পাক-বাহিনীর গুলিতে নিহত ভারতীয় নাগরিকদের সম্পর্কে
লােকসভায় দশরথ দেবের ভাষণ
২৯ জুলাই, লােকসভায় ত্রিপুরা ও বাজার সীমান্তে পাক বাহিনীর গুলিতে ভারতীয় নাগরিক হতাহত প্রসঙ্গে এক দৃষ্টি আকর্ষণীয় নােটিশের উপর আলােচনায় শ্রী দশরথ দেব নিম্নোক্ত বক্তব্য রাখেন।
টাউনে এসে পড়ে। তার আঘাতে ২ জন নিহত হয় এবং ৪ জন আহত হয়।
শ্রীদেব বলেন, সােনামুড়া শহর সীমান্ত থেকে ৪/৫ মাইল দূরে। কী করে সােনামুড়া শহরে গুলি এসে পড়ল? পাক বাহিনী কি ত্রিপুরার অভ্যন্তরে ঢুকে গােলাবর্ষণ করেছিল?
শ্রীদেব বলেন, পাক মিলিটারির গােলাবর্ষণে ভারতীয় নাগরিকদের মৃত্যু এই প্রথম ঘটনা নয়। বাংলাদেশের ইয়াহিয়া খাঁর নৃশংস নরহত্যা অভিযানের পর থেকে আজ পর্যন্ত ত্রিপুরায় অনেক লােক হতাহত হয়েছে। সীমান্তবাসীদের জীবন ও সম্পদ রক্ষার কোনাে ব্যবস্থা করা হচ্ছে কিনা মন্ত্রী মহাশয়ের জবাব থেকে কিছু বুঝা গেল না।
প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আগরতলায় বলে এলেন যে, পাক বাহিনীর কাছ থেকে আসতে পারে এমন সকল প্রকার সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে ত্রিপুরার সীমান্ত বাসীদের রক্ষায় সকল প্রকার পাকাপােক্ত ব্যবস্থাই রয়েছে। কিন্তু এই ঘটনাবলী থেকে এই ব্যবস্থার অস্তিত্বের কোনাে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এই প্রতিশ্রুতি দেবার পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিলােনিয়া ও সাব্রুম সীমান্তে লােক মারা গেছে। আগরতলা শহরেও হতাহত হয়েছে। ইহা জানা কথা যে, ত্রিপুরার তিনদিক ঘিরে রয়েছে পূর্ব পাকিস্তান যেটাকে এখন আমরা বলি বাংলাদেশ। পাক বাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র তাদের আক্রমণ তীব্রতর করছে বিশেষত ত্রিপুরা সীমান্তে। এই পরিস্থিতিতে ইহা কি সরকারের অন্যতম মুখ্য দায়িত্ব হবে না যা ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী স্থানগুলােতে সামরিক চৌকি স্থাপন করা। সেখান থেকে সীমান্ত এলাকায় পাক বাহিনীর গতিবিধির প্রতি নজর রাখা।
খবরের কাগজে বেরিয়েছে যে, পশ্চিম পাকিস্তান বাহিনী ত্রিপুরা সীমান্তের আখাউড়া সিঙ্গারবিল এলাকার তিনটি গ্রাম থেকে লােকজনকে সরে যেতে আদেশ জারি করেছে ২৪ জুলাই। এই গ্রামগুলাে সিঙ্গারবিল রেলস্টেশনের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। আগরতলা বিমানবন্দর থেকে এক মাইলের বেশি ব্যবধান হবে না। আগরতলা সফর থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। এই রিপোের্ট থেকে অনুমান করা যায়, পাক বাহিনী উক্ত এলাকায় আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ তীব্রতর করতে পারে। আমি জানতে চাই যে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের সীমান্ত এলাকায় জনগণের ধনসম্পত্তি রক্ষা এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তার কি পাকাপােক্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে? শিবিরগুলাের অবস্থান পাক ভূখণ্ড থেকে কামানের রেঞ্জের মধ্যে। এটা জেনে তথায় শিবিরগুলাে স্থাপন করা হলাে কেন জবাব দেবেন কি? শ্রীশান্থ বলেছেন, মৃত ব্যক্তি এবং নষ্ট সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ পাক সরকারের নিকট দাবি করা হয়েছে। পাক সরকারের নিকট দাবি করতে হয় করুন। কিন্তু এটাতাে জানার কথা সে দাবি কখনও পাওয়া যাবে না। তাই জিজ্ঞাসা করি কেন্দ্র থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের এখনই কিছু আর্থিক সাহায্য দেয়া হবে কিনা?
সূত্র: দেশের ডাক
০১ আগস্ট, ১৯৭১
২৭ শ্রাবণ, ১৩৭৮