৬৯ এর লাহাের গােলটেবিল বৈঠক
১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিণ্ডিতে গােলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিম্নলিখিত নেতৃবৃন্দকে আহবান করা হয় :
1. শেখ মুজিবুর রহমান – আওয়ামী লীগ
2. সৈয়দ নজরুল ইসলাম – আওয়ামী লীগ
3. মমতাজ মােহাম্মদ দৌলতানা – পাকিস্তান মুসলিম লীগ
4. খাজা খয়েরউদ্দিন – পাকিস্তান মুসলিম লীগ
5. নূরুল আমিন – এনডিএফ
6. হামিদুল হক চৌধুরী – এনডিএফ
7. নবাবজাদা নসরুল্লাহ খান – পাকিস্তান আওয়ামী লীগ
8. আবদুস সালাম খান- পাকিস্তান ৮ দফা
9. চৌধুরী মােহাম্মদ আলী – নেজামে ইসলাম
10. মৌলভী ফরিদ আহমদ – নেজামে ইসলাম
11. মওলানা আবুল আলা মওদুদী – জামায়াতে ইসলাম
12. অধ্যাপক গােলাম আযম – জামায়াতে ইসলামী
13. ওয়ালী খান – ন্যাপ
14. অধ্যাপক মােজাফফর আহমেদ – ন্যাপ
15. মুফতি মাহমুদ – জমিয়াতুল উলেমায়ে ইসলাম
16. পীর মােহসেন উদ্দিন দুদু মিয়া – জমিয়াতুল উলেমায়ে ইসলাম
দ্রষ্টব্য: মওলানা ভাসানী ও জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্বেই
গােলটেবিল বৈঠকে যােগদানে অস্বীকৃতি জানান।
গােলটেবিল বৈঠকে যােগদানের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ৯ জনপ্রতিনিধি নিয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি লাহােরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সাথে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মােমেন, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আবদুল মালেক উকিল, এম এ আজিজ, ময়েজউদ্দিন ও মতিউর রহমান।
১৯৬৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ১০টা ৩০ মিনিটে রাওয়ালপিণ্ডিতে অবস্থিতপ্রেসিডেন্ট গেস্ট হাউজে গােলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডাক-এর ১৬ জন, প্রেসিডেন্টের পক্ষে ১৫ নির্দলীয় এবং নির্দলীয় ২ জনসহ মােট ৩৩ জন বৈঠকে যােগ দেন। প্রেসিডেন্টের উদ্বোধনী ভাষণের পর আলােচনা ১০ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান ৬ ও ১১ দফার ভিত্তিতে , ১১ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
গােল টেবিল বৈঠকে উত্থাপিত দাবির মধ্যে ছিল :
- ৬ দফার ভিত্তিতে সংবিধান রচনা;
- সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভােটে গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট নির্বাচন;
- কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন;
- পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন;
- আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ।
আলােচনা ১০ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত চলে। আইয়ুব খান তার ভাষণে
দু’টি দাবি মেনে নেন- ১. প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন, ২. দেশে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা চালুকরণ। যে দুটো বিষয় মতৈক্যে পৌছেছে তা তিনি সংসদের অনুমােদনের জন্য প্রেরণ করবেন। ডাক আইয়ুব খানের ভাষণের প্রশংসা করে। আওয়ামী লীগ ও ওয়ালি ন্যাপ আইয়ুব খানের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। ডাক স্বায়ত্তশাসন সমর্থন না করায় শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন। ১৩ মার্চ আইয়ুব খান শেখ মুজিবকে নৈশভােজে আহবান করেন। তিনি আইয়ুব খানকে পূর্ব পাকিস্তানের নতুন গভর্নর নিয়ােগের পরামর্শ দেন। আইয়ুব খান শেখ মুজিবুর রহমানের সুপারিশে পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মির্জা নূরুল হুদা এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ইউসুফ আব্দুল্লাহকে গভর্নর নিয়ােগ করেন। অত্যাচারী গভর্নর মােনায়েম খান বিদায় নিলেন। ড. এমএন হুদা ২২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
Ref: প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, pp 237-238