You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.15 | ইন্দোনেশিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষে প্রকাশিত ভারত ইন্দোনেশিয়া যুক্ত ইশতেহার | ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৫ আগস্ট, ১৯৭১ - সংগ্রামের নোটবুক

 

সূত্র তারিখ
 ইন্দোনেশিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর শেষে প্রকাশিত ভারত ইন্দোনেশিয়া যুক্ত ইশতেহার ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ আগস্ট, ১৯৭১

Razibul Bari Palash

অনুবাদ

ইন্দোনেশিয়ায়  পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং এর সফর শেষে প্রকাশিত ভারত ইন্দোনেশিয়া যুক্ত ইশতেহার, আগস্ট ১৫, ১৯৭১

ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মান্যবর আদম মালিকের আমন্ত্রণে মান্যবর সরদার শরণ সিং, ভারত প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, ১২ থেকে ১৫ ই আগষ্ট, ১৯৭১ ইন্দোনেশিয়া সফর করেন। সাথে সঙ্গী ছিল মেনন, ভারত সরকারের সেক্রেটারি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনাব আর ডি সাথী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এবং জনাব ই গনসালভেস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের যুগ্ম সচিব।

সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সুহার্তো সাদরে তাদের গ্রহণ করেন। আলোচনার সময় তার সঙ্গে মহামান্য জেনারেল উ এইচ নসুশন, প্রোভিশনাল পিপলস কনসালটেটিভ পরিষদের চেয়ারম্যান, মান্যবর আদম মালিক, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মান্যবর ডঃ শরীফ তৈয়ব, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। এই আলোচনায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রতিনিধিদলের সদস্যদের এবং মান্যবর এনবি এর সহায়তা নেন।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জনাব আর বি আই এন ডিজাজডিনিগ্রাত, পররাষ্ট্র বিভাগের রাজনৈতিক বিষয়ক মহা-পরিচালক, জনাব ইসমাইল তাজিব, পররাষ্ট্র দপ্তরের এক্সটার্নাল অর্থনৈতিক বিষয়ক মহাপরিচালক, জনাব হার তাসিং, পররাষ্ট্র দপ্তরের নিরাপত্তা ও কমিউনিকেশন বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল, জনাব এবি লুবিস, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিচালক, এবং জনাব নুরমাথিয়াস, পররাষ্ট্র বিভাগের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক পরিচালক মহোদয় গ্রহণ করেন।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আন্তরিকতা ও সমঝোতার পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং সাধারণ স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি সহ বিভিন্ন সাম্প্রতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয় তাদের আলোচনায় উঠে আসে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ভারত মহাসাগর, নিরপেক্ষ জাতিদের মধ্যে সহযোগিতা, শান্তির সাম্প্রতিক চুক্তি, বন্ধুত্ব ও কো-অপারেশন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।

নিজস্ব অঞ্চলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা, উভয় পক্ষের জোটনিরপেক্ষ নীতি, তাদের বিশ্বাস, সর্বজনীন শান্তি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি অনেক বিষয় গুরুত্বের সাথে আলোচনায় আসে। বিশেষ করে এশিয়ায় বিরাজমান বর্তমান অবস্থা আলোচনা করে প্রতিটি দেশের মানুষ বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করা উচিত বলে একমত প্রকাশ করা হয়। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে এই অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব এবং সব প্রান্তিককৃত দেশগুলির স্বাধীনতা সংহত করার প্রয়োজন স্বীকার করা হয়। তারা এশিয়ায় সাম্প্রতিক উন্নয়নের জন্য এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবং এর ফলে তাদের বন্ধন শক্তিশালী হবে হবে আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া অন্য দেশগুলোও লুসাকা সম্মেলনে তাদের এইসব পলিসি নিয়ে এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় যে।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তু প্রবেশ ও এর জন্য উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা এদের ফিরে যাবার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করার প্রয়োজনের উপর একমত হন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনায় তার উদ্বেগ জানান এবং বলেন যে ইন্দোনেশিয়া সরকারের কোন প্রচেষ্টা আবশ্যক হলে তারা সেটা করবেন যা হবে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অবস্থা অর্জনের লক্ষ্যে।

তারা ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন যে ইন্দো-চীন সমস্যা একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও উন্নত ও বিস্তৃত করার ব্যাপারে তারা চুক্তিবদ্ধ হন।

দুই মন্ত্রীদের ১৯৫৫ সালের সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত চুক্তির কাঠামো অনুযায়ী তারা গত দুই বছর সময় সম্পর্কের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তারা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পর্যালোচনা করেন এবং পারস্পরিক লাভজনক পরিধি বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে সম্মত হন – বিশেষ করে শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দু’দেশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী করার কথা ব্যাক্ত করেন। এ প্রসঙ্গে তারা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার কথা পর্যালোচনা করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করণ, বাণিজ্য ও যৌথ শিল্প উদ্যোগ উন্নয়নের প্রচারের জন্য একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা পুনরায় আলোচনায় আনেন। এ প্রসঙ্গে তারা এশীয় মন্ত্রী কাউন্সিল ECAFE এর উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আন্তর্জাতিক ফোরামে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন এবং বাণিজ্য ও উন্নয়নের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স এর আলজিয়ার্স সনদের বিধানাবলীর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয়ভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় তাকে ও তার দলকে উষ্ণ স্বাগত ও আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ করেন।

Ref: বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র, Vol 12