ফরিদপুর ও কুমিল্লা জেলা ছাড়া মুসলিম লীগের বামপন্থী কর্মীরা মুসলিম লীগকে গণতান্ত্রিক করে তােলার অভিযানে জনগণের সমর্থন লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলাে। ফরিদপুরে ইউসুফ আলী চৌধুরী, আবদুস সালাম খান এবং ওয়াহিদুজ্জামান খাজাদের প্রতিক্রিয়াশীল দলের সক্রিয় প্রতিনিধি ছিলেন। ফরিদপুর মুসলিম লীগের মধ্যে একটি শক্তিশালী বামপন্থী গ্রুপ সংগঠিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলাে শেখ মুজিবর রহমানের উপর। শেখ মুজিবর রহমানকে খুবই কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিলাে। উপরে উল্লিখিত এমন তিন ব্যক্তির কঠিন বিপক্ষতার বিরুদ্ধে তাকে কাজ করতে হতাে যাদের প্রতি বাংলার মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীনের পূর্ণ সমর্থন ছিলাে। কুমিল্লার জেলা বাের্ডের চেয়ারম্যান খান বাহাদুর আবিদ রেজা চৌধুরী, পাবলিক প্রসিকিউটর খান বাহাদুর আবদুল গণি, খান বাহাদুর ফরিদউদ্দীন আহমেদ ও মফিজুদ্দীন আহমেদ ছিলেন খাজাদের দলভুক্ত নেতা। কুমিল্লা জেলার বামপন্থীদের নেতা ছিলেন খােন্দকার মােস্তাক আহমেদ এবং তখন তিনি ছাত্র ছিলেন। কুমিল্লার দক্ষিণপন্থীরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বামপন্থীদের বিরুদ্ধাচরণ করত। কিন্তু ফরিদপুরে ইউসুফ আলী চৌধুরী, আবদুস সালাম থান এবং ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়াশীলরা অনিয়মতান্ত্রিক এবং চরমপন্থা অবলম্বন করত। শেখ মুজিবর রহমানকে প্রয়ােজন বােধে আক্রমণ মােকাবেলা করতে গিয়ে প্রতি আক্রমণ করতে হতাে। ময়মনসিংহ জেলা মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন নুরুল আমীন এবং গিয়াসুদ্দীন পাঠান ছিলেন সেক্রেটারী। আবদুল মােননম খান ছিলেন সহ সম্পাদক। ১৯৪১ সালে যখন ফজলুল হক মুসলিম লীগ ত্যাগ করে শ্যামা-হক মন্ত্রিত্ব নামে পরিচিত মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন তখন তার সঙ্গে সহযােগিতা করার জন্য জেলা মুসলিম লীগ মােনেম খানকে বহিষ্কার করে। কয়েক মাস পর যখন মােনম খান তার কৃতকর্মের জন্য অনুশােচনা করলেন তখন তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হলাে।
মুসলিম লীগ নেতাদের মধ্যে নূরুল আমিন এবং ডাঃ এ. এম. মল্লিক এই দু’জনই প্রথম আমাকে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। নূরুল আমীন, মৌলানা আকরাম খান, নাজিমুদ্দীন এবং তাদের সহচরদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভালাে সম্পর্ক বজায় রাখতেন, কিন্তু কাউন্সিল সভায় নূরুল আমীন এবং ময়মনসিংহ জেলার প্রতিনিধি কাউন্সিল সদস্যরা সকলে বামপন্থীদের সমর্থন করতেন। প্রথম যখন আমি ময়মনসিংহ সফরে গিয়েছিলাম তখন স্টেশনে নূরুল আমীন এসেছিলেন এবং আমাকে জেলা বাের্ডের ডাকবাংলায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে আমার জন্যে একটি কামরা সংরক্ষিত রাখা হয়েছিলাে। নুরুল আমীন স্বয়ং তার বাড়ি থেকে ডাকবাংলায় আমার জন্যে দুপুর ও রাত্রির খাবার নিয়ে আসতেন। আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ গিয়েছিলাম এবং টাঙ্গাইলের শামসুল হক আমার সঙ্গে ছিলেন। ময়মনসিংহে আমরা দু’দিন অবস্থান করি। আমি যখনই সদর জেলাসমূহ সফর করতাম তখন মুসলিম লীগের আয়ােজিত সভা ও অনুষ্ঠানে যােগদান শেষে সকল রাজনৈতিক দলের জেলা অফিসগুলােতে যেতাম এবং তাঁদের সঙ্গে ১৯৪০-এর লাহাের প্রস্তাবের উপর আলােচনা করতাম।
Ref: আমার জীবন ও বিভাগপূর্ব বাংলাদেশের রাজনীতি আবুল হাশিম, pp 62-63