সূত্র: দেশের ডাক
২৮ মে, ১৯৭১
১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৭৮