You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারতের পালাম বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ

১০ জানুয়ারি ১৯৭২।

সকাল। ব্রিটেনের রাজকীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌছলেন। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী নতুন দেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান।
বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বঙ্গবন্ধু একটি জনসভায় বক্তৃতা করেন। এবং রাষ্ট্রপতি ভবনেও যান। দিল্লির জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রথমে ইংরেজিতে তার বক্তৃতা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শ্রোতাদের অনুরােধে পরে বাংলায় বলেন। তিনি বলেন, আমার জন্যে এটা পরম সন্তোষের মুহূর্ত। বাংলাদেশে যাবার পথে আমি আপনাদের মহতী দেশের ঐতিহাসিক রাজধানীতে যাত্রাবিরতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ কারণে যে, আমাদের জনগণের সবচেয়ে বড় বন্ধু ভারতের জনগণ এবং আপনাদের মহীয়সী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী যিনি কেবল মানুষের নয় মানবতারও নেতা, তার নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের কাছে এর মাধ্যমে আমি আমার নুন্যতম ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারব। এ অভিযাত্রা সমাপ্ত করতে আপনারা সবাই নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং বীরােচিত ত্যাগ স্বীকার করেছেন।
এ অভিযাত্রা অন্ধকার থেকে আলােয়, বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতায়, নিরাশা থেকে আশায়। অবশেষে আমি নয় মাস পর আমার স্বপ্নের দেশ সােনার বাংলায় ফিরে যাচ্ছি। এ নয় মাসে আমার দেশের মানুষ শতাব্দীর পথ পাড়ি দিয়েছে। আমাকে যখন আমার মানুষদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল, তখন তারা কেঁদেছিল; আমাকে যখন বন্দি করে রাখা হয়েছিল, তখন তারা যুদ্ধ করেছিল আর আজ যখন আমি তাদের কাছে ফিরে যাচ্ছি, তখন তারা বিজয়ী। আমি ফিরে যাচ্ছি তাদের নিযুত বিজয়ী হাসির রৌদ্রকরে। আমাদের বিজয়কে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করার যে বিরাট কাজ এখন আমাদের সামনে তাতে যােগ দেয়ার জন্যে আমি ফিরে যাচ্ছি আমার মানুষের কাছে।
আমি ফিরে যাচ্ছি আমার হৃদয়ে কারাে জন্যে কোনাে বিদ্বেষ নিয়ে নয়, বরং এ পরিতৃপ্তি নিয়ে যে, অবশেষে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের, অপ্রকৃতিস্থতার বিরুদ্ধে প্রকৃতিস্থতার, ভীরুতার বিরুদ্ধে সাহসিকতার, অবিচারের বিরুদ্ধে সুবিচারের এবং অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে। জয় বাংলা।৩
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ৩৫ মিনিট একান্ত আলােচনা করার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নাত্তরে বলেন : That he was confident that she would recall the Indian troops from Bangladesh the day that he asked for to do so. He said that he would appeal to world jurists to set up a tribunal to inquire into the “cold-blooded murders” committed by the Pakistani Military Junta in Bangladesh, adding: They have destroyed my everything- my economy, my communications system, my foodgrains, my intelligentsia. But they could not destroy the spirit of the people.
এদিন শ্রীমতি গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গপিতা’বলে উল্লেখ করেন। ঐ একই বিমানযােগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দুপুর ১.৪১ মিনিটে তেজগা কুর্মিটোলার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। জনসমুদ্র ঠেলে রেসকোর্স পৌছাতে ৩ ঘন্টা সময় লাগে।

Ref: দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭২ অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, pp 20-21

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!