You dont have javascript enabled! Please enable it!

মহিলা ফেডারেশন ও মহিলা সমিতরি উদ্যোগে
বাঙলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে বনগাঁয় সুবৃহৎ সমাবেশ

বনগাঁ, ১৬ জুন (সংবাদদাতা)- বাঙলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ভারতীয় মহিলা ফেডারেশন ও পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির আহ্বানে বনগার রেল স্কুল ময়দানে গত ১৪ জুন দশ হাজার মানুষের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ যােগ্য, বনগাঁয় আশ্রিত বাঙলাদেশ শরণার্থীদের একাংশ এই সভায় যােগদান করেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রীমতি রেণু চক্রবর্তী, সর্বভারতীয় বিশিষ্ট মহিলা নেত্রীরা ভাষণ দেন। স্থানীয় জননেতা শ্রীঅর্জিত গাঙ্গুলী এমএলএ মহিলা নেত্রীদের স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন। শ্রীগাঙ্গুলী বলেন, সমস্যা জর্জরিত সীমান্ত শহর বনগাঁ লক্ষাধিক শরণার্থীকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে এবং এগিয়েই থাকবে।
বিশিষ্ট মহিলা নেত্রী শ্রীমতি বিমলা ফারুকী বলেন, জঙ্গী নায়ক ইয়াহিয়া বাঙলাদেশের মানুষের উপর নিষ্ঠুরতম সন্ত্রাস চাপিয়ে দিয়েছে। যার ফলে লাখাে লাখাে মানুষ এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র মানবিক কর্তব্য সম্পাদনের জন্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিচ্ছি না, তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামকে সাহায্য করাও আমাদের উদ্দেশ্য, কারণ আমরাও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
তিনি জানান যে, বাঙলাদেশ থেকে আগত ভাই-বােনেদের সাহায্যে এবং মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত সৃষ্টির জন্য জাতীয় ফেডারেশন ভারত জুড়ে প্রচারাভিযান চালাবার সিদ্ধান্ত করেছে।
বাঙলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী মালেকা বেগম এপার বাংলার মানুষের কাছে বক্তব্য রাখার সুযােগ দেবার জন্য অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে ও দুর্ভোগে আমরা এদেশে আশ্রয় নিয়েছি। অন্য দেশে চিরকাল আমরা থাকব না। আমরা এখানে নিজেদের সংগঠিত করে সংগ্রাম তীব্রতর করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
শ্রীমতী বেগম বলেন, ২৩ বছরে ও-বাঙলার মানুষ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বাদ পায় নি। তাই তারা আজ স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে নেমেছে।
তিনি ইয়াহিয়ার কুরতা হিটলারকে হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। শেষত তিনি ঘােষণা করেন, জঙ্গীশাহীর অত্যাচারে আর নিষ্ঠুরতায় আমাদের চোখের পানি শুকিয়েছে, কিন্তু মনের আগুন নেভেনি। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানকে এক হয়ে লড়তে হবে।
জননেত্রী শ্রীমতি অরুণা আসফ আলি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশও এখন বুঝতে পারছে, এটা গৃহযুদ্ধ নয়। ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি, বাঙলাদেশের পাশেও দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দায়িত্ব শরণার্থীদেরও আছে, আমরা তাদের সাহায্য করব।
পশ্চিমবাংলার জননেত্রী শ্রীমতী গীতা মুখার্জি ইয়াহিয়ার চক্রান্তের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, ইয়াহিয়া এক বেয়নেট দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালী তরুণদের হত্যা করছে আর এক বেয়নেট দিয়ে হিন্দুদের এ বাঙলায় তাড়িয়ে দিচ্ছে। বাঙলাদেশের সব সম্প্রদায়ের মিলিত সংগ্রাম এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সভাপতি শ্রীমতি রেণু চক্রবর্তী বলেন, তিন মাস চেষ্টা করেও ইয়াহিয়া বাঙলাদেশে একটি কাঠের পুতুল সরকারকে দাঁড় করাতে পারে নি। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী চক্রের বিরুদ্ধে বাঙলা জাতি এক হয়ে স্বাধীনতার লড়াই চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য হিন্দু-মুসলমান শরণার্থীদেরও হাতিয়ার খুলে দিতে হবে।
সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শ্রীদেবনাথ চক্রবর্তী ও অ-পার বাঙলার শিল্পীরা।
পঃবঃ মহিলা সমিতির রিষড়া শাখার সভ্যরা নিজ পরিশ্রমে রুমাল বানিয়ে সেই রুমালগুলি বিক্রি করে ৫০ টাকা সংগ্রহ করেছেন। সংগৃহীত অর্থ বাঙলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম সহায়ক সমিতির রিষড়া শাখার নিকট জমা দিয়েছেন। মহিলা সমিতির সদস্যরা ভবিষ্যতে আরাে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছেন। মহিলা সমিতির রিষড়া শাখার কর্মীরা বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রামের ওপর কয়েকটি আলােচনা সভা করেন।

সূত্র: কালান্তর, ১৭.৬.১৯৭১

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!