গণতান্ত্রিক যুব লীগ ও শেখ মুজিব
স্বাধীন সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আশানিরাশার মাঝে দোদুল্যমান। সেই সময়কার একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব পিয়ারেলাল তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Mahatma Gandhi- The Last Phase বইতে।
তিনি লিখেছেন: ‘১৯৪৭ সালের ৭ই মে মহাত্মা গান্ধী কলকাতার উদ্দেশ্যে পাটনা ত্যাগ করে ৯ই মে কলকাতায় পৌঁছলেন। যেদিন তিনি সােদপুর আশ্রমে এসে উপস্থিত হলেন ঐদিন শরৎচন্দ্র বসু তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। পরদিন ১০ই মে সােদপুর যাওয়ার পথে শরৎ বােস কলকাতা থেকে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সম্পাদক আবুল হাশিমকে সঙ্গে নিয়ে গান্ধীজীর কাছে গেলেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও আলাপ আলােচনার প্রধান বিষয়ই ছিল অখন্ড বাংলা খণ্ডিত বাংলা।’ পিয়ারেলাল এই সাক্ষাৎকার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তাঁর গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেছেন। গান্ধীজীকে আবুল হাশিম যা বুঝাতে চেষ্টা করেছিলেন তার সংক্ষিপ্ত মর্ম নিমরূপ।
‘সাধারণ ভাষা সাধারণ সংস্কৃতি এবং সাধারণ ইতিহাস যা হিন্দু মুসলমান উভয়কেই ঐক্যবদ্ধ করেছিল মূলত তার উপর ভিত্তি করে তিনি যুক্ত বাংলার পক্ষে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। ধর্মের দিক থেকে হিন্দু অথবা মুসলমান যেই হােক, একজন বাঙালি চিরদিন বাঙালিই থেকে যায়। কাজেই উভয়েই হাজার মাইল দূরে পাকিস্তান শাসকদের হাতে শাসিত হতে একইভাবে ঘৃণা বােধ করে। পাকিস্তান প্রস্তাবের একনিষ্ঠ সমর্থকের মুখ থেকে বিলম্বে হলেও এরূপ স্বীকৃতি ও আত্মপােলব্ধি গান্ধীজীর মনে তাঁর প্রতি তেমন কোনাে আশাবাদ সৃষ্টি করেনি। সাবধানতার সঙ্গে গান্ধীজী লীগ সম্পাদককে শুধু জিজ্ঞাসা করলেন হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে উভয় সম্প্রদায় কি ৭ হাজার মাইলের ওপার থেকে ব্রিটিশ কর্তৃক শাসিত হননি। জবাবে আবুল হাশিম ভারতের অবাঙালিদের হাতে বাঙালিদের শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর মত জোরের সঙ্গেই ব্যক্ত করেন। গান্ধীজী তখন অভিযােগের পুনরুক্তি করে শুধু জিজ্ঞাসা করলেন- ইসলামী সংস্কৃতি ও ধর্ম প্রচারণার জন্য পাকিস্তান যদি স্বেচ্ছায় একটি ফেডারেশনে যােগদানের আমন্ত্রণ জানান তাহলে পাকিস্তানে যােগদানে
পৃষ্ঠাঃ ৩৪
তাদের আপত্তি থাকবে কিনা। এ ব্যাপারে আবুল হাশিম উত্তর দানে বিরত ছিলেন।
গান্ধীজী তাঁর যুক্তিতে আবার ফিরে গেলেন। বাংলার সংস্কৃতির কথা লীগ সম্পাদক উল্লেখ করেছেন যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছিল এবং যার মূল প্রেক্ষিত ছিল উপনিষদের মধ্যে, তা কেবলমাত্র বাংলারই নয় সমগ্র ভারতের সম্পদ ছিল। সেই হিসেবে সার্বভৌম বাংলা প্রজাতন্ত্র ভারতের অবশিষ্টাংশের সাথে স্বেচ্ছায় যােগ দেয়ার কথা চিন্তা করতে পারবে কি? গান্ধীজীর প্রশ্নের ব্যাপারেও আবুল হাশিম পুনরায় জবাব দানে বিরত রইলেন। যাই হােক পিয়ারেলালের মতে এই প্রশ্নের কিছুটা জবাব বাংলার প্রধানমন্ত্রী শহীদ সােহরাওয়ার্দী ১৫ই মে তারিখে গান্ধীজীকে দিতে পেরেছিলেন। যুক্ত বাংলা ইন্ডিয়া ইউনিয়ন যােগদান করতে রাজি হবে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জনাব সােহরাওয়ার্দী বলেছিলেন বাংলা সাধারণতন্ত্র এবং ইন্ডিয়া ইউনিয়নের স্বার্থ সম্পর্কিত প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছু আপসনিষ্পত্তি অথবা কিছু বন্দোবস্ত করতে পারা যাবে। একে সন্ধি অথবা অন্য কোনাে নামে আখ্যায়িত করতে পারেন। পিয়ারেলাল লিখেছেন, পরের দিন ১১ই মে শহীদ সােহরাওয়ার্দী বাংলার মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী বগুড়ার মােহাম্মদ আলী ও আবুল হাশিমকে সঙ্গে করে গান্ধীজীর কাছে এলেন। তাঁদের আলােচ্য বিষয় ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার প্রজাতন্ত্র বিষয়। গান্ধীজী শহীদকে বােঝাবার চেষ্টা করলেন যে হৃদয়ের সম্পূর্ণ এবং আসল পরিবর্তন দরকার। প্রধানমন্ত্রী যদি আশা করেন যে হিন্দুরা তার প্রকাশ্য ঘােষণা গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে তাহলে সেটা তার ব্যবহারে এবং প্রশাসনের মধ্যে প্রতিফলিত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শহীদ সােহরাওয়ার্দী দৃঢ়তার সাথে বললেন যে কলকাতায় শান্তি বজায় রয়েছে। এবং কেউই বাংলার সরকারকে কোনাে অবিচারের জন্য দোষারােপ করতে পারেন না। গান্ধীজী তখন বললেন প্রশাসনের প্রধান হিসাবে বাংলায় প্রতিটি মৃত্যু সংগঠিত হওয়ার জন্য নৈতিকভাবে তিনি দায়ী ছিলেন, তখন সােহরাওয়ার্দী ক্রুব্ধ হয়ে উঠলেন এবং পাল্টা গান্ধীজীকে দোষারােপ করে বললেন গান্ধীজী সমস্ত গন্ডগােলের স্রষ্টা। জবাবে গান্ধী সােহরাওয়ার্দীকে বললেন- ‘কী অদ্ভুত লােক রে বাবা।” সােহরাওয়ার্দী কামরা ত্যাগ করার পর লীগ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গান্ধীজী বললেন- ‘হাশিম, অসুবিধা হচ্ছে এই যে সােহরাওয়ার্দীকে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না।’
ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের রােয়েদাদ ঘােষণা করেন ৩রা জুন, ১৯৪৭ সাল। স্থির হয় ১৪ই আগস্ট
পৃষ্ঠাঃ ৩৫
মধ্যরাতের পূর্বে করাচীতে এবং ১৫ই আগস্ট দিল্লিতে যথাক্রমে পাকিস্তান ও ভারত ডােমিনিয়নের কাছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। ইতিপূর্বে সভরেন সােশ্যালিস্ট ইউনাইটেড বেঙ্গল বা গ্রেটার বেঙ্গল বা স্বাধীন সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চূড়ান্তরূপ গ্রহণ করে। ভারত বিভক্ত হলেও বাংলাকে অখণ্ড রাখার জন্যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের হাশিম-সােহরাওয়ার্দী গ্রুপ, শরৎ বসু ও কিরণ শঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে বঙ্গীয় কংগ্রেসের একটি শক্তিশালী উপদল এবং বঙ্কিম মুখার্জী ও সােমনাথ লাহিড়ী প্রমুখের নেতৃত্বে বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালান। কিন্তু ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্ররােচনায় মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীলরা কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়াশীল উপদল ও হিন্দু মহাসভার সঙ্গে গােপন চক্রান্তের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্র বা গ্রেটার বেঙ্গলের প্রস্তাব বানচাল করার জন্যে সর্বপ্রকার চক্রান্ত চালায়। গান্ধী-জিন্নার কিছু কিছু সমর্থন ছিল এ প্রস্তাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেস হাই কমান্ড, মুসলিম লীগের একাংশ ও হিন্দু মহাসভা ব্রিটিশ সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে অখণ্ড সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধাদান এবং তাঁদের বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব বাস্তবায়নে সক্ষম হন। পশ্চিম বাংলার কোনাে কোনাে লেখক ও চিন্তাবিদ তাঁদের রচনায় বাংলা বিভাগের জন্যে সরাসরি পন্ডিত জওয়াহেরলাল নেহরু, সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল ও ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে দায়ী করেছেন। মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব পিয়ারেলাল বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলােচনা করেছেন তাঁর গ্রন্থে। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে সেদিন প্যাটেলনেহরুর পুরােপুরি যােগসাজশ ছিল হিন্দু মহাসভার প্রধানতম নায়ক ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সঙ্গে। পক্ষান্তরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর প্রত্যক্ষ যােগাযােগ ছিল দিল্লির ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে। একদা ফোর্ট উইলিয়াম নির্মাণ করে ব্রিটিশ বণিক সংগঠন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যার জন্যে ইতিহাসের নজিরবিহীন পাপে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের উত্তর পুরুষ লর্ড মাউন্টব্যাটেন একশ নব্বই বছর পর যদি সেই বাংলার নব উত্থান প্রতিহত করতে উদ্যত হয়, তবে আর বিস্ময়ের কী আছে। কিন্তু অবাক হতে হয় তাদের জন্যে যারা বাংলা ভাষা, বাংলায় সংস্কৃতি, বাংলার ইতিহাস, বাংলার ঐতিহ্য, সর্বোপরি বঙ্গমাতার অমঙ্গল চিন্তায় প্রতিনিয়ত অশ্রুপাত করতেন। বাংলা বিভাগের মাধ্যমে ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এবং তার মুসলিম দোসর ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী কুচক্রীদের যে মানসিকতা ফুটে উঠেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের কাছ থেকে তার বিকল্প আশা করা যায় কি?
পৃষ্ঠাঃ ৩৬
এরপরের ঘটনা দ্রুত ঘটতে থাকে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার হিন্দু-মুসলিম প্রতিক্রিয়াশীল দেশীয় মিত্ররা এক জোট হয়ে বাংলার রাজনীতিতে তাদের প্রধানতম শত্ৰু হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী ও তার দলবলকে পর্যুদস্ত করতে উঠে পড়ে লেগে যায়। বাংলা ভাগ করে ফোর্ট উইলিয়ামসহ বহু স্মৃতি বিজড়িত কলকাতা তারা কব্জায় পায়। এবার তারা দেখে নিতে বদ্ধপরিকর সােহরাওয়ার্দী গ্রুপের প্রগতিশীল রাজনীতির পরিসমাপ্তি। তারা নিয়ােগ করেন তাঁদের সর্বশক্তি। আর বিভক্ত বাংলার অপরাংশ- যার নাম পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান, ন্যস্ত হয় প্রতিক্রিয়ার জবরদস্ত নেতা খাজা নাজিমউদ্দিনের উপর। এসব দেখেশুনে ব্রিটিশ সরকার যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য পিয়ারেলালের মন্তব্য। তিনি লিখেছেন যে, ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর সঙ্গে আলােচনাকালে গান্ধীজী তার বঙ্গ বিভাগের আগ্রহ লক্ষ্য করে সপ্রশ্ন দৃষ্টি নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়েছিলেন। ডক্টর মুখার্জী এক উদ্ভট যুক্তির অবতারণা করে বলেন যে, স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলা প্রজাতন্ত্রের চিন্তা ইংরেজ সাহেবদের মাথাতেই প্রথম গজিয়ে থাকবে। তার যুক্তিটি গান্ধীজী মেনে নিতে পারেননি। জবাবে গান্ধীজী তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু সোহরাওয়ার্দী তাে দুই সম্প্রদায়ের শ্রদ্ধাভাজন ও স্বীকৃত প্রতিনিধিদের নিয়েই সে পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়ন করতে অগ্রসর হয়েছেন।’ প্রশ্ন শুনে শ্যামাপ্রসাদ গান্ধীজীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘ফেডারেল বেঙ্গল হয়ে যাবার পরে যদি হিন্দুরা ভারতবর্ষে এবং মুসলমানেরা পাকিস্তানে যােগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন কী হবে? সে কথার জবাবে গান্ধীজী বলেন যে, সে অবস্থা যদি এসেই যায়, তবে তার সমাধান তাে বাংলার হিন্দু মুসলমান মিলিতভাবেই করতে পারবে। অন্তত ব্রিটিশরাজ তাে সে ক্ষেত্রে আর নাক গলাবার সুযােগ পাবে না।।
সেদিন ভারত ব্যবচ্ছেদ, খণ্ডিত বাংলা ও কাশ্মীর সমস্যা সৃষ্টির মূলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যে হাত ছিল কিছুদিন পরেই তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কিন্তু যা হবার তা হয়ে গেল। পলাশীর পর এক অসীম গৌরবময় বাংলার নব অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা বাঙালিকে হাতছানি দিয়ে ডেকে গেল। কিন্তু নিজেদের নিছক মূঢ়তার জন্যে বাংলার এক শ্রেণির নেতৃবৃন্দ সে সুযােগ গ্রহণ করতে অমার্জনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। বােধ হয় তাদের পূর্বসূরিরা অনুরূপভাবে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ডুবিয়ে দিয়ে থাকবেন। এরূপ বিষাদময় ঐতিহাসিক পটভূমিতে পূর্ব বাংলায় সরকার গঠনের জন্যে নেতা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর্ব উপস্থিত হয়। শহীদ সােহরাওয়ার্দীর ভক্তদের কেউ কেউ সেদিন তার পাশে দাঁড়ালেন। আবার কেউ কেউ ব্রিটিশ, ভারতীয়
পৃষ্ঠাঃ ৩৭
ও মুসলিম পুঁজিবাদের অর্থের মােহে তাঁকে পরিত্যাগ করেন এবং সরাসরি ভােট দেন খাজা নাজিমউদ্দিনের পক্ষে। ইতিপূর্বে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে শেরে বাংলা ফজলুল হক ও আবুল হাশিমের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার সৃষ্টি হয়। তা নিয়ে ঘটে হাশিম সাহেবের সাথে সােহরাওয়ার্দীর মতবিরােধ। লীগ সভাপতির পদে শেরে বাংলার বিরুদ্ধে হাশিম সাহেবের প্রতিযােগিতা সােহরাওয়ার্দী সাহেব পছন্দ করেননি। পরিণতিতে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল মহলের দ্বিধাবিভক্তি। পূর্ব বাংলার আইন সভার নেতা নির্বাচনে শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সমর্থকদের ধারণা নেতা নির্ধারিত হবার পর কালবিলম্ব না করে যুক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতার অর্থনৈতিক ও বৈষয়িক প্রাপ্য যার পরিমাণ নতুন রাষ্ট্রের জন্যে বিপুল সেই হিস্যা ফেলে রেখে তড়িঘড়ি করে বাংলার নব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন তাঁর দলবলসহ ছুটে এলেন ঢাকায় নতুন সরকার চালু করার উদ্দেশ্যে। দেশবিভাগজনিত কারণে পশ্চিম বাংলায় বিক্ষোভ ও দাঙ্গা হাঙ্গামার শুরু হয় নতুন করে। প্রতিক্রিয়ার চক্রান্তে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন দুই মহানায়ক- মহাত্মা গান্ধী এবং হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী। তাঁদের সঙ্গে থাকলেন লীগ-কংগ্রেস-ফরােয়ার্ড ব্লকের একাংশ ও কমিউনিস্ট পার্টি। আজ বেলেঘাটায় কাল শ্যামবাজার আরেকদিন গােবরায় দাঙ্গা বিধ্বস্ত কিংবা দাঙ্গায় সন্ত্রস্ত মানুষকে আশ্বস্ত ও তাদের ব্যথায় ব্যথিত হতে ছুটে চললেন। তাঁরা দাঁড়ালেন প্রপীড়িত মানুষের পাশে। এমনি এক সন্ধ্যায় বেলেঘাটায় এক প্রার্থনাসভায় গান্ধীজীর পাশে উপবিষ্ট শহীদ সােহরাওয়ার্দীকে লক্ষ্য করে একটি ব্রেনগান যখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ট্রিগার এ্যাকশনে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে গান্ধীজী নিজের বুকের আড়ালে শহীদকে আশ্রয় দিয়ে গর্জে উঠেছিলেন, কাপুরুষ, প্রথমে আমাকে গুলি কর। কিন্তু প্রতিক্রিয়ার ভাড়াটে ঘাতকদের নৈতিক দুর্বলতায় বুক কেঁপে উঠেছিল। পরে তাদের হীন উদ্দেশ্য মহাত্মাজীর মহত্ত্বের কাছে নতি স্বীকার করে, তারা আত্মসমর্পণ করে।
হাশিম-সােহরাওয়ার্দীর দুঃখজনক বিরােধ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের বামপন্থী গ্রুপ পুনরায় সংঘবদ্ধ হওয়ার প্রস্তুতি চালান ঢাকায় পূর্ব বাংলার রাজধানীতে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৪৩ সালে নভেম্বরে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হবার পর আবুল হাশিম দেশবাসীর সামনে যে প্রগতিশীল কর্মসূচি পেশ করেন তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলার মুসলিম ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। তার উত্তাল তরঙ্গ এতই প্রচণ্ড ছিল যে, তার ধাক্কায় বুড়িগঙ্গার তীরে
পৃষ্ঠাঃ ৩৮
অবস্থিত প্রতিক্রিয়াশীলদের দুর্গ আহসান মঞ্জিলের কায়েমী আসন ধসে ধসে পড়ে। আবুল হাশিমের ঘােষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরই ভাবশিষ্য আওলাদ হােসেন, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, কমরুদ্দিন আহমদ, শামসুল হক, শাসুদ্দিন আহমদ মুসলিম লীগকে সামন্তবাদের কজা থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন ১৫০ পুরনাে মােগলটুলীতে, প্রাণ চঞ্চলতার কেন্দ্রভূমিতে। ক্রমে ক্রমে ‘পকেট মুসলিম লীগ ‘আম’ মুসলিম লীগে রূপান্তরের লক্ষ্যে অনাগত নেতৃত্বের প্রত্যাশায় রইলাে। প্রগতির ধারা একবার সঠিক খাতে সাচ্চা নেতৃত্বে প্রবাহিত হলে তা সহজে রুদ্ধ হয় না। দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ঘাত-প্রতিঘাতের চড়াই-উত্রাই অতিক্রম করে সে ধারা চলতে থাকে ইতিহাসের অবারিত পথ ধরে। ঐতিহাসিক বস্তুবাদের এটাই ধারা, এটাই নিয়ম, এটাই বিজ্ঞান, এটাই অমােঘ সত্য। মানিকগঞ্জের আওলাদ হােসেনকে সভাপতি, মুন্সীগঞ্জের শামসুদ্দিন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ঢাকা জেলা মুসলিম লীগের যে গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হয় খাজা পরিবারের কারাে কারাে শত হুমকির মুখেও তার গতি কখনাে রুদ্ধ হয়নি। কালান্তরে তাঁদেরও কেউ কেউ নিজেদের ভ্রান্তি উপলব্ধি করেন এবং মিলিত হন সংগ্রামী জনতার কাফেলায়, তার অগ্রযাত্রায়।
১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় গঠিত হয় গণআজাদী লীগ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পূর্ব মুহূর্তে তার সাম্প্রদায়িক নখদস্ত উপেক্ষা করে এই অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের জন্মদান ও তার বিকাশ সাধনে যারা আত্মনিয়ােগ করেছিলেন সেই কমরুদ্দিন আহমদ ও তাঁর সাথী তাজউদ্দিন আহমদ, অলী আহাদ, মােহাম্মদ তােয়াহা প্রমুখ ইতিহাসের পাতায় অবিস্মরণীয় হয়ে থাকলেন। জিন্দাবাহার প্রথম গলিতে কমরুদ্দিন আহমদের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভাগুলােতে মােহাম্মদ তােয়াহা, অলী আহাদ, তাজউদ্দিন। আহমদ, নজমুল করিম প্রমুখ নিয়মিত যােগদান করতেন। সাম্প্রদায়িক বিভেদের প্রচণ্ডতার মুখে সেদিন তারা যে নিদারুণ প্রতিকূল পরিবেশকে উপেক্ষা করেও সাচ্চা অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল চেতনার স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন আজ ইতিহাসের ঝড়ঝাপটায় ক্ষতবিক্ষত দেশ ও সমাজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে কথা বিশেষভাবে মনে পড়ে। সারা মন যেন ভরে যায় গৌরবে, আত্মশ্লাঘায়।
এরূপ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একদিন হাশিম-সােহরাওয়ার্দী গ্রুপের বামপন্থী নেতারূপে পরিচিত ফরিদপুরের শেখ মুজিবুর রহমান, রাজশাহীর আতাউর। রহমান ও নইম উদ্দিন আহমেদ, দিনাজপুরের দবিরুল ইসলাম, নােয়াখালীর শহীদুল্লা কায়সার ও আজিজ আহমদ, সিলেটের তসদ্দক আহমেদ, আখলাকুর
পৃষ্ঠাঃ ৩৯
রহমান ও মােয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী এবং পিরােজপুরের নুরুদ্দিন আহমদ প্রমুখ এসে যুক্ত হলেন ঢাকায় বামপন্থী গ্রুপের কেন্দ্রভূমি ১৫০ পুরনাে। মােগলটুলিতে। কলকাতা প্রত্যাগত বামপন্থী কর্মীরা যেদিন ঢাকার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বামপন্থীদের সঙ্গে মিলিত হলেন সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল যেন অনাগত দিনের শােষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়ের অবিনাশী স্বাক্ষর। ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত গণআজাদী লীগের কর্মসূচি শুধু অসাম্প্রদায়িকই ছিল না, তার মধ্যে নিহিত ছিল সমাজ প্রগতির কতিপয় মৌলিক উপাদান। এক পর্যায়ে গণআজাদী লীগের প্রগতিশীল ধ্যানধারণার ভিত্তিতে এবং নতুন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্যে একটি রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন আহ্বানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্থির হয়, ১৯৪৭ সালের ২৪শে আগস্ট তারিখে ঢাকায় উক্ত কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ৩১শে জুলাই কর্মীদের এক বৈঠকে কফিলউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে যে অভর্থনা কমিটি গঠিত হয় তার সদস্য। ছিলেন তসদ্দক আহমেদ, শেখ মুজিবুর রহমান, আতাউর রহমান, শহীদুল্লা কায়সার, মােহাম্মদ তােয়াহা, কমরুদ্দিন আহমদ, নজমুল করিম, নইমউদ্দিন আহমেদ, আজিজ আহমদ, অলী আহাদ, আখলাকুর রহমান, তাজউদ্দিন আহমদ, হাজেরা মাহমুদ ও মােয়াজ্জেম আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। সময়টি ছিল নানান কারণে ঐতিহাসিক। ইতিপূর্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কৃষক সভার নেতৃত্বে সারা বাংলায় শুরু হয়েছিল তেভাগা আন্দোলন। কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ জেলার উত্তরাঞ্চল- কলমাকান্দা শেরপুর হালুয়াঘাট নলিতাবাড়ি ও শ্রীবর্দি- এই পাঁচটি থানার পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় একশত পঞ্চাশ মাইল এবং উত্তর-দক্ষিণে সাত থেকে নয় মাইলব্যাপী শুরু হয় জঙ্গী টংক আন্দোলন। উপরােক্ত এলাকায় আদিম অধিবাসী বলে কথিত গারাে, হাজং, ডালু, বানাই, কোচ, রাজবংশী ও কিছু কিছু খাসিয়ার বাসস্থান।
ইতিপূর্বেও এই অঞ্চলে টংক প্রথার বিরুদ্ধে কখনাে বিক্ষোভ, কখনাে বা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতাে। গারােদের মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থাকার দরুন সমগ্র উপজাতি হিসেবে তাদের সবাইকে আন্দোলনে পাওয়া যায়নি সত্য, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনেকে যােগ দেয়। তবে কৃষক আন্দোলনে সামগ্রিকভাবে যােগ না দিলেও সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী আন্দোলনের জোয়ারে গারােরা সাড়া দিয়েছে। হাজং ও অন্যান্য উপজাতির বেলায় দেখা গেছে ভিন্ন রূপ। তারা যেমন নির্যাতিত কৃষক শ্রেণিরূপে সামন্ত রাজাদের বিরুদ্ধে তীব্র শ্রেণি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে, তেমনি অংশগ্রহণ করেছে সাম্রাজ্যবাদবিরােধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে।
পৃষ্ঠাঃ ৪০
কাজেই কমরেড মণি সিংহের পক্ষে হাজং অধ্যুষিত উক্ত অঞ্চলে স্বাধীন কৃষক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কাজটি ছিল বেশ কঠিন। তা সত্ত্বেও কিছুদিনের জন্যে হাজং এলাকায় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সে রাষ্ট্র কিছুদিন স্বাধীনতা ভােগও করে। পরে অবশ্য কৃষক বিদ্রোহ দমন করা হয় এবং নেতা ও কর্মীদের অনেকে হন, গ্রেফতার। মণি সিংহসহ অনেককে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়ে। পাকিস্তান সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রথমে গ্রেফতারী পরােয়ানা ও পরে হুলিয়া জারি করায় তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে আশ্রয় নিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকেন। প্রায় একই সময়ে কমরেড বারীন দত্ত প্রমুখের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সিলেটে নানকার কৃষক বিদ্রোহ। পূর্ব পাকিস্তান সরকার তাই কমিউনিস্ট জুজুর ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তারা শেখ মুজিবসহ হাশিম-সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের বামপন্থী মুসলিম লীগারদের বিরুদ্ধেও প্রচার চালালেন তাদেরকে কমিউনিস্ট বা কমিউনিস্ট ঘেঁষা বলে। কমিউনিস্ট পার্টি তার নেতা ও কর্মীদের উপর প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানীদের জুলুম ও নির্যাতন ছিল। নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সরকারের গােয়েন্দাবাহিনি এবং মুসলিম লীগের ধর্মান্ধ কর্মী ও গুণ্ডাবাহিনির ছিল তখন ত্রাসের রাজত্ব। এরূপ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কফিলউদ্দিন চৌধুরী ও শামসুল হকের পরিচালনাধীন অভ্যর্থনা কমিটির প্রতি সরকার ও মুসলিম লীগের বিভিন্ন বাহিনির ছিল অবন্ধুসুলভ মনােভাব। উপরােক্ত কারণে উদ্যোক্তারা সম্মেলন অনুষ্ঠানের উপযােগী কোনাে হল কিংবা স্থান পাননি। কিন্তু চূড়ান্ত আশাভঙ্গের অব্যবহিত পূর্বে মুসলিম লীগ সরকারের সেই চ্যালেঞ্জ মােকাবিলা করবার সৎ সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন এক সিংহপুরুষ। তিনি ঢাকা পৌরসভার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আবুল হাসনাত আহমদ। তিনি বেচারাম দেউড়িতে অবস্থিত তাঁর বাসভবনের প্রকান্ড ফটক উন্মুক্ত করে দিয়ে বাংলার শােষিত নিপীড়িত মানুষের ভাবী প্রতিনিধি ও নেতাদের প্রতি উদাত্ত কণ্ঠে আমন্ত্রণ জানিয়ে বললেন, তারা যদি তার গৃহে সম্মেলন অনুষ্ঠান করেন তবে তিনি নিজেকে ধন্য মনে করবেন। বলাবাহুল্য তাঁর সে উদার ও সাহসিকতাপূর্ণ আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করা হয়। এমনিভাবে ১৯৪৭ সালের ৬ই ও ৭ই সেপ্টেম্বরে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন কায়েমী স্বার্থবাদীদের অসত্য প্রচারে ঢাকার রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। নানান বাধা, বিধিনিষেধ ও উস্কানি চলেছিল বিরামহীনভাবে। উদ্যোক্তারা তবুও ধৈর্য ধারণ করেন। একটি সুখী সমৃদ্ধশালী ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সম্মেলনে গৃহীত হয় একটি ঘােষণাপত্র। তাতে বর্ণিত কর্মসূচি, তার রূপ-প্রকৃতি ও চরিত্র ছিল। অসাম্প্রদায়িক, জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল।
পৃষ্ঠাঃ ৪১
ইতিপূর্বে ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে গঠিত গণআজাদী লীগ ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। তখনও পাকিস্তানের জন্ম হয়নি। কাজেই যুগটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সমগ্র পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক যুবলীগই প্রথম রাজনৈতিক চরিত্রের যুব সংগঠন, যাকে প্রকৃত অর্থেই বলা চলে প্রথম অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক জাতীয়তাবাদী ও প্রগতিশীল যুব আন্দোলন, রাজনৈতিক দল নয়। শামসুল হক নির্বাচিত হয়েছিলেন তার প্রথম আহ্বায়ক এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও আতাউর রহমান তার যুগ্ম আহ্বায়ক। কলকাতায় হাশিম-সােহরাওয়ার্দী গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে একদা অসাম্প্রদায়িক ও বামপন্থী রাজনীতির যে উন্মেষ ঘটে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তাদেরই উদ্যোগে পূর্ব বাংলায় শুরু হয় নবযাত্রা। আর সে নবাত্রায় যাদের অক্লান্ত শ্রম ও অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ছিল দুঃসাহসী ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
রেফারেন্স – প্রসঙ্গ শেখ মুজিব, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস