প্রতিরক্ষার অছিলায় ঢাকার চারপাশের গ্রামগুলি পাকফৌজ কর্তৃক নিশ্চিহ্ন
ঢাকা, ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে পাক ফৌজের নারকীয় অত্যাচারের তালিকায় আরও একটি ব্যাপার যুক্ত হল। দখলদাররা ঢাকাকে ঘিরে অনেকগুলি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছে। গ্রামবাসীদের মেরেছে আগুনে পুড়িয়ে, বােমা মেরে এবং গুলি করে। হিন্দুদের বাড়িগুলি ছিল তাদের আক্রমণের বিশেষ লক্ষ্য। শয়তানদের হাতে কম করেও তিনশ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই বর্বর দখলদারদের সাফাই ঃ ঢাকা যে কোন মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে । ঢাকাকে বাঁচাতে হলে তার চারপাশে ছয় কিলােমিটার গভীর একটি ব্যুহ তৈরি করতে হবে। তাই ওই গ্রামগুলি সাফ করা হয়েছে।
কিন্তু সেটা হয়েছে কীভাবে? বিনা নােটিশে রাত্রিতে গাড়ি গাড়ি সৈন্য পাঠানাে হয়েছে গ্রামগুলিতে। তারা হিন্দুদের বাড়িগুলিতে হাত বােমা ফেলে। বিস্ফোরণে অনেকে মারা যান। তারপর ফৌজ কুটির গুলিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রাণের মায়ায় যারা বেরিয়ে আসেন তাদের উপর গুলি চালানাে হয়। গত বৃহস্পতিবার রাত্রি থেকে তিনবার এই ধরনের আক্রমণ চলে। এপি-র একজন ফটোগ্রাফার এই ধরনের একটি গ্রাম দেখেছেন। অন্য কোথাও সাংবাদিকদের যেতে দেওয়া হয় নি। কিন্তু পলাতক গ্রামবাসীরা এই অত্যাচারের কথা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এর পরেও দখলদারদের ভয় যায় নি। তারা জানে যে, সারা বাংলাদেশে আর বােধহয় একটি সেতুও অটুট নেই। রেলপথ নেই দখলদারদের নৌকো করে যাওয়ায় উপায় নেই-তার উপর মুক্তিবাহিনীর গুলি এসে পড়বেই। বাঙালী হিন্দু যা মুসলমান কাউকে তারা বিশ্বাস করতে পারছে না। অসামরিক বিমানগুলি (পি আই এ’-র) তারা মজুত রেখেছে পালাবার জন্য। কিন্তু এত করেও কি তারা বাঁচবে?
১ ডিসেম্বর ‘৭১
Reference: ১ ডিসেম্বর ১৯৭১, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা