You dont have javascript enabled! Please enable it!

দিল্লির দরবার বাঙলাদেশের স্বীকৃতি কবে?
সাত্যকি চক্রবর্তী

বাঙলাদেশের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রায় দেড় মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে। সারা পৃথিবীর জনমত বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছেন কী প্রচণ্ড আত্মত্যাগ এবং অমিত সাহস নিয়ে বাঙলাদেশের আপামর জনসাধারণ পাকিস্তানি সামরিক শাসকচক্রের পৈশাচিক বর্বরতার মােকাবিলা করেছেন। মুক্তিসংগ্রামের প্রথম পর্ব সমাপ্ত । এখন প্রস্তুতি চলবে দ্বিতীয় অধ্যায়ের। দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য মানসিক বল নিয়ে বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধারা এবার নামবেন পরবর্তী লড়াইয়ে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বে ইয়াহিয়া চক্রের জয়—এটা স্বাভাবিক। আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করা মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে সম্ভব নয়-যে পরিমাণ আত্মত্যাগই তারা দেখানকেন। সম্মুখ লড়াই ছেড়ে গেরিলা পদ্ধতিতে তাদের এখন আঘাত হানতে হবে শত্রুসেনাদের।
বাঙলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাঁদের সঙ্গে। ইয়াহিয়া চক্র শহরগুলাে দখল করে রাখতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের সত্তাকে তারা হত্যা করেছে ২৫ মার্চ রাতে। এখন তারা নেহাতই উপনিবেশরক্ষাকারী সাম্রাজ্যবাদী সেনা।
বাঙলাদেশের অভুতপূর্ব জাগরণের তাৎপর্য রাজধানীর পর্যবেক্ষক মহল বােঝবার চেষ্টা করছেন। সরকারি স্তরেও এ ধারণা এখন হয়েছে লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার প্রথম সপ্তাহেই সংসদে প্রস্তাব নেওয়া হবে অসম যুদ্ধে ভারতের সহানুভূতি মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে। সথাসাধ্য সাহায্য ভারত সরকার করবে। সাত সপ্তাহ। অতিক্রান্ত হলাে- কিন্তু সংসদের সেই প্রস্তাবকে ভাষা দেবার প্রচেষ্টা কোথায়?
বাঙলাদেশের স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক স্বচক্ষে দেখে এসেছেন সেই নবীন। সূর্যের অভূদয়। দলমত নির্বিশেষে সবাই দাবি করেছেন, অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হােক। পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রদের বিভিন্ন মন্তব্যে ইঙ্গিত করা হয়েছে সরকার সমস্যাটিকে জরুরি ব্যাপার হিসেবে বিচার বিবেচনা করছেন কিন্তু পরিস্থিতি যে ভাবে মােড় নিচ্ছে দায়িত্বশীল মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সরকার যথােচিত দায়িত্ব পালন করছেন না।
শ্রীমতী গান্ধী কয়েকদিন আগে বলেছেন সরকার এমন কিছু করবেন না যেটা বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়। এটা কেউ অস্বীকার করছে না সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী তাৎপর্য অনুধাবন করে তবে নীতি নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু কখনও এমনও সময় আসে যখন কোন বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত সারা দেশের ভাষাকে একভাবে রূপ দিতে পারে, দেশের পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন বৈশিষ্ট্য দান করতে পারে। বাঙলাদেশ আজ সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভারত সরকারের কাছে হাজির হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে ভারতের বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত শক্তির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে এক নতুন পরিবর্তন আনতে পারে। আফ্রিকা এবং এশিয়ার মুক্তিসংগ্রামের আর এক ধাপ রচিত হতে পারে যদি বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম জয়যুক্ত হয় ।
গত এক দশকে এশিয়া আফ্রিকায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ক্রেডিবিলিটি” অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারত সরকার যদি এখনও দেরি করেন তবে তারা দেখবেন যে সুযােগ তারা হায়িয়েছেন তার খেসারত তাদের দিতে হবে দীর্ঘকাল ধরে। ভারতের আপামর জনসাধারণের অভীপ্সাকে যােগ্য ভাষা না দেওয়ার ফল ভুগতে হবে সরকারকে। দেশের সাধারণ মানুষ তাদের দিক ঠিক করে ফেলেছে। সরকার সেই দিকে অবিলম্বে পা ফেলবেন কিনা তা গণতান্ত্রিক জগৎ গভীর আগ্রহে লক্ষ করবে।

সূত্র: সপ্তাহ, ১৪ মে ১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!