You dont have javascript enabled! Please enable it!

মহান ৭ই জুন
আমাদের জাতীয় নেতৃত্বে বৈপ্লবিক উপাদান

মহান ৭ই জুন, ১৯৬৬ সাল।
আমাদের সুদীর্ঘ জাতীয় সংগ্রামে এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাপক, গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী। অতীতের সকল জাতীয় আন্দোলনের প্রধান দুর্বলতা ছিল নেতৃত্বের। অধিকাংশ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরিত্রে তারা দোদুল্যমান, কখনাে আপসকামী, কখনাে বা হঠকারী। ৭ই জুন আন্দোলনের নেতৃত্বে যে নতুন উপাদান সংযুক্ত হয় শ্রেণি হিসাবে তারা সংগ্রামী, তারা নির্ভীক, তারা বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণি। তার ফলে পরবর্তীকালে সংগ্রামগুলাের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে বহুলাংশে এবং আন্দোলনের বিজয় হয় নিকটবর্তী। পাকিস্তান আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল মূলত এদেশের সামন্ত শ্রেণি। তার সঙ্গে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় মুসলিম বুর্জোয়া এবং শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত পেটিবুর্জোয়া শ্রেণি। শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবীর নেতৃত্ব ছিল তাতে নগণ্য, প্রায় অনুপস্থিত। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর আমাদের বাংলাদেশে সামন্ত শ্রেণির নেতৃত্ব যা অবশিষ্ট ছিল, ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ও ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে এবং ১৯৫৪ সালের মুসলিম লীগ বিরােধী যুক্তফ্রন্টের ২১-দফা আন্দোলনে সামন্তবাদের অবশেষ প্রচন্ড মার খায়, পর্যদস্তুও হয় নিদারুণভাবে। পরাভূত সামন্ত নেতৃত্বের সেই শূন্যস্থান পূরণ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে আগত তরুণ ও ছাত্র নেতৃত্ব এবং বুদ্ধিজীবীদের এক বিরাট অংশ। তার কিছুটা ছিল বৈপ্লবিক কিছুটা সুবিধাবাদী। সেদিনের সেই বিপ্লবী ও সুবিধাবাদী চেতনা আমাদের সমাজে অনেকদিন ধরে সহাবস্থান করে আসছিল প্রকটভাবে। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভবপর হয়েছিল? এ প্রশ্নের জবাব কঠিন নয়। তার কারণগুলাের অন্যতম ছিল ক্ষয়িষ্ণু সামন্ত সমাজের শূন্যস্থানে সংগঠিত ও শক্তিশালী বাঙালি বুর্জোয়া শ্রেণির আবির্ভাবে ঘটে বিলম্বে, নানান ঐতিহাসিক কারণে। বাঙালির মধ্য থেকে মুসলিম বুর্জোয়া শ্রেণির আবির্ভাব ঘটতে সময় লাগে আরাে দীর্ঘকাল। এরূপ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিতে বৈপ্লবিক মতাদর্শগত সর্বহারা।
পৃষ্ঠাঃ ১০২

শ্রমিক শ্রেণির অভ্যুদয় ও তার শক্তিশালী সংগঠনের অভাব অনুভূত হতে থাকে। সুতীব্রভাবে অনেকদিন ধরে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনকালে ভারত উপমহাদেশের এই অঞ্চল ছিল তাদের ‘হিন্টারল্যান্ড’। এটা ছিল সস্তা শ্রম ও কাঁচামাল যােগানদান এবং তাদের শিল্পজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের অবাধ চারণক্ষেত্র। সেই আধা ঔপনিবেশিক ও আধা সাম্রাজ্যবাদী বাণিজ্যিক স্বার্থের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই এই অঞ্চলে ব্যাপক শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণে অনিচ্ছা ছিল তাদের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও চক্রান্ত। ভারত বিভাগের পর প্রায় সমগ্র পাকিস্তানের কর্তাব্যক্তি আমদানি হয় সংখ্যালঘু পশ্চিমাঞ্চল থেকে। আর কিছুটা ভেসে আসে এশিয়াআফ্রিকা কোনাে কোনাে স্থান থেকে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত পাঞ্জাবী সামরিকবেসামরিক চক্র পূর্ব বাংলার বিরুদ্ধে সুদূরদর্শী ব্লু-প্রিন্ট প্রণয়ন ও কার্যকারিতায় তাদের শাসক ও শােষক পূর্বসূরিদের সেই একই নীতি অনুসরণ করতে থাকে। ফলে কমপ্রেডর বা মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া ও পেটিবুর্জোয়া শ্রেণির আবির্ভাব ও বিকাশ কিছুটা ঘটে। কিন্তু আমাদের সমাজে সেই ঐতিহাসিক কারণেই শক্তিশালী ও সুসংগঠিত বাঙালি শিল্প বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে উঠতে পারেনি। এর। ফলে বাংলাদেশে, আমাদের এই অঞ্চলের গােটা বুর্জোয়া সমাজে একটি প্রধান দুর্বলতা সাধারণের চোখের সম্মুখে আশু সংশােধনের প্রত্যাশায় অবস্থান করতে থাকে।
পাকিস্তানী শাসনকালে যেসব শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠে, তাদের মালিকানাও ছিল একইভাবে প্রধানত জাতি নিপীড়নে সিদ্ধহস্ত বাংলাদেশের বহিরাগত অবাঙালিদের হাতে। অমুসলিম বাঙালিদের কেউ কেউ ব্রিটিশবিরােধী ও অসহযােগ আন্দোলনের যুগে এদেশে কিছু কিছু কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করেন বটে; কিন্তু বাঙালি হবার অপরাধে সেসব শিল্প মালিকের অনেকেই হয়েছেন। নিগৃহীত ও নির্যাতিত, পরিশেষে বিতাড়িত। এঁদের মধ্যে ঢাকেশ্বরী কটন মিলের শ্রী সূর্য কুমার বসু, শ্রী সুনীল কুমার বসু, চিত্তরঞ্জন কটন মিলের শ্রী ধীরেন্দ্রনাথ বসু, লক্ষ্মীনারায়ণ কটন মিলের শ্রী রমেশ চৌধুরী, কুষ্টিয়ার মােহিনী মিলের শ্রী মােহিনী মােহন চক্রবর্তী, সাধনা ঔষধালয়-এর অধ্যক্ষ যােগেশ চন্দ্র ঘােষ, ঢাকা আয়ুর্বেদীয় ফার্মেসীর শ্রী চুনী রায়, শক্তি ঔষধালয়ের অধ্যক্ষ মথুরা মােহন চক্রবর্তী প্রমুখ দেশ দরদীর নাম অবশ্যই করতে হয়। সর্ব ভারতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে তাদের প্রত্যেকের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য ও গৌরবধন্য।
শ্রমিক কর্মচারী নিয়ােগের প্রশ্নে অবাঙালি মালিকদের মধ্যে জাতিগত ও সম্প্রদায়গত বৈষম্য ন্যাক্কারজনক। বাংলাদেশে বাস করেও বাঙালি শ্রমিক
পৃষ্ঠাঃ ১০৩

কর্মচারী নিয়ােগের ব্যাপারে তাদের অনীহা মনে জ্বালা ধরাতাে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে মােহাজের বলে পরিচিত অবাঙালিদের নিয়ােগের প্রশ্নে বাঙালি জনসাধারণ ও এদেশীয় সরকার উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে বরাবরই। ভাষাগত সাম্প্রদায়িকতার বিরােধ সত্ত্বেও এক্ষেত্রে তাঁদের মনে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বন্ধন ও তার প্রভাব ছিল বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতাে। কিন্তু এরূপ উদারতা ও সহনশীলতার মূল্য কিংবা প্রতিদান বাঙালি পায়নি। পরন্তু নিজ দেশে তারা ক্রমে ক্রমে হয়ে পড়ে পরবাসী। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধখ্রীস্টান প্রভৃতি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিয়ে তাদের শাসন ও শােষণযন্ত্র অটুট রাখবার প্রয়াস পেয়েছে। আর তৎকালীন হঠকারী চীন ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনপুষ্ট পাকিস্তানী ও ঔপনিবেশিক শক্তিবর্গ নিজেদের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখার লক্ষ্যে বাঙালি-পাঞ্জাবী-সিন্ধী পাঠানবেলুচ প্রভৃতির মধ্যে ভাষাগত ও জাতিগত বিরােধিতা সৃষ্টির জন্য নানারূপ কূটকৌশল অবলম্বন করতাে। শুধু তাই নয়, বাংলা-পশতু-সিন্ধী বেলুচগুরুমুখী ও উর্দু ভাষীদের মধ্যে ভাষাগত সাম্প্রদায়িক বৈষম্য তারা কাজে লাগিয়েছে বারবার। ব্রিটিশ শাসনের একশ নব্বই বছর ও পাকিস্তানী শাসনের পচিশ বছর মােট সুদীর্ঘ দুইশত পনেরাে বছর কাল ধরে এই উপমহাদেশে গড়ে উঠেছিল একটি শ্রমিক শ্রেণি। জনসংখ্যার তুলনায় তাদের সাংগঠনিক চেতনা ছিল দুর্বল। সাম্প্রদায়িক চেতনায় যারা ছিল নেশাগ্রস্ত, শ্রমিক শ্রেণির সেই অংশ আকৃতিতে ছিল ক্ষীণকায়, শ্রেণি চেতনায় দুর্বল, শ্রেণি সংগ্রামে বিমুখ এবং ধর্মীয় বা ভাষাগত বা সাম্প্রদায়িক বা আঞ্চলিক অথবা জাতিগত চেতনায় অধিকতর উৎসাহী। সাম্রাজ্যবাদী কিংবা ঔপনিবেশিক শাসনে ক্লিষ্ট পৃথিবীর প্রতিটি দেশ ও জাতিকেই রাখা হয় শিল্পে অনুন্নত। কৃষি প্রধান দেশ, কিন্তু কাঁচামাল সরবরাহ ছাড়া সামগ্রিক কৃষিকাজে ছিল তারা অনগ্রসর। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ। আর সব অনুন্নত দেশের দারিদ্র্যপীড়িত পশ্চাৎপদ সমাজ থেকেই আগমন ঘটে শ্রমিকের, সৃষ্টি হয় শ্রমিক শ্রেণির। তদুপরি ট্রেড ইউনিয়ন ভিত্তিক শ্রমিক আন্দোলন ও সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল সরকারের থাকে। নানাবিধ আপত্তি বাধানিষেধ ও চক্রান্ত। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তথাকথিত শ্রমিক অধিকারে রাজনীতি নিষিদ্ধ। অর্থনীতিবাদ বা ইকনােমিজম-এর আওতায় বেতন-বােনাস প্রভৃতির দাবিতে নানান বিধিনিষেধের বেড়াজালে ধর্মঘটের অধিকার সীমিতভাবে স্বীকৃত। কিন্তু সাচ্চা ট্রেড ইউনিয়নের বিপরীতে মালিকপক্ষের প্ররােচনায় গঠিত কিংবা মালিকপক্ষের নিজস্ব শ্রমিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপােষকতার কোনাে আইনানুগ বাধা থাকে না। ফলে শ্রমিক সাধারণ ও শ্রমিক নেতৃত্বের মধ্যে লুম্পেন প্রলেতারিয়েত বা মালিক ও
পৃষ্ঠাঃ ১০৪

সরকারের টাকা খাওয়া ভাড়াটে শ্রমিক নেতা ও শ্রমিক সংগঠনের ছড়াছড়ি। সেক্ষেত্রে শ্রমিকে-শ্রমিকে মারামারি, বিরােধ, সংঘর্ষ শিল্পাঞ্চলের অশান্তি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
কিন্তু সাধারণ ঘটনার ব্যতিক্রম সর্বত্রই থাকে, আমাদের দেশের শিল্পাঞ্চলেও ছিল এবং আছে। তাই মেকি শ্রমিক সংগঠনের পাশেই আবার সাচ্চা ট্রেড ইউনিয়নও গড়ে ওঠে। দেখা যায় লুম্পেন প্রলেতারিয়েতের পাশেই রেভলুশনারি ওয়াকার্স বা বিপ্লবী শ্রমিককে, বিপ্লবী সর্বহারাকে।
১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের আগে আমাদের দেশে শ্রমিক সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল অল্পবিস্তর। তার মধ্যে দুইটি মজদুর ফেডারেশন ও একটি লেবার ফেডারেশনের নাম করতে হয়। এদের একটি মজদুর ফেডারেশনের গায়ে আঁটা ছিল অতি-বিপ্লবীর পােশাক। অতি-বিপ্লবীদের কার্যকলাপ প্রকারান্তরে কখনাে কখনাে প্রতিবিপ্লবী। অপর মজদুর ফেডারেশন ছিল সংস্কারবাদী, সুবিধাবাদী। কাজেই তাদের পিছনে ব্যাপক শ্রমিক-জনগােষ্ঠীর সমর্থন ছিল না। লেবার ফেডারেশনে প্রত্যেকেই মুসলিম লীগ সরকার ও মালিকপক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণে সতত ব্যস্ত থাকতাে। মুসলিম লীগপন্থী শ্রমিক কর্মচারী ও অবাঙালি শ্রমিকদের বেশিরভাগ সমর্থন দিত লেবার ফেডারেশনকে। বলাবহুল্য, এ সব শ্রমিক সংগঠন ৬-দফা প্রস্তাবের বিরােধী ছিল। আওয়ামী লীগের তেমন কোন শ্রমিক সংগঠন তখনও গড়ে ওঠেনি। তেমনি অনুপস্থিত ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক শ্রমিক সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়ন। তবে কিছু কিছু সাচ্চা ট্রেড ইউনিয়নকর্মী বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন সমগ্র দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে। তারাই ৬-দফা প্রস্তাবের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিভিন্ন বৈঠকে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে সাধারণ শ্রমিকদের নিকট ব্যাখ্যা করতেন। দেশপ্রেমিক নিষ্ঠাবান ও সাচ্চা শ্রমিককর্মচারীরা যাচাই না করে কোনাে বিষয় গ্রহণও করেন না, বর্জনও করেন না। কিন্তু একবার যদি আলােচ্য বিষয় তাদের চিন্তার ফর্মায় মিলে যায় এবং মনঃপুত হয় তখন তারা সেটা গ্রহণ করেন। শ্রমিকদের তখন বােমা মেরেও তা থেকে একচুল নড়ানাে যায় না। এই হচ্ছে শ্রমিকের শ্রেণি চরিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত দিক। এ কারণেই বৈপ্লবিক শ্রেণি চেতনায় সমৃদ্ধ ও শ্রেণি চরিত্রের সুষ্ঠু বিকাশে বলীয়ান সাচ্চা নেতৃত্বে পৃথিবীর যে দেশেই বিপ্লব সাধিত হয়েছে, সে বিপ্লব দ্রুত তার সাফল্যের স্বর্ণদ্বারে পৌছে গেছে। দেশীবিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলচক্র ও সাম্রাজ্যবাদের যৌথ চক্রান্ত সতত অপচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি, পারেনি তাদের সাফল্য। প্রতিহত করতে। বরঞ্চ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে যেয়ে শেষ পর্যন্ত তারাই ঘায়েল হয়েছে এবং লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। সে বিপ্লব রাশিয়া, হাঙ্গেরি,
পৃষ্ঠাঃ ১০৫

চেকোস্লোভাকিয়া, ভিয়েতনাম কিংবা কিউবা যে দেশেই হােক না কেন, তার ইতিহাস প্রায় এক এবং অভিন্ন। তার সাক্ষী সাম্রাজ্যবাদের মােড়ল উইনস্টন চার্চিল ও রিচার্ড নিক্সন। তার সাক্ষী হিটলার, মুসােলিনী, তােজো ও ইরানের আর্যমেহের রেজা শাহ পাহলভী। তারা জানেন রাজনৈতিকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণি বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনে সংগঠিত হলে কি অসাধারণ সামাজিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।
৬-দফা প্রস্তাবের মধ্যে প্রধানত তিনটি বিষয়ে দাবি করা হয়েছে- রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক। এক নম্বর দুই নম্বর দফায় রয়েছে পাকিস্তান রাষ্ট্রের গঠন কাঠামাে ফেডারেল পদ্ধতির এবং পররাষ্ট্র নীতি ও দেশরক্ষা বাদে অবশিষ্ট সকল বিষয় স্বায়ত্তশাসিত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আঞ্চলিক সরকারদ্বয়ের উপরে ন্যস্ত করার দাবি। তিন, চার ও পাঁচ নম্বর দফাগুলাে অর্থনৈতিক। এতে উভয় পাকিস্তানের জন্য দুইটি পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থা কিংবা এক অঞ্চল থেকে অপরাঞ্চলে মুদ্রা পাচারের বিরুদ্ধে আইনগত বিধিনিষেধ সাপেক্ষে একটি মুদ্রার প্রচলনের জন্য উভয় অঙ্গরাজ্যে দুইটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা দাবি করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে খাজনা ও ট্যাক্স আদায়ের যাবতীয়। ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করে অঙ্গরাজ্যসমূহকে প্রদান, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দুইটি পৃথক তহবিল গঠন এবং এতদসংক্রান্ত শাসনতান্ত্রিক গ্যারান্টি ইত্যাদির দাবি। ছয় নম্বর প্রস্তাব সামরিক। এতে বাংলাদেশে প্যারা মিলিশিয়া বা আধা সামরিক বাহিনি গড়ে তােলা, একটি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, একটি সামরিক একাডেমি এবং নৌবাহিনির। সদর দপ্তর পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল। ১৯৬৬ সালের ২৩শে মার্চ তারিখে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জটিলতা দূরীকরণ এবং দেশে একটি সুষম ও গণতান্ত্রিক ধারা প্রবর্তনের লক্ষ্যে তার ঐতিহাসিক ৬-দফা প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বহু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময়ে দেশবাসীর খেদমতে দফার রাজনীতি পেশ করেছেন। কিন্তু ১৯৫৪ সালের ২১-দফা ও ১৯৬৬ সালের ৬দফা দাবি দেশবাসীর হৃদয়কে যেরূপভাবে স্পর্শ ও আলােড়িত করেছিল তার নজির তদানীন্তন বিশ্বে তুলনাহীন। আর একথা ভাবতে একটুও আশ্চর্য লাগে না যে এই ব্যাপক তিনটি বিষয়ের জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে এদেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ, প্রগতিশীল মেধা ও মস্তিষ্ক এবং শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষ। ঐক্যবদ্ধ এই মহাশক্তি পৃথিবীর সকল দেশেই অসীম ক্ষমতার অধিকারী। সর্বত্রই তাঁদের হাতে উন্মুক্ত হয় সমাজ প্রগতির বিপুল সম্ভাবনার অবারিত দ্বার।
পৃষ্ঠাঃ ১০৬

মহান ৭ই জুনের ঐতিহাসিক সংগ্রামের দুইটি পর্যায় আমরা লক্ষ্য করি। প্রথম পর্যায়ের সূচনা হয় ১৯৬৬ সালের ৮ই মে তারিখে নারায়ণগঞ্জে। ঐদিন অপরাহে শেখ মুজিব নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত ৬-দফার সমর্থনে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়ে রাতে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর মােনায়েম সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হলেন। তারপরে আরও যারা গ্রেফতার হন তাদের মধ্যে তাজউদ্দিন আহমদ, খােন্দকার মােশতাক আহমদ, চট্টগ্রামের এম. এ. আজিজ ও জহুর আহমদ চৌধুরী, ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া, পাবনার এম, মনসুর আলী, এ্যাডভােকেট আমজাদ আলী ও বগা মিয়াসহ আরাে অনেক নেতা ও কর্মী ছিলেন।
৬ দফা প্রস্তাবের বিষয়বস্তু সম্যক অনুধাবন ও তার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা চিন্তা করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইউব খান বেসামাল হয়ে। শেখ মুজিব, আওয়ামী লীগ তথা গােটা বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে অরাজনীতি ও সেনাপতিসুলভ অশালীন ও কথ্য ভাষায় বিষােদগার করতে থাকেন। তাতেও যখন কাজ হয় না, তিনি অস্ত্রের ভাষা প্রয়ােগের হুমকি দিলেন। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের কর্তাভজা গভর্নর আবদুল মােনায়েম খান বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় প্রমাণের জন্যে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় মুজিব ও তার আওয়ামী লীগের চৌদ্দ পুরুষ উদ্ধার করতে থাকেন। পিছনে তাদের সশস্ত্রবাহিনির সমর্থন। কাজেই দাপট কাকে বলে তিনি পাকিস্তানী ধরাকে মাষকলাই ডাল বরাবর মনে করলেন।
আবার গ্রেফতারের হিড়িক।
এবার কারাগারে গেলেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মােমিন, মােল্লা জালাল উদ্দিন, শামসুল হক, কে, এম. ওবায়দুর রহমান, রাশেদ মােশাররফ, মােহাম্মদ উল্লাহ, হাফেজ মুসা ও শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন প্রমুখ। এরূপ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন মহিলা সম্পাদিকা আমেনা বেগম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা হিসেবে। অবস্থা এরূপ চরম দাঁড়ালাে যে। সংগঠনের কোনাে কর্মকর্তা জেলের বাইরে ছিলেন না। এমনকি কোরাম হবার মতাে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য- সবাই তখন কারাগারে। ইতিমধ্যে ঘােষিত হয়েছিল ৭ই জুন প্রতিবাদ দিবস ৬ দফা দাবির প্রতি সমর্থনের দিবস। কর্মসূচি-সর্বাত্মক হরতাল-জনসভা-মিছিল-বিক্ষোভ। সূচনা হলাে মহান ৭ই জুনের ঐতিহাসিক সংগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায়। ঠিক এক মাস পরে।। ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক, মাজহারুল হক বাকী ও নূরে আলম
পৃষ্ঠাঃ ১০৭

সিদ্দিকী প্রমুখ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে গা-ঢাকা দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করেন, তাদেরকে সংগঠিত করতে থাকেন। বিপ্লবী চেতনায় সমৃদ্ধ শ্রমিক শ্রেণি ৬-দফার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৭ই জুনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে আসে। চোখেমুখে তাদের জ্বলন্ত প্রতিজ্ঞা মরি কি বাঁচি, পশ্চাদপসরণ নয়। সামনে বাড়াে- ডু অর ডাই।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃত্বদানের মতাে নেতা সব জেলে। ঠাই নেই জেলখানায়। তবুও ধরপাকড় সমানে চলছে। রাজবন্দিদের সে যেন অব্যাহত স্রোতধারা। নেতৃত্বে মহাশূন্যতা। আন্দোলন চালানাে দায়। এগিয়ে এলাে শ্রমিক নেতৃত্ব। আমাদের বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণি এবং সংগ্রামের সাথী, এবার হলাে সংগ্রামের নেতা। সমগ্র শিল্পাঞ্চলে তাদের নেতৃত্বে মিছিলের পর মিছিল, শ্রমিক-ছাত্র জনতার ঢল। মিছিলের ভাষা শুধু ‘৬-দফা জিন্দাবাদ’ নয়- সে ভাষায় সংযােজিত হয়েছে একটি বৈপ্লবিক স্লোগান- ‘জেলের তালা ভাঙবাে, শেখ মুজিবকে আনবাে।’ ‘জেলের তালা ভাঙাবাে, রাজবন্দিদের আনবাে।’ পাকিস্তানের পােষা সশস্ত্র বাহিনি রাইফেলের ট্রিগারে আঙ্গুল চেপে দাঁড়িয়ে গেছে মিছিলের গতি রােধ করতে। মনে পড়ে ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের দিনগুলাের কথা- ৪ঠা জুলাই তারিখে প্যারিসের পথে পথে ব্যারিকেড, মিছিল আর শ্রমিক-জনতার কণ্ঠে স্লোগান- ‘বাস্তিল দুর্গ ভাঙবাে, রাজবন্দিদের আনবাে’। এ যে সেই মারমুখী চেহারা। এ যে সেই বিপ্লবী প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ শ্রমিক শ্রেণি। তফাৎ শুধু প্যারিস আর ঢাকা-বাস্তিল দুর্গ আর কেন্দ্রীয় কারাগার। সময়ের ব্যবধান একশ সাতাত্তর বৎসর। কিন্তু সংগ্রামের ভাষায় কী অদ্ভুত মিল! এ দৃশ্যে গণদুশমন শাসক ও শােষকদের অন্তরাত্মা কেঁপে কেঁপে ওঠার কথা এবং কেঁপে উঠেও ছিল।
গুড়ম গুড়ম গুড়ম।
ভয়ার্ত শাসকের ভীতসন্ত্রস্ত বাহিনি গুলি করে বসেছে। স্থান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের তিব্বত কারখানার সম্মুখে। সময় সকাল সাড়ে নয়টা।
তারিখ ৭ই জুন ১৯৬৬ সাল।
এবার গ্রেফতার নয় শহীদ হবার পালা। যিনি প্রথম শহীদ হলেন তার নাম মনু মিয়া।
কী আদুরে নাম! কী অদ্ভুত মিষ্টি নাম! সেই নামের সেই আদুরে মানুষটি সমগ্র শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিরূপে প্রথমে বুকের রক্ত দিয়ে মহান যাত্রার মহান উদ্বোধন ঘটালেন।
পৃষ্ঠাঃ ১০৮

শ্রমিকের রক্ত ঝরেছে। এঁরা সর্বহারা। এদের হারাবার নেই কিছু, কিন্তু জয় করার আছে পাকিস্তান, আছে বাংলাদেশ, আছে আমেরিকা, আছে সারা বিশ্ব।
সিলেটের অধিবাসী মনু মিয়া। কিন্তু তিনি বাঙালি, তিনি শ্রমিক, তিনি সংগ্রামী, তিনি আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব নাগরিক। বেঙ্গল বেভারেজের সেভেন-আপ কারখানার বাইশ-তেইশ বছরের শ্রমিক মনু মিয়া। তিনি যুবক। যৌবনের প্রথম প্রহরে তার উষ্ণ রক্তে সিক্ত করলেন ঢাকার রাজপথ, নব উদ্বোধন ঘটালেন বাংলাদেশের বিপ্লব-উর্বর নরম মাটির। মনু মিয়ার রক্তাক্ত শার্ট এবার রক্ত পতাকা, মহান ৭ই জুনের রক্ত শপথ, রক্তাক্ত স্লোগান, বিপ্লবের বিজয় পতাকা, বিজয় ঘােষণা। শ্রমিক জনতার রুদ্ররােষে পাকিস্তানের কাপুরুষ সশস্ত্রবাহিনি এবার রুদ্ধশ্বাসে পালাচ্ছে। নিরস্ত্র শ্রমিক-জনতা তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরকে শিল্পাঞ্চলের চারদিকে। দশ নয়, বিশ নয়, সমগ্র শ্রমিক শ্রেণি, সমগ্র শিল্প এলাকার মারমুখী জনতা এবার রাস্তায় নেমেছে। তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে ভাড়টাতে বাহিনিকে সর্বত্র। এ যেন শিকাগাের সেই ‘হে মার্কেট। সেই আশি বছর আগেকার ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বিপ্লবস্পন্দিত সেই ১লা মে, ১৮৮৬ সাল। চলতে চলতে একটি ক্রুদ্ধ মিছিল এসেছে ভাওয়ালবাগ রেললাইনের উপর। এখানে বিরাট ব্যারিকেড, ট্রেন থামাতে হবে। অচল করে দিতে হবে আইউবী প্রশাসনযন্ত্র। ধ্বংস করতে হবে হানাদার শােষকদের ভাড়াটে সশস্ত্রবাহিনিকে চিরতরে।
ওদিক থেকে হুঁশিয়ারি আসছে: ‘আর এক পা অগ্রসর হয়েছে কি মরেছাে’আইউব বাহিনির ধমক। শ্রমিক-জনতার পাল্টা ধমক: ‘আইউব-মােনেম ভাই ভাই, এক দড়িতে ফাঁসি চাই।’ আবার হুঁশিয়ারি: ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছত্রভঙ্গ না হলে গুলি চালাবাে।’
: কি গুলির ভয়? ব্যাটারী চালা গুলি, দেখি কতাে মারতে পারিস। দুই হাতে ফাট ফাট করে বুকের জামাকাপড় ছিড়ে বুক পেতে দিয়েছে আঠারাে-উনিশ বছরের তরুণ শ্রমিক আবুল হােসেন। সঙ্গে সঙ্গে গুলি, সঙ্গে সঙ্গে ধরাশায়ী। নােয়াখালি জেলার সেনবাগের এক নিভৃত পরিবারের বীর সন্তান এই আবুল হােসেন। বর্তমানে বাংলাদেশ এলুমিনিয়াম, যার পাকিস্তানী নাম আজাদ এলুমিনিয়িমাম তারই একজন শ্রমিক ছিল সে। বয়সে তরুণ। কিন্তু কী অদম্য তার দেশপ্রেম। কতাে বড় বাঙালি সে। এঁরাই ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, রাজে
পৃষ্ঠাঃ ১০৯

লাহিড়ী, সূর্যসেন ও প্রীতিলতার মতাে শ্রেষ্ঠতম বাঙালির সার্থক উত্তরাধিকারী। রিলে রেসের মতাে এঁদের একজন আরেকজনকে এগিয়ে দিচ্ছেন বিপ্লবের অগ্নিগােলক হাতে দিয়ে, হাসিমুখে প্রাণ দিবার দীক্ষা দিয়ে। সাম্রাজ্যবাদবিরােধী জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্য পূর্বসূরিদের, আর শােষণমুক্ত শ্রমিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অগ্নিশপথ উত্তরসূরির। স্বাধীনতা থেকে শােষণমুক্তি ইতিহাসের পথ ধরে ধাপে ধাপে অগ্রগতি। বিপ্লবী পেটিবুর্জোয়া দিয়ে যে ধারার শুরু, বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে তার সম্ভাবনাময় গতিপরিণতির নির্দেশ।
বাংলাদেশ বিপ্লব-বিদ্রোহের দেশ, আন্দোলনের দেশ।
বাংলাদেশ ইতিপূর্বে বহু আন্দোলন দেখেছে। সে আন্দোলন ছিল প্রতিবাদমুখর, প্রতিরােধমুখর। সে আন্দোলনের আয়তনও ছিল বিশাল। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ও ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা কমিশন রিপাের্ট বাতিল আন্দোলন প্রকৃত অর্থেই জাতীয়রূপ ধারণ করে। কিন্তু সেগুলাের মধ্যে জঙ্গীভাবের অভাব ছিল। কারণ নেতৃত্বে ছিলেন দোদুল্যমান পেটিবুর্জোয়া শ্রেণি। শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সেখানে ছিল নগণ্য, প্রায় অনুপস্থিত। কাজেই পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ আমরা উপহার পেয়েছি, কিন্তু বুকের জামাকাপড় ছিড়ে দিয়ে সশস্ত্রবাহিনির গুলির সামনে বুক পেতে দেবার বৈপ্লবিক বীরত্ব জাতি ইতিপূর্বে লাভ করেনি। তা সম্ভব হলাে ১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের ৬-দফার জাতীয় সংগ্রামে। কারণ এই প্রথম একটি জাতীয় সংগ্রামের পুরােভাগে এলেন শ্রমিক শ্রেণি, বিপ্লবের সুবিশাল সম্ভাবনা নিয়ে। আর শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণের ফলে বাংলাদেশের পরবর্তী আন্দোলনগুলােও লাভ করে বলিষ্ঠ জঙ্গীরূপ, উপস্থিত হয় সফল বৈপ্লবিক পরিণতির সম্ভাবনাময় দ্বারপ্রান্তে। জয় মনু মিয়া-আবুল হােসেন। জয় মহান ৭ই জুনের সংগ্রাম। জয় বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণি।

রেফারেন্স – প্রসঙ্গ শেখ মুজিব, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!