You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.03 | তারিক আলির দাওয়াই | যুগান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

তারিক আলির দাওয়াই

ট্রটস্থিপন্থী যুবনেতা তারিক আলি আবার সংবাদে শিরােনামায়। জন্মসূত্রে পাকিস্তানি, অক্সফোর্ডের প্রাক্তন ছাত্র তারিক আলি বিলাতে ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ইউরােপের যুব-সমাজে তার নামডাক বেশ লম্বা-চওড়াই। ট্রাফলগার স্কোয়ারে সমাবেশই বলুন, ডাইনিং স্ট্রীটে বিক্ষোভই বলুন, তারিক আলিকে সর্বত্রই দেখা যেত সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী আন্দোলনের পুরােধারূপে। পাকিস্তানের সামরিক শাসনের তিনি একজন কঠোর সমালােচক। নিজে পশ্চিম পাকিস্তানি হলেও তিনি পূর্ব বাংলার গণআন্দোলনের সমর্থক। এবং তিনি তাঁর সদ্য-প্রকাশিত বইয়ে একথা স্বীকার করেছেন যে, পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল পূর্ব বাংলার ছাত্ররাই।
পূর্ব বাংলার এই দুর্দিনে তারিক আলির মতাে বিপ্লববাদী কি আর চুপ করে থাকতে পারেন? তবে এদের বিপ্লব ইউরােপের ঠাণ্ডা আবহওয়ায় জমে ভাল। ইয়াহিয়ার কাছ থেকে তার হাজার হাজার মাইল নিরাপদ দূরত্বেই তিনি এবং তাঁর মতাে বিপ্লবীরা থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু বিপ্লাবের নামে কথার ফুলঝুরি জ্বালানাে কিংবা গােপন অ্যাডভেঞ্চার মন্দ নয়। তাই হঠাৎ শােনা গেল বিপ্লবী তারিক আলির নাকি নাম ভাঁড়িয়ে কলকাতায় এসেছিলেন বাংলাদেশে কী ঘটছে তা সরেজমিনে তদন্দ করার জন্য। কীভাবে তিনি এলেন, কে ও’কে আনলেন এ নিয়ে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নিদারূণ মাথাব্যথা। একজন সুপরিচিত ছাত্রনেতা কীভাবে নাম ভাড়িয়ে কলকাতায় আসতে পারে তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রিমশাই তার গােয়েন্দাদের জিজ্ঞেস করুন। এমন গােয়েন্দা ব্যবস্থা নিয়ে তারা কীভাবে রাজ্য চালাবেন সেটা একবার ভেবে দেখুন। তারিক আলির আর দোষ কী?
তারিক আলি শুধু আসেনই নি। তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব বিপ্লবী দাওয়াইও দিয়ে গেছেন কলকাতায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধে। তাঁর মতে বাংলাদেশের এই যুদ্ধকে সার্থক করতে হলে চাই সমাজবাদী সংযুক্ত বাংলার আন্দোলন। দায়িত্বহীন বিপ্লবী বুলি আওড়ালে মানুষের মনে চমক লাগানাে যায়, তাকে বিভ্রান্তও করা যায়। কিন্তু তাতে কোনাে কাজ হয় না। সংযুক্ত বাংলার আন্দোলনের কথা বলে তারিক আলি। প্রকারান্তরে ইয়াহিয়া খানের জল্লাদবাহিনীকেই সাহায্য করলেন। কারণ, এর দ্বারা বাংলাদেশের স্বাধীন সার্বভৌম সরকারের জীবনপণ সংগ্রামকেই হেয় করা হল। বাংলাদেশের সংগ্রাম তার অস্তিত্বের সংগ্রাম।
যুক্তবাংলার সস্তা ধরতাই বুলি দিয়ে তারিক আলি পূর্ববাংলার ঐতিহাসিক স্বাধীনতা যুদ্ধকে নস্যাৎ করতে চাইলেও সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি বুকের রক্ত দিয়ে এই সংগ্রামকে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় করে রাখবে। এবং পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সংগ্রামের শেষও হবে। যুক্ত বাংলার কথা বলার অর্থ বাংলাদেশের রক্তদানের সার্থকতাকে অস্বীকার করা। এটা নেহাৎ স্বপ্নবিলাসী দায়িত্বহীন বিপ্লববাদীর উক্তি। এর ওপর গুরুত্ব দেবার কোনাে মানে হয় কি?

সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৩ জুন ১৯৭১