বিড়ালের উপর আক্রমণ বাঘের রুচিবিরুদ্ধ কাজ
বিড়াল যদি বেয়াড়া হয় বাঘ তখন বাধ্য হয় চড়চাপড়ে ওকে শায়েস্তা করতে
আগরতলা শিশু-ময়দানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীরামের দৃপ্ত ভাষণ
আগরতলা, ১ জুলাই ॥ গত ২৫ জুন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী শ্রীজগজীবনরাম ত্রিপুরা সফরে আসেন। ঐ দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় শিশু ময়দানে এক বিরাট জনসভায় তিনি বর্তমান পরিস্থিতির উপর নাতিদীর্ঘ ভাষণে ত্রিপুরার অধিবাসীগণকে বল ভরসা প্রদান করিতে যাইয়া বলেন, ‘বিড়ালের উপর আক্রমণ বাঘের রুচি বিরুদ্ধ কাজ; কিন্তু বিড়াল যদি বেয়াড়া উৎপাত শুরু করিয়া দেয় বাঘ তখন বাধ্য হইয়া চড় চাপড় দিয়া বিড়ালকে শায়েস্তা করে।’ ভারত সৃজনাবধি শান্তিকামী। হিংসা, দ্বেষ, পররাজ্য আক্রমণ ইত্যাদি ভারতের পক্ষে নীতি বিরুদ্ধ গর্হিত কাজ। কিন্তু যদি কেউ ভারতের শান্তি, নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা হনন করিতে চায়, ভারত তার সমুচিত জবাব দিতে কসুর করবে না। আমরা যুদ্ধ চাই না, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই; পাকিস্তান যদি সাধ করে আমাদের ঘাড়ে যুদ্ধ চাপাতে চায়, তার সেই সাধ পূরণ করার জন্য আমাদের জোয়ানরা প্রস্তুত। শ্রীরাম বাংলাদেশের এই মুক্তি সংগ্রামকে দ্বি-জাতিতত্ত্বের অবশ্যম্ভাবী ফল তথা প্রতিক্রিয়ারূপে বর্ণনা করেন এবং বলেন, হিংসা ও দ্বেষের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার পরিণতি হিসেবে আজ পাক মুসলমানগা পাক মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করছে। শ্রীরাম আরও বলেন, শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মরণপণ সংগ্রাম চলছে, ভারত সরকার তা সমর্থন করেন। ভারত বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কামনা করেন। তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের অভিনন্দন জানান এবং বলেন যে, লক্ষ লক্ষ বীরের রক্ত স্রোত বৃথা যেতে পারে না। সাড়ে সাত কোটি মানুষের জয় অবধারিত।
শরণার্থীদের উদ্দেশে তার বক্তব্য হলাে, আপনারা স্বাধীন বাংলাদেশ- মুজিবরের বাংলাদেশেই ফিরে যাবেন; ইয়াহিয়ার পাকিস্তানে নয়। যত তাড়াতাড়ি তা সম্ভব হয় তাই আমরা করবাে।’ শ্রীরাম পরদিন (২৬ জুন) মােহনপুর শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন এবং এই দিনই তিনি আগরতলা ত্যাগ করেন।
সূত্র: ত্রিপুরা
১ জুলাই, ১৯৭১
১৬ আষাঢ়, ১৩৭৮