You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অনুমান নির্ভর হামলা – শশাঙ্ক ব্যানার্জী 
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

মনে করা হয় যে, দিকভ্রান্ত করার কৌশল হিসাবে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান বিমান বাহিনী ভারতের ওপর অনুমান নির্ভর বিমান হামলা শুরু করে। এই বিষয়টি অত্যন্ত দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যায় যে পাকিস্তানের নড়বড়ে জেনারেলরা যুদ্ধ প্রস্তুতি সংক্রান্ত বাড়ির কাজ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভুল আবিষ্কারের সাথে সাথে যুদ্ধের পরিস্থিতি খুব দ্রুত ও অনুমেয়ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে উপমহাদেশে সামরিক সংঘাত তিক্ত ও বিশালরূপে দেখা দিল। এবং ঠিক যেমন আশা করা হয়েছিল তেমনি পরাশক্তিগুলি ভারত পাকিস্তান সংঘর্ষে নিজেদের যুক্ত করতে শুরু করেছিল কিন্তু তারা সময় নিচ্ছিলাে।

যুক্তরাষ্ট্র তার বিমানবাহী জাহাজ USS Enterprize এর নেতৃত্বে আণবিক শক্তিসম্পন্ন ৭ম নৌবহর বঙ্গোপসাগরের দিকে পাঠিয়ে দেয় মূলত। ভারতের অগ্রযাত্রা রােধ করতে ও পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতে। কৌতুহল উদ্দীপক বিষয়টি হলাে এই যে সাহায্যটি যুদ্ধক্ষেত্রে পৌছাতে দেরি করে ফেলে যা নির্দেশ করে যে পাকিস্তান পেন্টাগনের সাথে তার যুদ্ধ পরিকল্পনা নিয়ে পরামর্শ করেনি।

ইন্দো-সােভিয়েত চুক্তির কার্যকারিতার আসল পরীক্ষা হয়ে যায় ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হবার আট দিন পরে । মজার বিষয় হলাে এই দিনই পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানের পরাজয়ের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। যুদ্ধ শুরু হয় ৩ ডিসেম্বার এবং তেরদিন পর শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। এবং ১১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট-নৌবাহিনীর USS Enterprize এর নেতৃত্বে ৭ম নৌবহরটি বঙ্গোপসাগরের যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়। তার আবির্ভাবের সাথে সাথেই বঙ্গোপসাগরে ভারতীয়

১০৮

নৌবাহিনীর তৈরী বাঁধাগুলাে খুবই তুচ্ছ মনে হতে থাকে।

যদিও পৌছাতে দেরি হয়েছিল, তবু প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বঙ্গোপসাগরে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন USS Enterprize পাঠানাের সিদ্ধান্ত ভারতীয় নেতা ও নাগরিকদের মনে আতঙ্ক তৈরী করে। ভারত জুড়ে গুজব শােনা যায় যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহরকে যুদ্ধাবস্থার জন্য তৈরী থাকতে বলেছেন। যদি প্রয়ােজন হয় তবে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ভারতের ওপর আক্রমণ চালানাে হবে।

এই গল্পগুলি ইউ এস ইনটেলিজেন্সও ছড়াতে পারে যাতে করে তাদের। অকার্যকারিতা নিয়ে পাকিস্তানের রাগ সামলানাে যায়। এছাড়াও তাদের আশা ছিল যে সামরিক শক্তির প্রদর্শনীতে ভারতহয়তাে অভিযান বন্ধ রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত তর্ক জুড়েছিলেন যে পাকিস্তানের সাথে। চুক্তির বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে হয়তাে বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধ দল পাঠাতে হয় কিন্তু রাগের মাথায় গুলি চালানাে থেকেও তাদের বিরত রাখা হয়। এর কারণ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের সম্মান ও অবস্থান। যদিও প্রেসিডেন্ট নিক্সন এইভাবে চিন্তা করতেন না। তবে কি মার্কিন প্রশাসনে বাংলাদেশ বিষয়ে মতানৈক্য ছিল?

ঢাকার ইউ এস কনসুল জেনারেল আরচার কে ব্লাড কর্তৃক ৬ এপ্রিল ১৯৭১ ওয়াশিংটনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ নামে পাঠানাে একটি গােপনীয় টেলিগ্রাম প্রকাশ হয়ে পড়ে। যেহেতু এটি পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির অভ্যন্তরে ভিন্ন মতের অস্তিত্ব প্রকাশ করে, সেহেতু এই টেলিগ্রামের বিষয়বস্তু উদ্ধৃত করাটাই উচিত হবে।

Priority
Fm: AMCONGEN Dacca
To: SecState Washington DC
Cc: AM EMBASSY Islamabad
Info: AMCONSUL Karachi
Info: AMCONSUL Lahore

গােপনীয়

১০৯

বিষয় ঃ পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র নীতির ভিন্নমত
Joint State/Aid/USIS Message

আমাদের জানা মতে পররাষ্ট্র সেবার ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রস্তাবিত ‘উন্মুক্ততা’ (Openness) বিষয়টি বৃহৎ অর্থে আমাদের নৈতিক স্বার্থ এবং ক্ষুদ্রার্থে আমাদের গভীর স্বার্থ, কোনােটাই রক্ষা করে না। AMCONGEN Dacca, USAID Dacca 978 USIS Dacca-49 fa gran সংখ্যক কর্মকর্তা এই নীতির মূল বিষয়গুলিতে কঠোর ভাবে দ্বিমত পােষণ করা দায়িত্ব বলে মনে করছেন। আমাদের সরকার গণতন্ত্রের অবদমন প্রতিরােধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের সরকার বর্বরতা প্রতিরােধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের সরকার নাগরিকদের শক্তিশালী সুরক্ষা দিতে শুথু ব্যর্থই হয়নি বরং সবকিছুর বিপরীতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর নেতিবাচক আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কমাতে সচেষ্ট ছিল। আমাদের সরকার যা দেখিয়েছে অনেকের মতে তা নৈতিক দেউলিয়াপনা। কৌতুকের বিষয় এই যে একই সময়। USSR প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে বার্তা পাঠিয়ে গণতন্ত্র সুরক্ষার পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে গ্রেফতারের নিন্দা এবং দমন নিপীড়ন ও রক্তপাত বন্ধ করতে বলেছেন। অতি সম্প্রতি পাকিস্তানের জন্য তৈরী নীতিপত্রে আমাদের স্বার্থ বলতে মানবতাবাদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গােপনীয়
PS: The message as published ended abruptly.

নিক্সন প্রশাসনের ভেতরেই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে দ্বিমত থাকার বিষয়টির জ্বলন্ত উদাহরণ উপরােক্ত এই টেলিগ্রামটি।

***

বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর বিষয়ে ফিরে আসি। ভারত ও বাঙলাদেশ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে যখন কোন গর্জন বা কামড় ছাড়াই USS

১১০

Enterprize বঙ্গোপসাগর থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।

আতঙ্কের ভারসাম্য পন্থাটি পুরােপুরিভাবে খেলায় জড়িয়ে পড়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর কার্যকলাপের জবাবে সােভিয়েত ইউনিয়ন তার ভাদিভসতক নৌঘাটি থেকে দুটো যুদ্ধ জাহাজ ও একটি পারমাণবিক সাবমেরিন ভারত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের টাস্ক ফোর্সের পেছনে লাগিয়ে দেয়। সােভিয়েত নৌবাহিনী আরেকটি পারমাণবিক সাবমেরিন পাঠায় বঙ্গোপসাগরে যাতে করে USS Enterprize -এর যুদ্ধ সম্ভারের যে কোন হুমকির জবাব দেয়া যায়।

প্রেসিডেন্ট নিক্সন আশঙ্কা করেন যে পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি ও পরবর্তীতে সােভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে তার প্রভাব বিস্তার এই অঞ্চলে পুরােপুরিভাবে সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করবে।

শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযােগিতার জন্য ইন্দো-সােভিয়েত চুক্তি এবং সত্যি সত্যি ভারত সাগরে সােভিয়েত নৌবাহিনীর আগমন দেখে প্রেসিডেন্ট নিক্সন একটা। পর্যায়ের পরে আমেরিকার শক্তি প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে ১৯৬২ সালের কিউবা মিসাইল সংকট এর মতাে ঝুঁকি তৈরী না হয়।

ভারতকে সােভিয়েত ইউনিয়ন নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয় তবে সে পাল্টা জবাব দেবে, সেটা ভারত ও বাংলাদেশকে রক্ষা করে যা নয়াদিল্লী মূল্যবান নিরাপত্তার ছত্রছায়া হিসেবে দেখে। পাকিস্তান তার জায়গা থেকে ভীষণ দুঃখিত বােধ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম নৌবহর ভারতের কোন ক্ষতি না করে ম্যানিলায় নিজের বেস-এ ফিরে আসে আর এভাবেই তারা একটি বন্ধু রাষ্ট্রকে এবং ঐক্যজোটকে পৃথক করতে ব্যর্থ হয়। ইসলামাবাদের জন্য এটি ছিল আতঙ্কের অভিজ্ঞতা। পাকিস্তানের জনগণের জন্য এই ঘটনাটি কিছু আবেগময় ক্ষত তৈরী করে। যার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল- এই হতাশার পর তথাকথিত কৌশলগত মিত্রকে বিশ্বাস করে যাওয়া দেশ হিসেবে কতটা মর্যাদার হবে? অনেক নাটকের পর চিরশত্রু ভারতের হাতে পাকিস্তানের খন্ডিত হওয়া প্রতিরােধ করতে আমেরিকা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের ঘৃণা অনেকদিনের যা ২০০১ সালের ৯/১১ পার করে আজ অবধি টিকে আছে। এই শত্রুভাবাপন্নতার বেশ

১১১

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিমান হামলা বড় একটি কারণ ১৯৭১ সালের ঘটনাটি। অস্ত্রধারী নিম্নশ্রেণীর মানুষ থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের অশেষ দানে নিজেদের সমৃদ্ধ করছে বলে। ধারণা করেছিল, তার অসারতা প্রত্যক্ষ করার পর পাকিস্তানে সমাজের প্রতিটি স্তরে আজ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিদ্বেষ বিদ্যমান। ১৯৭১ সালের পরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের মিত্রতা যাওবা পূর্বে কিছু ছিল তার কৌশলগত সারবত্বা হারিয়েছে। এর প্রকৃতি এখন ভাড়ার বিনিময়ে কাজের মতাে। আমেরিকান। করদাতাদের বাড়তি ডলার ওয়াশিংটন থেকে হাত পেতে নিয়ে আসা বলতে গেলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক। অন্য আরেকটি স্তরে। ভারতের প্রতি পাকিস্তানের শত্রুতার প্রেক্ষিতে যতদিন না যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান। সামরিক বাহিনীকে আর্থিক সহায়তা দেয়া বন্ধ না করবে ততদিন পর্যন্ত হয়তাে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পার্টনারশীপ বােধগম্য হবে না।

চীনের গল্পের অন্যরকম মানে আছে। চীন অফিসিয়ালি পাকিস্তানের সাথে সব ঋতুতেই বন্ধুত্বের’ ঘােষণা দিয়েছিল। একথা চিন্তা করাও মুশকিল যে পাকিস্তানের অস্তিত্ব সংকটের সময় চীন পাকিস্তানের সমর্থনে এগিয়ে। আসবে না। আসলে তারা সাহায্য করেছিল কিন্তু তা ছিল দায়সারা। এর পেছনে কারণ কি?

ভারতের জন্য শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযােগিতার ইন্দো-সােভিয়েত চুক্তি দু’টো উদ্দেশ্য সাধন করেছিলাে। এটি শুধু যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন হুমকি থেকে ভারতকে নিশ্চিন্তই রাখেনি- উত্তরাঞ্চলের প্রতিবেশী চীন, যার সাথে ভারত প্রায় ৩৫০০ কিলােমিটার সীমান্ত ভাগাভাগি করে তার কাছেও নয়াদিল্লীর অবস্থান সুসংহত করেছিলাে।

যখন ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর যুদ্ধ শুরু হলাে তখন চীন একটা ছােট সৈন্য বাহিনী চীন ভারত সীমান্তে পাঠায়। আসলে এর উদ্দেশ্য ছিল এক ধরনের হুমকি দেয়া। ভারতের যুদ্ধে বাধা দেবার মতাে কোন ধরনের পদক্ষেপ চীন নেয়নি। আসলে প্রকৃতিই তখন চীনা সৈন্যদের ভারতের গভীরে প্রবেশের সুযােগ দেয়নি। তখন ডিসেম্বর, গভীর শীত জেঁকে বসেছে। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে তখন মৌসুমের সবচেয়ে ভারি তুষারপাত হচ্ছে। তাই সাগরসীমা থেকে ১৮০০০ ফুট ওপরের সবগুলি উপত্যকা চলাচলের অযােগ্য হয়ে পড়ে। তাই এই অসম্ভব আবহাওয়ায় দখল অভিযান চালানাের কোন প্রশ্নই ওঠেনি।

১১২

আরাে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন যে কারাে মাথায় আসতে পারে। দু’টি দেশের গভীর বন্ধুত্ব থাকায় কেন চীন ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানকে এই অনুমান নির্ভর হামলা চালানাে থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়নি? খুব ভালাে মতােই জানা ছিল যে ভারী তুষারপাত ও তীব্র শীত ও হিমালয় পর্বত যে কোন আক্রমণ চালানাে থেকে চীনের পথ রােধ করে দাঁড়াবে যেটা না হলে হয়তাে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে ভারতকে বাধাগ্রস্ত হতে হতাে। একথা খুবই পরিষ্কার যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পক্ষে তারা ছিলাে না। তাদের ভয় ছিল বিশ্বব্যাপী এই যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

১৯৭১ সালে ভারতের সাথে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ের কাছ থেকেই মৈত্রী পাকিস্তানের কোন সাহায্য না পাওয়াটা ইসলামাবাদের জন্য ছিলাে দ্বিগুণ আঘাত। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা পরিষ্কার ও সম্পূর্ণ হয় তখনই।

তৃতীয় যে জায়গাটি থেকে ভারতের নিরাপদ থাকা প্রয়ােজন ছিল তা হলাে ইসলামিক বিশ্ব। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবগুলি দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক জোটের অংশীদার ছিল। হুমকির সম্ভাবনা ছিল নিম্নরূপ :

১. ইরান- শাহ কর্তৃক শাসিত দেশটি যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত নিরাপত্তা জোট CENTO এর সদস্য ছিল। তারা ভূমি সীমান্তে ও আকাশ পথে অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে।
২. একই ধর্মীয় বাঁধনে বাঁধা সৌদি আরব। যারা অর্থ ও অস্ত্র এই দুইয়েরই জোগান দিতে পারে।
৩. জর্দানের হাশেমী রাজতন্ত্র, যারা পশ্চিমাদের অন্তরঙ্গ মিত্র ছিল, যারা পেন্টাগন এর কথা মতাে পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে।

যখন যুদ্ধ শুরু হয় এবং সামনের দিকে এগিয়ে যায়- ভারত এই সব হুমকি মােকাবেলারও প্রস্তুতি নেয়।

ইরানের জাহিদান থেকে বেলুচিস্তান এর সীমান্তবর্তী কোয়েটা পর্যন্ত করিডােরটি সাথে সাথে ব্যবহারের জন্য তৈরী রাখা হয়। জাহিদান-কোয়েটা আকাশ করিডােরটি যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় অস্ত্র সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছ থেকে ইরানের

১১৩

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিমান হামলা শাহকে জরুরী নির্দেশ দেয়া হয় কিন্তু পাকিস্তান এই সরবরাহ ব্যবহার করতে পারেনি। লন্ডনের পিআইএ অফিসে কর্মরত একজন বাঙ্গালীর গােপনীয় তথ্য হাতে পাবার সুযােগ ছিল, তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে সমর্থ হন। তার কার্যকরী তথ্যের উপর ভিত্তি করে কোয়েটা থেকে লাহাের ও মুলতানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়। ভারতীয় বিমান বাহিনী কোয়েটা স্টেশনের রেলওয়ে ওয়াগনগুলির ওপর দ্রুত হামলা চালায় এবং সরবরাহটির অধিকাংশ ধ্বংস করে দেয়। বিবিসি এই বােমা নিক্ষেপ এর বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই বােমা হামলা যুদ্ধের স্থায়িত্ব কমিয়ে অনেক জীবন বাঁচায়।

সৌদি আরব এবং জর্দান সাগরপথে বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদ ও অস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত ছিল কিন্তু ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিবন্ধকতা ভেদ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই এই পথটি ব্যবহার করা যায়নি।

শ্রীলংকার সাথে পাকিস্তানের একটি ভালাে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সেই সুনামকে কাজে লাগিয়ে শ্রীলংকার কাছে পাকিস্তান দেশটির আকাশসীমা ব্যবহার ও কলােম্বাে বিমান বন্দরে ল্যান্ড করার অনুমতি চায়। অনুমতি নিশ্চিত করার পর সেখানে দু’একটা মিলিটারি কার্গো বিমান রাখা ছাড়া পাকিস্তান তেমন কোন উল্লেখযােগ্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারেনি। এর কারণ প্রধানত ঢাকার ল্যান্ডিং স্ট্রিপগুলি ভারতীয় বিমানবাহিনী অকেজো করে রেখেছিলাে।

রেফারেন্স – ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান – শশাঙ্ক ব্যানার্জী

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!