খােয়াইতে পাক মিলিটারির দৌরাত্ম
ভারত সীমান্ত অতিক্রম করিয়া গুলিবর্ষণ ও লােক অপহরণ
খােয়াই ॥ গত ২৪ মে পাক মিলিটারি সীমান্তের একটি পাকিস্তানি গ্রামে ঢােকে। উহাদের একজন শাড়ি পরিহিত ছিল। গ্রামে ঢুকিয়া জোর করিয়া ছাগল, মােরগ ধরিতে ও লুটপাট করিতে চাইলে গ্রামবাসীরা বাধা দেয় ইহাতে পাক মিলিটারিরা তাহাদের গুলি করিতে চায়।
তখন গ্রামবাসীরা উহাদের উপর চড়াও হইয়া একজনকে নিহত করে অপরজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় খােয়াই হাসপাতালে লইয়া আসে। ইহার পর খােয়াই টাউনের অপর পাড়ে অবস্থিত পাক সৈন্যা আসাম পাড়া বাজার ও নিকটবর্তী গ্রামগুলাে জ্বালাইয়া দেয়। খােয়াই টাউন হইতে এই অগ্নিকাণ্ড দেখা যায়।
২৫ মে। সেই এলাকার ৩ জন পুরুষ ও একজন মহিলা পালাইয়া খােয়াই টাউনের নিকটবর্তী পহরমুড়া গ্রামের দিকে আসাকালীন পাক-মিলিটারিরা তাহাদের তাড়া করিয়া পাক সীমা পার হইয়া ভারতের অনেকখানি অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া গুলি ছোঁড়ে এবং একজনকে আহত করিয়া মহিলাটিকেসহ বাকি ৩ জনকে ধরিয়া পাকিস্তান অভ্যন্তরে লইয়া যায় ঐ সময় খােয়াই পহরমুড়া গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে হামলা করিয়া ঘরের দরজা ভাঙিয়া ফেলে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা পাক সৈন্য দেখিয়া পালাইয়া আসে।
এই ঘটনার পর দলে দলে এই এলাকার লোেক নিকটবর্তী ভারতীয় গ্রামগুলােতে প্রবেশ করিতে থাকে। পহরমুড়া, বেলছড়া, গৌরনগর প্রভৃতি ভারতীয় গ্রামে ৩-৪ হাজার লােক আশ্রয় নিয়াছে। উহারা ক্যাম্পে স্থান না পাইয়া অনেকে গাছতলায় গৃহস্থ বাড়ির আনাচে-কানাচে পড়িয়া রহিয়াছে।
আশারাম বাড়ির ঘাটবস্তির একজন হিন্দুস্তানি তাহার বাড়ি সংলগ্ন উদনাছড়াতে মুখ ধুইতে গেলে পাক সৈন্যরা তাহাকে ধরিয়া লইয়া যায়। ঐ এলাকায় কয়েক দিন আগে সাদা পােশাকে পাক সৈন্য প্রবেশ করিয়া মুক্তিফৌজের সন্ধান নেয় এবং স্থানীয় কৃষকদের বাগান হইতে তরকারি ও মরিচ পাড়িয়া লইয়া যায়।
উহাদের পেছনে পাক সৈন্যরা প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছিল। এই দিকে ভারত সীমান্ত ব্যাপিয়া পাকিস্তানিরা শক্ত ঘাঁটি গড়িয়া বসিয়াছে। এই এলাকার চা বাগানগুলাে হইতে আবার নতুন করিয়া দলে দলে চা শ্রমিকরা ত্রিপুরায় প্রবেশ করিতেছে। এখানে কোনাে ক্যাম্প না থাকায় তারা চরম দুর্দশায় ভুগিতেছে।
সূত্র: দেশের ডাক ০৪-০৬-১৯৭১