You dont have javascript enabled! Please enable it!

চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ-কমান্ডো অপারেশন

মোহাম্মদ ফজলুর হক

১৯৭১ সন, আমি তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ২য় বর্ষ (সম্মান) শেষ সাবসিডিয়ারি পরীক্ষার্থী । ২৬ শে মার্চের সেই কালো রাত্রির ঘটনা ও পরবর্তী কিছু ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ মাতৃকার স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে আমরা প্রায় ২০জন সংগঠিত হয়ে এপ্রিলের মাঝামাঝি, আমাদের গ্রামের অনতিদুরে পদ্মানদী মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাই । সেখানে কয়েক দিন অবস্থানের পর ১৩ই মে সকালে ক্যাম্প কমান্ডার আমাদের ২০ জনকে সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করে ট্রাক যোগে পাঠায়ে দেন ।বহরমপুর সেনানিবাসে পৌছে জানতে পারলাম আমরা নৌ-কমান্ডো প্রশিক্ষণের জন্য যাচ্ছিল । ঐ দিনই দুপুরের মধ্যে পলাশীর সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ ময়দানের পার্শ্বে ডাকবাংলোতে গিয়ে উপস্থিত হই এবং নৌ-কমান্ডো প্রশিক্ষণের C2P ক্যাম্পে যোগদান করি। C2P ক্যাম্পে দেয়া আমার নৌকমান্ডো নং ০০৩৩ । ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা ১৯৭১ সনে তদানিন্তন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত ৮জন বাঙালি সাবমেরিনার ফ্রান্সে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তান পক্ষ ত্যাগ করে গোপন ফ্রান্স হতে পালিয়ে ভারতে আসেন । তারা ভারতে নৌবাহিনী সদর দপ্তর রিপোর্ট করেন । পরবর্তীতে তাদের উদ্যোগে যুদ্ধ কালীন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান ও ভারতীয় নৌবাহিনীর যৌথ পরিকল্পনা ভারতীয় নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পলাশীতে আমাদের নৌকমান্ডো (সুইসাইড স্কোয়াড) সাংকেতিক নাম C2P ক্যাম্প স্থাপিত হয় । ঐ ৮জন বাঙালিই আমাদের ক্যাম্পের মূল প্রশিক্ষক ছিলেন- যাদেরকে আমরা দাদু বলে ডাকতাম । শ্রদ্ধেয় সেই দাদুগণ হলেন সর্ব জনাব মোঃ রহমত উল্লাহ শেখ, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী (এ ডাব্লিউ, চৌধুরী), মোঃ বদিউল আলম, মোঃ আহসান উল্লাহ, মোঃ আবিদুর রহমান ও মরহুম আঃ রকীব মিঞা (যুদ্ধে শহীদ হন) । প্রশিক্ষণ যোগদানের দিন দুপুরে খাওয়া-দাওয়া শেষে আমাদেরকে ভাগীরথী নদীর ধারে পলাশীর যুদ্ধ ময়দানের ফাঁকা মাঠে নেয়া হয় । অতঃপর তাঁবু খাটায়ে রাত যাপন করা হয় । ২/১ দিনের মধ্যেই পার্শ্বের বাবলা বনের জংলা পরিষ্কার করে তাঁবু স্থানান্তর করা হয় । শুরু হয় পূর্ণ প্রশিক্ষণ । প্রতিদিন ভোর ৫-৩০ মিঃ এ সকলকে ঘুম থেকে হুইসেল মারফত জাগানো হত । তারঃপর ৩০ মিনিটের মধ্যে টয়লেট সম্পন্ন ও মুখ হাত ধুয়ে প্যারেড পিটির জন্য তৈরি হয়ে ঠিক ৬টায় লাইনে দাঁড়াতে হত । ৭টা পর্যন্ত পুরো ১ ঘন্টা প্যারেড পিটি (শারীরিক ব্যয়াম) হত । সকাল ৭টা থেকে ৭-৪৫ মিঃ পর্যন্ত নাস্তা ও তাবু গোছগাছ ইত্যাদির জন্য বিরতি । ৭-৪৫ মিঃ এ জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ –পরিবেশিত হত । সকাল ৮টা হতে প্রশিক্ষণ শুরু হত । ক্যাম্পে সমস্ত ক্যাডেটকে দুই দলে বিভক্ত করে এক দলকে সাঁতারের জন্য পানিতে অন্য দলকে আন-আর্মড কমব্যাট বা কিনা অস্ত্রে যুদ্ধ শিক্ষার জন্য মাঠে পাঠানো হত । এ সময়ে প্রশিক্ষণের জন্য পোষাক একমাত্র সুইমিং কস্টিউম (জাঙ্গিয়া) ব্যবহার করা হত । পানির দলকে সাঁতারের জন্য ফিনস (হাঁসের পায়ের মতো রাবারের জুতা) পায়ে দিয়ে সমস্ত শরীর পানির নিচে রেখে শুধুমাত্র নাক এ মুখমণ্ডল ভাসায়ে চিৎ হয়ে শুধু পা দিয়ে ঠেলে এক অভিনব কায়দায় সাঁতার কেটে পিছনে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হত । পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ ডুব দিয়ে থাকার অভ্যাস করানোও এই প্রশিক্ষণের একটি অংশ । মাঠের প্রশিক্ষণঃ নানা রকম প্যারেড পিটিসহ আন-আর্মড কমবাট শিক্ষা দেয়া হত । একটানা ১০-৩০ মিঃ পর্যন্ত অর্থাৎ ২ঘন্টা ৩০ মিনিট এই প্রশিক্ষণ চলত । অতঃপর ৩০ মিনিট বিরতি । এ সময় সমস্ত ক্যাডেটকে লেমন জুস ও হালকা নাস্তা পরিবেশন করা হত । ১১টা হতে আবারওপ্রশিক্ষণ শুরু হত । প্রশিক্ষণ চলত একটানা ২ঘন্টা অর্থাৎ দুপুর ১টা পর্যন্ত । ১টা হতে ৪টা পর্যন্ত বিরতি । এ সময়ে দুপুরের খাবার, বিশ্রাম, বৈকালীন চা-নাস্তা ইত্যাদি দেওয়া হত । বিকাল ৪টায় শুরু হত বৈকালীন প্রোগ্রাম । ক্যাম্পের সমস্ত ক্যাডেটকে আবারও ২ভাগে ভাগ করে দল প্র্যাকটিক্যাল ডেমোনেস্ট্রষ্ট্রেশান (অর্থাৎ যুদ্ধ বিষয়ক অস্ত্রের বাস্তব ব্যবহার) যেমন জাহাজে লিমপেট মাইন লাগানো, গ্রেনেড নিক্ষেপ, এসএমসি চালানো, রেকি চলা, এ্যামবুশ করা ইত্যাদি ওপর ক্লাস বেয়া হত ও হাতে কলমে শিক্ষা দেয়া হত । অন্য দলের ক্যাডেটরা মাঠে ফুটবল, ভলিবল, পানিতে ওয়াটার পোলো ইত্যাদি বিভিন্ন রকম খেলাধুলা করত । মাঝামাঝি সময়ে দলকে বদলায়ে দেয়া হত । এইভাবে চলত সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত । সন্ধ্যা ৭টায় রাতের খাবার পরিবেশন করা হত । রাতের খাবার শেষ রাত ১০টা পর্যন্ত খবরের কাগজ পাঠ, কেরাম বোর্ড খেলা, লুডু খেলা, গান বাজনা করা, ড্রামা থিয়েটার করা ইত্যাদি চলত । রাত ১০টা বাজলে আলো নিভয়ে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে শুয়ে পড়তে হত এবং ঘুমাতে হত ।

তাছাড়াও প্রত্যেক ক্যাডেটের জন্য স্পতাহে ২দিন রাত ১২টা হতে ২তা পর্যন্ত (২ঘন্টা) নদীতে নাইট সুইমিং প্র্যাকটিস, ২ দিন রাতে পাহারা ও ২দিন কুক ডিউটি (বাবুচির সাহায্যের জন্য) পড়ত । এই ছিল মোটামুটি দৈনন্দিন প্রশিক্ষণের বর্ণনা । অপারেশন প্রায় তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মঙ্গলা সমুদ্র বন্দরসহ প্রধান প্রধান নদী বন্দরে একই সময়ে তারিখে আক্রমণ করে বন্দরে রক্ষিত জাহাজে মাইন লাগায়ে জাহাজ ধ্বংস বা ডুবায়ে বন্দর ব্লক করার লক্ষ্যে ক্যাম্পে ১৬০ জন চৌকস নৌকমান্ডো প্রথম অপারেশনের জন্য মনোনীত করা হয় । তন্মধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের জন্য ৬০জন মনোনীত করা হয় । চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর অপারেশনে আমিও এক জন অংশগ্রহণকারী । যুদ্ধে-ব্যবহারের জন্য ক্যাম্প হতে জনপ্রতি ১টি লিমপেট মাইন, সাঁতারের জন্য ১ জোড়া রাবারের তৈরি ফিনস, আত্মরক্ষার জন্য ১টি হ্যান্ডগ্রেনেড, উভয় দিকে ধারাল চামড়ার খোলসে ভরা ১টি ডেগার, এবং প্রতি একটি করে ৯মি.মি. এসএমসি (সাব-মেশিন কাররাইন) সঙ্গে প্রয়োজনীয় ম্যাগজিন ও গুলির বাক্স সরবরাহ করা হয় । নিজস্ব কারপড় চোপড়সহ সব মিলিয়ে জনপ্রতি কমপক্ষে প্রায় ২৫ কেজির মত ওজন দাঁড়ায় যা লুঙ্গিতে বেঁধে নেয়া হয় । ২রা আগস্ট আমরা চট্টগ্রামের ৬০ জন আমাদের শ্রদ্ধেয় দাদু এ ডাব্লিউ চৌধুরীর নের্তৃত্বে অপারেশন জ্যাকপটের উদ্দেশ্যে রাতের ২টি ট্রাকযোগে ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাই এবং কলকাতার ব্যারাওপুর সেনানিবাসে পৌছাই । দমদম বিমানবন্দর হতে ডাকোটা বিমানযোগে আমাদেরকে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমান বন্দরে নেয়া হয় । আগরতলা বিমানবন্দর হতে কয়েক কি.মি. দূরে এক টিলার উপরে আমাদের জন্য ট্রাকযোগে প্রথমে হরণা ক্যাম্পে পরবর্তীতে বাংলাদেশের কুমিল্লার সীমান্তে পোংবাড়ি ক্যাম্পে নেয়া হয় । এই ক্যাম্প থেকেই দেশের ভিতরে ঢোকার পালা। আমাদের ৬০ জনকে তিন দলে বিভক্ত করের একেক জন গাইডের অধীনে দাঁড় করালেন । এই পোংবাড়ি ক্যাম্প হতে ১কি.মি. এর কম দূরত্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড । রাত আনুমানিক ৯টার দিকে দিকে আমরা প্রথম ২০জন আমাদের গাইডের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডের নিকটে জংগলের পাশেই দাঁড়াই এবং লক্ষ করি যে মাঝে মধ্যেই পাক সেনার গাড়ি রাস্তায় দুধারে বাংকারে ঘন ঘন হারিকেন জ্বলছে । এহেন পরিস্থিতিতে রোড পার হওয়াটাই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ-তবুও যেতে হবে । সমস্ত মাল সামানা লুঙ্গি ও গামছা দিয়ে পিঠে বেঁধে নেয়া হল । অতঃপর যেই পাক সেনার গাড়ি টহক দিয়ে এক দিকে চলে গেল সনে সঙ্গে আল্লাহকে স্ম্রণে করে আমরা ৪/৫ জন ক্রলিং করে রাস্তা পার হয়ে অতি সাবধানে ও দ্রুতগতিতে একটু ভিতরে আমাদের জন্য অপেক্ষামান আরেকজন গাইডের নিকট পৌছাই । প্রায় ৩০/৪০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের দলের ২০ জন একত্রে হতেই আমাদের গাইড আমাদেরকে নিয়ে রওয়ানা হলেন । বলাবাহুল্য তিন দলকে তিন পথে নিয়ে এক জায়গায় নেয়া হবে । সম্পূর্ণ অজানা অচেনা পথ আল্লাহকে স্ম্রণ করে গাইডের পিছনে হাঁটা দিলাম । গাইডের পিছনে সারারাত হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে, বীভিৎস অন্ধকারে কখনও অনেক খাল বিল, ছোট খাটো নদী নালা, পাহাড়-টিলা এবং জংগল ইত্যাদি পার হয়ে আনুমানিক ২০ কি.মি. রাস্তা অতিক্রম করে, রাত শেষ হওয়ার পূর্বেই নির্ধারিত শেলটারে পৌছলাম । দিনভর সেই আশ্রয়ে বিশ্রাম নিয়ে পরের রাতে আবারও একইভাবে রাতভর হেঁটে পরবর্তী আশ্রয়েস্থলে পৌছাই । এইভাবে ৫/৬ রাত-রাতভর হেঁটে আমরা সমুদ্র উপকুলবর্তী এলাকা ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার “সমিতি বাজার” নামক স্থানে পৌছাই । পূর্ব সিদ্ধান্ত মতে সেখানের আশ্রয়স্থলে স্থানীয় গাইডের তত্বাবধানে অস্ত্রশস্ত্র সব জমা রেখে আমরা ২/৩ জন করে খালি হাতে ঢাকা-চট্রগ্রাম রোডে এসে বাসযোগে চট্রগ্রামের আগ্রাবাদে ১৩ই আগস্ট ‘সবুজবাগ’ বাড়িতে আমরা দুই দল অর্থাৎ ৪০ জন পৌছাই । ইতিমধ্যে ১৩ই আগস্টেই স্বাধীন বাংলা বেতার হতে সকাল ৭টার খবরের পর ‘আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলাম গান’- পংকজ কুমার মল্লিকের এই গানের মাধ্যমে অপারেশনের প্রস্তুতির জন্য সংকেত পাঠানো হয় । যার অর্থ শুধু আমাদের দলপতি এ ডাব্লিউ চৌধুরী সাহেবেই জানতেন । এই সংকেত প্রাপ্তির ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে যেদিন পরবর্তী সংকেত আসবে সেই দিনই রাত ১টায় অপারেশন করতে হবে । ১৪ই আগস্ট চট্রগ্রাম শহর ত্যাগ করে ৪/৫ জন করে স্থানীয় গাইডের সঙ্গে নৌকাযোগে কর্নফুলী নদী পার হয়ে আমরা পর্যায়ক্রমে জেটির অপর পাড়ে ‘লক্ষ্যাচরে’ এক খামারবাড়িতে কৃষি কাজের শ্রমিক পরিচয়ে আশ্রয় নিই । ১৫ই আগস্ট স্বাধীনবাংলা বেতার হতে সিকাল ৭টার খবরের পরে একিই সময়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ি’-গানের মাধ্যমে অপারেশন সংকেত আসে । সন্ধার মাধ্যেই কয়েকটি শাকসবজির বস্তায় আমাদের অস্ত্রশস্ত্র খামারবাড়িতে পৌছে যায় । উল্লেখ্য যে চট্রগ্রাম শহরের কয়েকজন ডাক্তার’ ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ী এ্যামবুলেন্স ও ইলেকট্রিক সাপ্লাই এর গাড়িযোগে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে “সমিতি বাজার” হতে আমাদের অস্ত্রশস্ত্র চট্রগ্রাম শহরের গোপন আশ্রয়কেন্দ্রে আনেন এবং পরবর্তীতে শাকসবজির বস্তায় ভরে নৌকা যোগে খামারবাড়িতে সময়মতো পৌছে দেয় । রাত ১০টার পর শ্রদ্ধেয় দাদু এ ডাব্লিউ চৌধুরী সাহেবের কথামতো শাকসবজির বস্তা খুলে অস্ত্রশস্ত্র বের করা হয় । অতঃপর দাদু সকলকে অপারেশনের বিষয়টি জানালেন এবং অপারেশনে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র প্রতিজনকে একটি করে লিমপেট মাইন, সাঁতারের জন্য এক জোড়া ফিনজ, আত্মরক্ষা/সুইসাইড করার জন্য একটি করে হ্যান্ড গ্রনেড এবং দুই ধারে ধারালো চামড়ার খোলসে ভরা একটি ডেগার ভাগ করে দেয় । এবার অপারেশনের পালা । বভিন্ন পরিস্থিতিতে ও প্রতিকুল অবস্থায় পোংবাড়ি ক্যাম্প হতে ফেনী জেলার “সমিতি বাজার” পর্যন্ত দীর্ঘপথ ৫/৬ রাত হেঁটে আমাদের মধ্যে ৭ জন অসুস্থ হয়ে পড়ে । আমরা ৩৩ জন অপারেশনে অংগ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করি । উল্লেখ্য যে দলপতির নির্দেশে আমরা ৪/৫ জন করে পর্যায়ক্রমে দিনের বেলায় খামারবাড়ির পাশে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে প্রায় ২ কি. মি. এ দিক ও দিক ঘোরাফেরা করে রেকি করে দেখি এবং নদীতে নামা ওঠাসহ খামারবাড়িতে আসা যাওয়ার রাস্তা ঠিকঠাক করে নিই ।

১৫ই আগস্ট, পরিস্কার চাঁদনী রাত, ১২.৩০ মি. বাজলে আমরা ৩৩ জন নদীর পাড়ে যাই । প্রতি জাহাজে দুই সাইডে ও মাঝে ৩টি মাইন লাগোনোর জন্য ৩জন করে গ্রুপ করা এবং কে কোন জাহাজে মাইন লাগাবে তা আমাদের দলপতি ঠিক করে দেন । আমাদের গ্রুপের জন্য একটি আলোকিত জাহাজ নির্ধারিত হয় । জাহাজের ইঞ্জিন রুম কোনোটার সাইডে আবার কোনোটার মাঝে! কাজেই ইঞ্জিন রুমকে সরাসরি হিট করার জন্যই প্রতি জাহাজে ৩টি করে মাইন লাগানোর সিদ্ধান্ত ছিল । নদীর অপর সাইডে জেটির জাহাজকে টার্গেট মতো নদীর পাড়ে নিজ নিজ গ্রুপের ৩ জন করে আলাদা আলাদা অবস্থান গ্রহণ করি । আমাদের গ্রুপে আমি অপারেশন গ্রুপ কমান্ডার নিযুক্ত হই । আমার গ্রুপে অন্য যে ২ জন ছিলেন তারা হলেন চট্রগ্রামের মোঃ আবুল বাশার (মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পূর্বে ইন্টারমিয়েটের ছাত্র)ও মোঃ মাজাহার উল্লহ (মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পূর্বে পাক সার্ভিসে ছিলেন, পরবর্তীতে বীর উত্তম) । আমি তাদের ২ জনকে জাহাজের দুই সাইডে মাইন লাগানোর জন্য জানাই এবং আমি নিজে জাহাজের মাঝে মাইন লাগানোর জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করি ।

রাত ১টা বাজলে নিজ নিজ টার্গেটে আঘাত হানার লক্ষে আমরা ফিনস পায়ে দিয়ে গ্রেনেড ও ডেগার কোমরে বেঁধে এবং বাম হাতে লিমপেট মাইন বুকের উপর ধরে আল্লাহকে স্মরন করে আমাদের কমান্ডো কায়দায় সাঁতার শুরু করি । সমস্ত শরীর পানির নিচে ডুবায়ে শুধু চোখ, মুখ, নাক পানির উপর ভাসায়ে চিৎ হয়ে বিশেষ এক অভনব কায়দায় সাঁতার কেটে পিছনে যেতে থাকি । কর্নফুলি নদী জোয়ার ভাটার নদী । সে সময় নদীতে ভাটা ছিল-অত্যন্ত খরস্রোতা সে অবস্থা । নদীতে এহেন খরস্রোতা পরিস্থিতিতে বেশ কিছুক্ষণ একত্রে সাঁতার কাটার পর নদীর প্রায় মাঝ পথে আমার সাথী আবুল বাশারকে রেখে আমি একাকী সাঁতার কেটে আমাদের আলোকিত টার্গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকি । বেশ কিছু দূর থেকেই জাহাজের নাম “হরমুজ” পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছিল । এটি একটি পাকিস্তানি জাহাজ ছিল । মাঝে মধ্যে উলটে কাঙ্খিত টার্গেট ‘হরমুজ’ জাহাজের দিকে ঠিকমতো যাচ্ছি কিনা-তা দেখে নিই । এমনিভাবে দীর্ঘ সময় একাকী সাঁতার কাঁটার পর কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ‘হরমুজ’ জাহাজের নিকট পৌছলাম । জাহাজের কাছে পৌছে ইঞ্জিনের তথা জাহাজের শন শন শব্দে ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো । উপরন্তু নদীর সাইডে জাহাজে আলো দেয়া আছে আবার জাহাজে লোড/আন লোডের কাজও চলছে । লোকজনের সমাগমের শব্দ বুঝা যাচ্ছে । তবে জাহাজের নিচের অংশ স্ল্যান্টিং হয়ে নৌকার মরু হওয়ায় জাহাজের পাশে পানির উপর প্রায় ৩-৪ ফুট জায়গা বরাবর ছায়া ছিল । আমার পালা জাহাজের মাঝখানে লিমপেট মাইন লাগানো । লিমপেট মাইন লাগানোর সেই গুরু দায়িত্ব মাথায় রেখে সমস্ত ভয় ভীতি উপেক্ষা করে জাহাজের প্সহের সেই ছায়ার অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে জাহাজ ঘেঁষে আস্তে আস্তে জাহাজের মধ্যখানে উপস্থিত হই । লিমপেট মাইন পানির প্রায় ৩-৪ ফুট নিচে লাগানোর নিয়ম । কারণ লিমপেট মাইন বিস্ফোরণের ফলে জাহাজে একটি বড় ধরনের গর্ত হবে এবং গর্ত দিয়ে পানি ঢুকতে থাকবে । আর বিস্ফোরণের বিরাট ধাক্কায় জাহাজটি যে কোনো দিকে কাত হলেও যেন বিস্ফোরণে তৈরি গর্তটি পানির নিচেই থাকে এবং পানি ঢুকতেই থাকে । আর মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মাইন বিস্ফোরনে জাহাজটি সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হয়ে পানি ঢুকে ডুবে গিয়ে বন্দর ব্লক হয়ে যাওয়া । লিমপেট শব্দের অর্থ স্বয়ক্রিয় যা তাপে, চাপে, যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরিত হতে পারে । মূল বারুদ একটি পাটশোলা জাতীয় পদার্থের মধ্যে রাখা ছিল । এই মাইনের আকৃতি দেখতে হুবহু কচ্ছপের মত ছিল । মাইনের তলায় উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন পাঁচ তুকরো হর্স-সু ম্যাগনেট (ঘোড়ার পায়ের আকৃতির চুম্বক) সেট করা ছিল । আর চুম্বক থাকায় মাইনটি জাহাজে লাগানও খুবই সহজ ছিল । প্রায় ২-৩ ফুট দূর হতেই আকর্ষণে জাহাজে লেগে যেত । মাইনটি একটি টাইম বোমা যাতে ডিলে টাইম হিসেবে একটি সল্ট ব্লক ব্যবহার করা হত-যা রাবারক্যাপ খুলে দেয়া যাতে ডিলে টাইম হিসাবে একটি সল্ট ব্লক ব্যবহার করা হত-যা রাবারক্যাপ খুলে দেয়া সাপেক্ষে গলতে ১ঘন্টা সময় লাগবে অর্থাৎ ১ঘন্টা পরেই বিস্ফোরণ ঘটবে । আর এই সময়ের নিরাপত্তার জন্য ডবল সেফটি ডিভাইস ব্যবহার করা হত । (১) একটি সেফটি পিন বসানো থাকত (২) সেফটি ডিভাইসকে একটি রাবার ক্যাপ দ্বারা ঢাকা থাকত । মাইনটি লাগানোর পর প্রথমে রাবার ক্যাপ পরে সেফটি পিন খুলে দিলে তবেই মাইনটি এ্যাকশনে যাবে বা Detonated হবে ।

জাহাজে মাইন লাগানোঃ আল্লাহকে স্মরণ করে নিয়ম মাফিক লাগানোর জন্য লম্বা শ্বাস নিয়ে পানিতে ডুব দিয়ে প্রায় ৪ফুট নিচে যাই এবং জাহাজের গায়ে মাইনটি লাগাই (মাইনের তলায় চম্বুক থাকায় সহজের লাগানো হয়েছে) । এবার সেফটি ডিভাইস খোলার পালা- প্রথমে রাবার ক্যাপ পরে সেফটি পিন । কর্নফুলী নদীতে ভাটা ছিল এবং তীব্র স্রোতের ফলে রাবার ক্যাপটি এয়ারটাইট হয়ে যায় । বহু চেষ্টা করেও রাবার কাপ্টি খুলতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে দাঁত দিয়ে সেফটি পিনও টেনে বের করে ফেলি । আর একাজে অনেক সময় লেগে যায় । ফলে আমার দল প্যার হওয়ায় উপক্রম হয় । অথচ প্রশিক্ষণে পানির নিচে আমি ডুব দিয়ে প্রায় ২৫ মিনিট থাকতে পারতাম । যাহোক তারাতাড়ি শ্বাস নেয়ার জন্য আমি উপরে আসার লক্ষে জাহাজ থেকে হাত ছেড়ে দিই । জাহাজ থেকে হাত সরানো মাত্রই স্রোতের টানে আলোর মধ্যে ভেসে উঠি । আর পানির উপরে ভেসে উঠতেই জাহাজে পাহারারত পাকসেনারা আমাকে দেখে ফেলে । এই অবস্থায় হঠাৎ করে আল্লাহর রহমতে উপস্থিত বুদ্ধি আমি সজোরে পানির উপরে আরও বেশি ভেসে উঠি এবং ল্মবা নিশ্বাস নিয়ে নদীতে শুশুক ঘাড়াল এর কায়দায় ডিগবাজি দিয়ে আবার পানিতে ডুব দিয়ে আত্মগোপন করি । প্রথমে আমি স্রোতের সঙ্গে সজোরে সাঁতার কেটে অনেক দূরে চলে যাই । তারপর পানির উপরে নাক, মূখ, চোখ ভাসায়ে কমান্ডোর কায়দায় সাঁতার কাটতে থাকি । এমতাবস্থায় লক্ষ করলাম আমার মাইন লাগানো ‘হরমুজ’ জাহাজে পাহারারত পাকসেনারা সার্চ লাইট দিয়ে জাহাজের আশেপাশে খোজাখুজি করছে- ভাবলাম এতে অন্যদের অবশ্যই অসুবিধা হবে । যাহোক একাকী সাঁতার কেটে চলেছি, সঙ্গে কেউ নেই, অন্যদের কোনো খবরও জানি না, কোথায় যাচ্ছি তাও জানি না, তখন নদীতে হাঙ্গর কুমিরের কোনো ভয় নাই, শুধু নিরাপদে আশ্রয়ে লক্ষে সাঁতারায়ে চলেছি । ডানে তাকালে শুধু পানি আর পানি সমুদ্র মোহনা-তথা সমুদ্র । সামনে তাকালে অদুরে নদীর অপরপাড়ে একটি জংগল মনে হয় । অতঃপর সে দিকেই সাঁতার কেটে চললাম । নদীর অপর পাড়ের প্রায় কাছাকাছি এসেছি পাড়ের দিকে তাকাতেই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ল-মনে হল একজন পাকসেনা রাইফেল হাতে শোয়া অবস্থায় নদীর দিকে তাক করে আছে । প্রথমে ভয় পেলাম । ভাসমান অবস্থায় প্রায় ১০/১২ মি. অপেক্ষা করে পর্যবেক্ষণ করলাম- কোনোরকম নড়া চড়া নাই । জীবিত মানুষ/জীবজন্তু যাইহোক না কেন অবশ্যই একটু নড়া চড়া করবে । অত্যন্ত সাহসে ভর করে সামনে নদীর পাড়ের দিকে আগালাম এবং কিছু দূর এক মজার কাণ্ড দেখলাম একটয়ি গাছের মোটা শিকড় নদীর পাড়ে পড়ে আছে যা দেখতে ঐ রকম ভয়াবহ দেখাচ্ছিল । যাহোক পানি ছেড়ে উঠে সোজা জংগলে ঢুকতে লাগলাম নির্দেশনা সত্ত্বেও নদী থেকে উঠার সময় কোনোরকম কোনো অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দেই নাই । কারণ অচেনা অদেখা একটু নতুন জাগয়া তারপর একাকী জংগলে ঢুকে যাচ্ছি । সে সময় জংগলে বাঘ, ভাল্লুক, সাপ-বিচ্চু কোনো কিছুরই ভয় লাগে নাই কারণ জাহাজে মাইন লাগানোর আনন্দই আমাকে এহেন ভয় ভীতির উর্দ্ধে নিয়েছে । জংগলে কিছু দূর ঢুকে যেতেই বেতের ঝাঁড়, বেতের কাঁটায় সমস্ত শরীর কেটে যাচ্ছে তাতে কোনোরকম দ্রুক্ষেপ নাই । জংগলের ভিতরে যেতে যেতে যখন বেশি পানি হল তখন ফিনস পায়ে আবারও সাঁতার দিয়ে যেতে লাগালাম । অদূরে জোড়া খেজুর গাছ নজরে পড়ল । অনুমান-করলাম পাশেই লোকালয় হতে পারে । তারপর সাঁতরিয়ে ঐ জোড়া খেজুর গাছের নিকট পৌছে তীর পেলাম । সমস্ত অস্ত্রস্ত্র পানিতে ফেলে উপরে উঠলাম । অতঃপর আল্লাহকে স্মরণ করে আকশের তারকা লক্ষ করে খামারবাড়ি পৌছানোর লক্ষে মহল্লার দিকে একাকী চললাম । মহল্লা পার হয়ে মাঠ পেলাম । মাঠ ধানক্ষেত ভরা । আমি একাকী ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে চলেছি । এক পর্যায়ে একটি খাল পেলাম । প্রথম দিন সাতার কেটে খাল পার হলাম । খালের উপর উঠে অপর পাড়ে জেটির দিকে তাকাতেই রাইফেল গর্জে উঠলো । সাঁ সাঁ শব্দে রাইফেলের গুলি এসে আমার আসে পাশেই পড়তে লাগলো-বুঝলাম আমাকে লক্ষ করে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে । সঙ্গে সঙ্গে আমি জড়োসড়ো হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লাম । পর পর আরও ১০-১২ রাউন্ড গুলি এসে আমার আশে পাশে কয়েক গজের মধ্যেই পড়ল । গুলি ছোড়া বন্ধ হতেই আমি ক্রলিং করে পাশের ধানক্ষেতে ঢুকে পড়লাম । ইতোমধ্যেই জেটিতে প্রথম মাইন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পেলাম । তখন জেটি হতে হৈ চৈ এর শব্দ ভেসে আসতে থাকল । সাফল্যের আনন্দে অতি সাবধানে ধানক্ষেতের ভিতর দিয়ে দ্রুত খামারবাড়িতে এসে পৌছলাম । সামান্য পরে আবারো মাইন বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেল । খামারবাড়িতে পৌছেই জানলাম ইতোমধ্যে অপারেশন শেষে ফিরে কয়েক ব্যাচ (৪-৫জন) গাইডের মাধ্যমে ২০-২৫ জন নিরাপদে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে খামারবাড়ি ত্যাগ করে চলে গেছে । আমি পৌছার পর ৪/৫ জন একত্রে হতেই পুনরায় আরেকজন গাইডের মাধ্যমে আমাদেরকে খামারবাড়ি হতে পাঠিয়ে দেয়া হল । এদিকে একের পর এক মাইন বিস্ফোরণের বিকট বিকট শব্দ ভেসে আসতে লাগল । রাত তখন আনুমানিক ৪টা হবে গাইড জানালেন রাত থাকতেই নিদ্দিষ্ট শেলটারে প্রায় ১২/১৪ কি. মি. যেতে হবে । তাই আমরা কখনও ডবল মার্চ করে কখনও বা দৌড়ায়ে যেতে লাগলাম । দৌড়ে পালাচ্ছি কিছু দূর যেতেই নদীতে অঁ-অঁ শব্দে সাইরেন বাজতে শুরু করলো সে কী করুণ ও ভয়াবহ সাইরেনের সেই শব্দ আজও ভুলি নাই এবং কোনো দিন ভুলবো না । ইতোমধ্যে পাকসেনারা নদীতে গানবোট নামায়ে সার্চ লাইট দিয়ে তল্লাশি শুরু করে । যে সার্চ লাইটের আলো নদীর পাড়ের কয়েক কিলোমিটার ভিতরে আমাদের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে । যতদূর মনে পড়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ২৩টি মাইন বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি এবং স্বাধীনতার পর জেনেছি প্রায় ১০/১২টি জাহাজ/বার্জ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পানিতে ডুবে বন্দর ব্লক হয়ে গিয়েছিল । প্রায় তিন ঘণ্টা চলার পর রাত শেষ হওয়ার পূর্বেই আমরা নিদ্দিষ্টি আশ্রয়েস্থলে এসে পৌছালাম । ১৬ই আগস্ট এ আশ্রয় স্থলে আমরা দুপুর পুর্যন্ত অবস্থান করি। ৪/৫ জন করে পর্যায়ক্রমে নৌকা যোগে কর্নফুলী নদী পার হয়ে চট্রগ্রাম শহরের এসে বাসযোগে আগ্রাবাদের পূর্বের সেই আশ্রয়স্থলে ফিএর যাই। আমাদের এই অপারেশানে এস এম মাওলাসহ ২ জন পাক সেনার হাতে ধরা পড়ে এবং তাদেরকে অমানবিক অত্যাচার করা হয় এবং স্বাধীনতা পর্যন্ত আটকায়ে রাখে। স্বাধীনতার পর তারা ছাড়া পায়। চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে সফল অপারেশনের শেষে আমরা গর্বের সাথে গোপনীয়তা রক্ষা করে যেভাবে চট্রগ্রাম এসেছিলাম ঠিক সেভাবেই চট্রগ্রাম ছেড়ে চলে যাই এবং ভারতের পলাশীতে আমাদের সি২পি ক্যাম্প ফিরে যাই। আমার বিশ্বাস চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরে জাহাজ ধ্বংসের এবং নিমজ্জিত করার অপারেশান স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ও তাৎপর্যপূর্ন। কারন এই অপারেশানের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে স্বীকার করে নাই এবং যুদ্ধকে আভ্যন্তরীণ গোলযোগ বা বিশৃংখলা বলে বহির্বিশ্বে ঘোষনা দিয়ে আসছিল।কিন্তু আমাদের এই অপারেশান সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং পাকিস্তান সরকার ও এই নৌ-কমান্ডো আক্রমনে বিষয় স্বীকার করে। পাকিস্তান সরকারের এই স্বীকারোক্তি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়-ত্বরান্বিত হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। সেই সাথে আমাদের এই অপারেশন জ্যাকপট নন্দিত হয়- বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করে। বিশ্বব্যাপী তথা যুদ্ধ বিশারদণই যুদ্ধের মূল্যায়ন করেছেন।

মোহাম্মদ ফজলুল হক জন্ম ৩০ শে ১৯৫২,রাজশাহী। শিক্ষা ১৯৬৭ সালে রাজশাহীর মাটিকাটাদিঘী বহুমূখী কারিগরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি।অতপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যালয় অনার্স ও মাস্টার্স।১৯৭৮-৭৯ সালে ঢাকায় Institute of Scientific Instrumentation(ISI) থেকে ইলেকট্রনিক্স-এ বিশেষ প্রশিক্ষন লাভ। মোহাম্মদ ফজলুল হক বর্তমানে প্রিন্সিপাল ইন্সট্রমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞান ও কারিগরি কারখানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।

Ref: স্বাধীনতা মেজর কামরুল হাসান ভুঁইয়া

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!