You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.03 | চারি মাসের জন্য ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির শাসন- মন্ত্রিপরিষদের বিলুপ্তি এবং বিধান সভার সামরিকভাবে অবসর প্রাপ্তি | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

চারি মাসের জন্য ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির শাসন
মন্ত্রিপরিষদের বিলুপ্তি এবং বিধান সভার সামরিকভাবে অবসর প্রাপ্তি

আগরতলা, ৩ নভেম্বর। লােকসভার আগামী অধিবেশন বসিতেছে নভেম্বরের মাঝামাঝি। ঐ অধিবেশনে টেরীটরী ত্রিপুরাকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত করিবার বিল উঠিতেছে। ঐ বিল উত্থাপনের মুখে গত ১ নভেম্বর মধ্য রাতে ভারতের রাষ্ট্রপতি টেরটরী আইনের কয়েকটি ধারা স্থগিত করিয়া ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ শাসন প্রবর্তন আদেশ প্রদান করেন। ইহাতে বর্তমান বিধান সভার অস্তিত্ব বজায় থাকিলেও মন্ত্রিপরিষদের বিলুপ্তি ঘটানাে হইয়াছে। আপাতত চারি মাসের জন এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। অবস্থা বুঝিয়া অর্থাৎ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিলে পুনরায় এই বিধানসভা সদস্যগণকে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করিয়া শাসন ভার দেওয়ার অবকাশ ঐ ধারাতে রহিয়াছে। রাষ্ট্রপতির আদেশে উল্লেখ আছে যে, উপরাজ্যপালের রিপাের্টের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় সরকার এই ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন। গত ১ নভেম্বর ত্রিপুরার উপরাজ্যপাল এক আদেশ বলে আগামী ১৭ নভেম্বর ত্রিপুরা বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করিয়াছিলেন। রাষ্ট্রপতির শাসন প্রবর্তন দ্বারা উহার আর অবকাশ রহিল না। তবে এ কথা ঠিক, বিধানসভা সদস্যগণের মাসিক ভাতা যথারীতি চালু থাকিবে।
ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির শাসন প্রবর্তিত হওয়ায় জনসাধারণের মধ্যে কোনাে প্রতিক্রিয়া বা চাঞ্চল্যই প্রকাশ পায় নাই। তাহারা একদিকে পাক গুলিগােলার এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারেই ব্যস্ত, অন্যদিকে মুনাফাশিকারীদের করাল গ্রাস হইতে আত্মরক্ষার কাজে সর্বক্ষণ তৎপর, রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি লইয়া মাথা ঘামাইবার সময় কোথায়। বয়ােবৃদ্ধ রাজনৈতিক মহলের অভিমত হইল বর্তমান জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্রপতির শাসন প্রবর্তন সময়ােচিত কাজ হইয়াছে। দক্ষিণপন্থীগণের অভিমত হইল ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির শাসন প্রবর্তন দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, রাষ্ট্রপতির শাসন দলীয় স্বার্থের (তথা রাজনীতির) উর্ধ্বে। জনৈক কংগ্রেসী মন্ত্রীর অভিমত হইল ‘ইহার প্রয়ােজন ছিল। স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের আস্থা হারাইয়াছিলেন বলিয়াই ইহা ঘটিয়াছে।’ সি.পি.এম, এর বক্তব্য হইল শাঁখের করাতের মতাে। রাষ্ট্রপতির শাসন দ্বারা সিংহ সরকারের পতন ঘটানাে একটা অতি উত্তম কাজ। কিন্তু রাষ্ট্রপতির শাসন দ্বারা রাজ্যের পরিস্থিতির কোনাে উন্নতি হইবে না, অবনতিই হইবে। এখন শাসন করিবে দুর্নীতিপরায়ণ আমলারা এবং সি.আর.পি- যাহারা কায়েমী স্বার্থের ধারক ও বাহক। সি.পি.আই বলিতেছে কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে উপদল সৃষ্টি ও কোন্দল রাজ্যে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা পরিচালনাকে অসম্ভব করিয়া তুলিয়াছিল। রাষ্ট্রপতির (সরকারি) শাসন ক্ষমতার দ্বারা দলীয় সমস্যা সমাধানের নিমিত্ত হাতিয়ারস্বরূপ রাষ্ট্রপতির শাসন প্রবর্ত্তা অগণতান্ত্রিক পন্থা। আমলাতন্ত্রের শাসন দ্বারা ত্রিপুরার অবনতি ছাড়া উন্নতি হইবে না।
ফরােয়ার্ড ব্লক বলিয়াছে, ত্রিপুরা রাজ্যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস রাষ্ট্রপতি শাসন প্রয়ােগে স্বৈরতন্ত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হলাে। ইন্দিরা সরকার গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক- সম্পূর্ণ অবিশ্বাস্য। ত্রিপুরার সিংহ সরকারের স্বৈরাচারকে অপসারণ করতে ফ্যাসিস্ট শাসনের প্রয়ােজন ছিল না।’
নয়াদিল্লীর রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত পাক আক্রমণজনিত গুরুতর পরিস্থিতির দরুন ত্রিপুরায় রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হইয়াছে। ইহার সহিত ত্রিপুরার রাজনৈতিক অবস্থার কোনাে সম্পর্ক নাই। প্রশাসনের সর্বস্তরে কাজ দ্রুততর সম্পন্ন করাই এখানকার সবচেয়ে জরুরি প্রয়ােজন। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের আইন অনুযায়ী লে. গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বের ক্ষেত্র-স্বতন্ত্র। এই দুই স্বাতন্ত্রে সময় সময় দ্রুত কাজ সম্পাদনে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। সরকার মনে করেন মন্ত্রিগণকে অব্যাহতি দিলে প্রশাসনিক কাজকর্ম দ্রুততর হইবে।

সূত্র: ত্রিপুরা
৩ নভেম্বর, ১৯৭১
১৬ আশ্বিন, ১৩৭৮