আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট, আমি মাঠের ডক্টরেট। – বঙ্গবন্ধু | ৪ জানুয়ারি ১৯৭১ ছাত্রলীগ
৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রমনার বটমূলে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের একটি সম্মিলনের আয়ােজন করা হয়। প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ চৌধুরী ও ড. কামাল হােসেন। অনুষ্ঠানে | সদ্যনির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানাে হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বসন্ত রােগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর বদলে ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আ ফ ম মাহবুবুল হক সভা পরিচালনা করেন।
সভা শুরু হওয়ার আগে ২০-২৫ জনের একটি দল স্লোগান দিতে দিতে সভা প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে। তাদের স্লোগানগুলাে ছিল : বীর বাঙালি অস্ত্র ধরাে-বাংলাদেশ স্বাধীন করাে, মুক্তিফৌজ গঠন করাে-বাংলাদেশ স্বাধীন করাে, লাল সূর্য উঠেছে—বীর জনতা জেগেছে, মুক্তির একই পথ—সশস্ত্র বিপ্লব, স্বাধীন করাে স্বাধীন করাে—বাংলাদেশ স্বাধীন করাে, শেখ মুজিবের মন্ত্র—সমাজতন্ত্র। এ সময় আরেকটি গ্রুপ অন্য রকম স্লোগান দেয়। তাদের স্লোগান ছিল : শেখ মুজিবের মতবাদ—গণতান্ত্রিক সমাজবাদ, ছয় দফা মানতে হবে—নইলে গদি ছাড়তে হবে ইত্যাদি। স্লোগানগুলাের মধ্যে ছাত্রলীগের মধ্যকার বিপরীতধর্মী দুটি প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম তার বক্তৃতার একপর্যায়ে বললেন, কিছু কিছু ছেলে সংগঠনবিরােধী স্লোগান দিয়েছে। দলে এসব বরদাশত করা হবে না। শেখ মুজিব তাঁর ভাষণে স্লোগান প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ চৌধুরীকে উদ্দেশ করে একটু কৌতুকও করেন, ‘আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট, আমি মাঠের ডক্টরেট।’ তবে স্লোগান-পাল্টা স্লোগানের মধ্য থেকে উঠে আসা বার্তাটি শেখ মুজিব ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। তিনি বক্তৃতা শেষ করলেন ‘জয় বাংলা’ বলে । অন্যান্য দিনের মতাে জয় পাকিস্তান’ আর বলেননি।১২
Ref: আওয়ামী লীগ- যুদ্ধ দিনের কথা- ১৯৭১ – মহিউদ্দিন আহমদ, pp 17-18