You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | ভারতের ২৮ তম স্বাধীনতা দিবসে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঢাকায় জাতির পিতা মুজিবুর রহমানকে হত্যা - শশাঙ্ক ব্যানার্জী - সংগ্রামের নোটবুক

ভারতের ২৮ তম স্বাধীনতা দিবসে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঢাকায় জাতির পিতা মুজিবুর রহমানকে হত্যা – – শশাঙ্ক ব্যানার্জী

এটি বাংলাদেশের চরম দুর্ভাগ্য যে গণতন্ত্রের সাথে তার অবস্থান স্থায়ী। হয় চার বছরেরও কিছু কম সময়। আমরা সবাই হয়তাে বিষয়টিকে ভালােমত জানি তারপরও নতুন করে ফিরে দেখা ও জরুরী বিষয়গুলির ওপর জোর। দেয়া প্রয়ােজন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়। এই অর্জন আসে স্বাধীনতার জন্য কঠিন সংগ্রাম, এবং আগাগােড়া একটি ভারত পাকিস্তান লড়াইয়ের পর শক্তিশালী পাকিস্তানকে পরাজিত করে। এর ঠিক তিন বছর আট মাস পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ভারতের ২৮তম স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যিনি গণতন্ত্রের আইকন ও বিশ্ব রাজনীতিতে অনন্য রাষ্ট্রনায়ক বলে পরিচিত ছিলেন, ঢাকায় ভাের বেলার এক রক্তাক্ত সামরিক কু’র মাধ্যমে তাঁর পরিবারের অন্যান্যদের সাথে মেশিনগান ও রিভলবারের নিষ্ঠুর আক্রমনে নিহত হন। মুজিবের ৩২, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার বাড়িটি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ও সামরিক ব্যক্তিবাহী গাড়ি ঘিরে ফেলে, কর্নেল ফারুক রহমান এবং ইনফ্যান্ট্রি অফিসার মেজর শরিফুল হক ডালিম তাদের সমর্থনে একদল সামরিক অফিসারদের নিয়ে এই হিংস্র হামলা চালায়। বাংলাদেশের চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল জিয়াউর রহমান কু চলাকালীন সময়ে সম্পূর্ণ ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কমান্ড সেন্টারে। বসে থাকেন। জেনারেল জিয়াউর রহমান দ্রুত তার শক্তি খাটিয়ে ১৯৭৫ এর নভেম্বরে সামরিক একনায়ক হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

আর এভাবেই খুব অল্প সময়েই বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিদ্রোহ শেষ হয়ে যায়।

১৮৪

অল্প কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই খুব অংক কষে আর একটি হামলা চালানাে হয়। বাঙলাদেশকে আঘাত করে আরেকটি ট্রাজেডি। এক ধাক্কায় আওয়ামী লীগের পরের স্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গুলি করে হত্যা করা হয়। যে পদ্ধতিতে আওয়ামী নেতাদের হত্যা করা হয় তা শেখ মুজিব হত্যার সাথে পুরােপুরি মিলে যায়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন যা পরে নিশ্চিত হয় যে রাজনৈতিক দ্বিতীয় ধাক্কার অপরাধের সাথে যারা জড়িত তারাই প্রথমটি ঘটিয়েছে।

ক্ষমাহীন প্রতিশােধ আর হিংস্রতা এবং ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা নিয়ে সামরিক একনায়কতন্ত্র ফিরে আসে বাংলাদেশে। পুরাে চিত্রটি বােঝা যায় তখন যখন ঘৃণা, চরমপন্থা ও হানাহানি পরিপূর্ণ সেই পুরােনাে পাকিস্তানী ধর্মীয় মৌলবাদ ফিরে আসে। খুব দ্রুত ধর্ম নিরপেক্ষতা সংজ্ঞায়িত ১৯৭৩ সালের সংবিধানকে হত্যা করা হয় এবং বাংলাদেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘােষণা দেয়া হয়। ঠিক যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল যে ইসলামী দলগুলাে যেমন জামাত-ই-ইসলামী, আহল-এ-হাদিস, হরকাতুল জিহাদ-ইইসলামী এবং এরকম আরাে অনেক দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে, সেটা ঘটে। এ ছাড়াও ভারতবিরােধী সন্ত্রাসী সংগঠণ গুলাে যারা ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরী করে, বাংলাদেশে তারা নিরাপদ স্বর্গরাজ্য খুঁজে পায়। এদের প্রধান দলগুলি হলাে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম (ULFA), নাগাবিদ্রোহীরা, বােদো বিদ্রোহীরা এবং আরাে অনেকে।

হত্যাকান্ডের জন্য নৃশংস সামরিক দলটি যে দিনটি বেছে নেয় তা ভারতের ২৮ তম স্বাধীনতা দিবস। মুজিব এবং তার পরিচালিত ধর্ম নিরপেক্ষ সরকারকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানাে হয়, ইসলামাবাদ যাকে তার চির শত্রু ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তান বিভক্তির জন্য দায়ী করতাে। স্থানীয় লােকবল ব্যবহার করে পর্দার পেছন থেকে রাওয়ালপিন্ডি যে এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত তা খুব সহজেই চোখে পড়ে।

ঘাতকের বুলেট যে শেষ পর্যন্ত মুজিবুর রহমানকে খুঁজে নেবে এই ভয় থেকেই ইন্দিরা গান্ধী শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে শেখ মুজিবের লন্ডন দিল্লি ঢাকা ফ্লাইটটি এয়ার ইন্ডিয়ার বদলে RAF VIP মিলিটারি জেট-এ স্থানান্তর করেছিলেন। তার ভবিষ্যত্বনী সত্যি হয় যখন বুলেট টার্গেটে আঘাত করে তিন বছর আট মাস পর। কথাটি দুঃখজনকভাবে সত্যি প্রমানিত হয়।  

১৮৫

গান্ধীর কাছে বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর সাবধানবানী ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ‘অসমাপ্ত থেকে গেল ভারত পশ্চিম প্রতিবেশীকে টুকরাে না করে ছেড়ে দেয়ায়। এটা ঠিক হয়নি, এর ফলে ভারত ও বাঙলাদেশ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনিও দুঃখজনক ভাবে সত্যি প্রমানিত হয়েছেন।

যেদিন শেখ মুজিবকে গুলি করে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, রাওয়ালপিন্ডির ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স-এর হেডকোয়ার্টারে উল্লাস চলছিলাে। দেশের জাতীয় সম্মান বিনষ্ট করার জন্য শেখ মুজিব উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছেন। উপরন্ত সামরিক বাহিনী নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে পাকিস্তানী ৯৩০০০ যুদ্ধবন্দীকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়েছে। এর বদলে কাশ্মিরের ওপর থেকে দাবী ছেড়ে দিতে হয়নি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরিন বিষয়ে নাক গলানাের জন্য ভারতকেও শিক্ষা দেয়া গেছে। বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যে যদিও তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে তবুও তারা পাকিস্তানের প্রভাব থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেনি। বাঙলাদেশ তখন ভারতের পাশে একটা কাঁটার মতাে।

***

রেফারেন্স – ভারত, মুজিবুর রহমান, বাঙলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তান – শশাঙ্ক ব্যানার্জী