You dont have javascript enabled! Please enable it!

মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বিবৃতি

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)র ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষ হইতে নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রচার করা হইয়াছে:
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ সাহায্যপুষ্ট হয়ে ইয়াহিয়া সামরিক চক্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করার জন্য তাহাদের আক্রমণের তীব্রতা আরাে বাড়াইয়াছে। নিশ্চিত পরাজয়ে ভীত পাক-সরকার শেখ মুজিবের বিচার প্রহসনও প্রকাশ্যে করার সাহস রাখে না। পাক-দস্যু বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হাজার হাজার শরণার্থী এখনাে ত্রিপুরায় প্রবেশ করিতেছেন। পাক হানাদারদের গােলাগুলি ইতিমধ্যেই ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকার প্রায় ৫০/৬০ জনের জীবন নিয়াছেন। হাজার হাজার ভারতীয় নরনারী গৃহহীন হয়েছে, জমিতে ধান ফেলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
আমরা ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি যে, ভারত সরকার এখনাে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না, মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে অস্ত্র দিচ্ছেন না। কিন্তু সরকার শরণার্থী শিবিরগুলাের দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য বিন্দুমাত্র উদ্যোগ নিচ্ছেন না। সুস্পষ্ট অভিযােগগুলাের উপর সামান্যতম তদন্তও করছে না।
সীমান্তবাসীদের জান-মাল রক্ষার ব্যাপারে সিংহ সরকারের ক্ষমাহীন নিস্ক্রীয়তা সােনামুড়া, সাব্রুম, সদর বামুটিয়া প্রভৃতি সমগ্র সীমান্ত এলাকায় জনগণের মনে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। বামুটিয়াতে পাকদস্যুরা সীমান্তের আধা মাইল ভিতরে ১২ ঘণ্টা আক্রমণ চালানাের পরও সীমান্তরক্ষীরা তাদের প্রতিরােধ করে নাই। আত্মরক্ষা মূলক সংগঠন (সিভিল ডিফেন্স) গড়ে তােলার জন্য স্থানীয় জনগণের সহযােগিতা গ্রহণ করে জনগণের মনােবল দৃঢ় করার পরিবর্তে সরকারি আমলারা আতঙ্ক সৃষ্টিতেই সাহায্য করছেন। যে সকল ভারতীয় গুলিগােলার মুখে জীবন দিচ্ছেন এবং জমি ও বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের সামান্য রিলিফও দিচ্ছেন না।
অপরদিকে যুদ্ধের আতঙ্ক সৃষ্টি করে সিংহ সরকার তার আমলাপুষ্ট কালােবাজারীদের অবাধ সুযােগ দিচ্ছেন নিত্যপ্রয়ােজনীয় পণ্যের দর বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে। লবণ, ডাল, তেল, চিনির বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে সময় ত্রিপুরার স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে বেকার সমস্যা আরাে তীব্র হয়েছে, শরণার্থীদের চাপে সর্বত্র স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরির হার কমে যাচ্ছে, ঠিক সে সময় এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি জনজীবনের সঙ্কটকে আরাে তীব্র করেছে।
তাই, মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ত্রিপুরার গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণকে নিম্নলিখিত দাবিসমূহের উপর ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানাচ্ছেন:
১. সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার জন্য জনগণের সহযােগিতায় আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা (সিভিল ডিফেন্স) সুদৃঢ় কর। ২. সরকারি বাধা দরে রেশন শপ মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি প্রভৃতি সরবরাহকর; আমলাপুষ্ট কালােবাজারীদের শাস্তি দাও। বেকারদের জন্য কাজ চাই, নতুবা বেকারদের বাঁচার মতাে ভাতা দাও। ৪. বাংলাদেশ স্বাধীন সরকারকে স্বীকৃতি দাও, অস্ত্র দাও। শরণার্থী শিবিরের দুর্নীতি বন্ধ কর। ৫. জুমিয়া-ভূমিহীনদের পুনর্বসতিসহ উন্নয়নমূলক কাজ স্থগিত রাখা যাবে না। ৬. সকল বকেয়া আদায় স্থগিত রাখাে। ফরেস্ট জুলুম বন্ধ কর। ৭. ত্রিপুরাকে পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা দাও, উপজাতি এলাকার জন্য আঞ্চলিক কমিটি চাই। ৮. গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের উপর থেকে সব মামলা তুলে নাও, বন্দিদের মুক্তি দাও।

সূত্র: দেশের ডাক
২০ আগস্ট, ১৯৭১
০৩ ভাদ্র, ১৩৭৮

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!