You dont have javascript enabled! Please enable it! আন্দোলনে ছাত্রীদের প্রথম অংশগ্রহণ - সংগ্রামের নোটবুক

আন্দোলনে ছাত্রীদের প্রথম অংশগ্রহণ

১৯২৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের সংবিধান সংস্কারের জন্য বিলেত থেকে সাইমন কমিশন ভারতে পদার্পণ করে। কমিশনকে বয়কট করে সারা ভারতে হরতাল পালিত হয়। কলকাতায় হরতাল পালনের সময় পুলিশ প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ ঘোষালের ওপর লাঠিচার্জ করলে বিক্ষোভ সমগ্র কলকাতায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ স্কোয়ারে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগানে মেতে ওঠে। স্মর্তব্য যে বঙ্গদেশে এই প্রথম ছাত্রীরাও ধর্মঘট এবং মিছিলে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিল। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রমোদ ঘোষাল ও স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র-সংসদের সভাপতি শচীন্দ্রনাথ মিত্রসহ অনেক ছাত্র কলেজ থেকে বহিস্কৃত হয়।

এর ঠিক দু-বছর পরেই বরিশালে ছাত্রীরা এক চাঞ্চল্যকর আন্দোলনের সূত্রপাত করে। ১৯৩০ সালে ৬ এপ্রিল গান্ধীজি লবণ আইন ভঙ্গ করার জন্য পায়ে হেঁটে ডাণ্ডি যাত্রা শুরু করেন। ১২ এপ্রিল অনুচরদেরসহ গান্ধী গ্রেফতার হয়ে যান। ত্রিশের জুলাই’র দিকে এই আন্দোলনে যোগদানকারী প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রেফতার বরণ করে। শুধুমাত্র স্কুল-কলেজ ও রাস্তায় রাস্তায়ই পিকেটিং চলত না, মদের দোকানেও ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলল । বিলেতি কাপড় পোড়ানো তখন একটি নিত্যদিনের স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল মাত্র।

বরিশালে ছাত্রীরা কলেজের প্রবেশপথের মাটিতে শুয়ে পড়ে ছাত্র-শিক্ষকদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। খবর পেয়ে একজন পুলিশ সার্জেন্ট (যিনি নিজে ছিলেন একজন এ্যাংলো-ইন্ডিয়ান) মটরসাইকেলে ব্রিটিশ পতাকা (‘ইউনিয়ন জ্যাক’} লাগিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। উপস্থিত সিপাইদের দিয়ে তিনি কলেজপথে প্রতিরোধকারী ছাত্রীদের সরানোর চেষ্টা করলে মেয়েরা সমস্বরে স্লোগান দিতে থাকে ‘up up national flag, down down union Jack’.

ঠিক এমনি সময়ে এক দুঃসাহসী ছাত্রী এসে সার্জেন্টের মটরসাইকেল থেকে ইউনিয়ন জ্যাকটি দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় এবং পাল্টা কংগ্রেসের একটি ত্রিবর্ণ পতাকা লাগিয়ে দেয়। সার্জেন্ট দৌড়ে এসে ছাত্রীর গালে একটি চটেপাটাঘাত করে পতাকাটি ছিড়ে ফেলে। এই ঘটনায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে স্থানীয় জনসাধারণও এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। তুমুল হৈচৈ ও বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ব্যাটন চার্জ শুরু করলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।

Ref: বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস – ১৮৩০ থেকে ১৯৭১ ড মোহাম্মদ হান্নান, p 38