প্রকাশ হল এন্ডারসন দলিল | ১৬ জানুয়ারি ১৯৭২
পাকিস্তান-মার্কিন অশুভ আঁতাত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি একটি রোমাঞ্চকর চিত্র দেখানো হয়েছে। চিত্রটির নাম ‘জ্যাক এন্ডারসনের চৌম্বক টেপ রেকর্ড।’এর গল্প হচ্ছে কি করে একটি গোপন টেপ রেকর্ড অপরাধ ফাঁস করতে সাহায্য করল,সে সম্পর্কে। “এন্ডারসন পেপার ” প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছে, তার নামের সমাপতনের দিক থেকে নয়,মার্কিন প্রশাসনের “শ্রেণি বিভাগ কৃত” দলিলপত্রদি ও তার প্রতিনিধি বৃন্দ যা ঘোষণা করেছেন,তার মধ্যে অসমাপতনের থেকে ও সাদৃশ্যপণ।কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে এখন যে কেউ এন্ডারসনের ফাঁস হওয়া ফলস্বরূপ আমেরিকানদের কৃত নিরুৎসাহিব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত সমূহের কিছু তালিকাবদ্ধ করতে: যে কর্তৃপক্ষ খোলানীতি পরিচালনা প্রতিশ্রুতিতে ক্ষমতাসীন হয়েছিল।তারা কংগ্রেস ও ভোট দাতাদের হতাশা করেছে।” এন্ডারসন পেপারের বিচারে কর্তৃপক্ষ যখন থেকে পাকিস্তানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন চুক্তি হয়েছে, তখন থেকে শাসনতন্ত্র লংঘন করেছে।শাসনতন্ত্র অনুসারে এই চুক্তি কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত। কিন্তু এই ধরনের কোনো চুক্তির অস্তিত্ব সম্পর্কে ক্যাপিটাল কোনো ধারনা ছিল না। মার্কিন কর্মকর্তারা বারংবারই ভারতবর্ষকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম গণতন্ত্র বলা সত্ত্বেও (অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে) ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের রাজনীতির অশুভ ত্রিভুজের অন্যতম বাহু হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “গণতন্ত্রকে” নয়- পৃষ্ঠাপোষণ করেছে ইয়াহিয়া খানের নায়কত্বমূলক শাসনব্যবস্থাকে।এই কোলাকুলি এত শক্ত ছিল যে, চীনা নেতারা ভিয়েতনাম গণপ্রজাতন্ত্রে মার্কিন বিমান হামলার নিন্দা জ্ঞাপন করার ব্যাপারে দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন। দুঃখজনক ফিরিস্তি আরো বাড়ানো যায়।কিন্তু সাংবাদিকেরা এখন খাঁটি “গোয়েন্দা” ধরনের প্রশ্নের ব্যাপারে চিন্তিত: জ্যাক এন্ডারসনকে হোয়াইট হাউসের শ্রেণি বিভাগকৃত ফাইল যোগাল, এগুলোর মতলবই বা কি? পেন্টাগনের গোপন দলিলাদির ব্যাপারটি কতটা সবল-পেন্টগন কর্মচারী ড্যানিয়েল এলসবেগের গোপন দলিলপত্র ঘাঁটার সুবিধা ছিল-যুদ্ধের ব্যাপারে তার মনোভাব পরিবর্তিত হলে তিনি সেগুলো জনসমক্ষে ফাঁস করে দেন।এছাড়াও পেন্টগনের দলিলে পূর্বেকার শাসন কর্তৃপক্ষও জড়িত এবং’এন্ডারসন পেপার’ কার্যকলাপ ফাঁস করে দিয়েছেন। বর্তমান শাসক কর্তৃপক্ষের কোন কর্মচারীরা এগুলো এন্ডারসনকে দেয়া সম্ভব,ব্যাপারটি এন্ডারসন স্বয়ং স্বীকার করেছেন।যখন খোঁজাখুঁজি করেছে, সাংবাদিকদের দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত:এবারের মতলবটা কি?বহু রকম আন্দাজ-অনুমান করা হলো।এশিয়ায় বর্তমান মার্কিন নীতির নীতিগত প্রতিপক্ষরা এই নীতি পরিবর্তনের জন্য এই কাজ করেছে।এটি নীরবে করা হয়েছে এজন্য যে কর্তৃপক্ষের বিপজ্জনক এশিয়ার নীতি ব্যাপক ভিত্তি ও সাংগঠনিক সামরিক সংঘর্ষের দাবি কংগ্রেসে হতে পারে। অবস্থা দেখে মনে হয়ে,প্রকাশিত গোপন দুলিলপত্রাদি প্রমাণ করেছে যে,এশিয়ায় মার্কিন নীতির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের গভীর মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।
Unicoded by Mohiuddin Mohin
Ref: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, pp 42-43